ম্যাচ তখনো শেষ হয়নি। আবাহনীর ইনিংস শেষ হয়েছে মাত্র। অথচ পুরো মাঠ, দু’দলের খেলোয়াড়রা এমনকি গ্যালারির দর্শক-প্রায় সব কর্নারে একটা মুচকি হাসি। যে হাসির পরিস্কার অর্থ একটাই-‘এই ম্যাচের ফল তো জানাই আছে!’
আবাহনী ও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট একাডেমির সুপার লিগের শেষ ম্যাচ নিয়ে এমনসব হালকা চালের হাসি এবং ম্যাচ পরিস্থিতি জানিয়ে দিচ্ছিল এটা প্রতিযোগিতামুলক ম্যাচ নয়-বরং ‘বন্ধুত্বপূর্ণ ম্যাচ’!
এই ম্যাচ জিতলেও আবাহনীর কোন ফায়দা হত না। লিগ রেস থেকে আগেই তারা ছিটকে পড়েছিল। আর লিগ শিরোপা জিততে হলে এই ম্যাচে প্রাইম ব্যাংককে জিততেই হতো। দু’দলের এই উল্টো সমীকরণটাই ম্যাচটাকে একটা ‘সন্দেহের গর্তে’ ফেলে দেয়। আর ম্যাচের আবহ, ম্যাচ পরিস্থিতি, আবাহনীর ব্যাটসম্যানদের খামখেয়ালি ব্যাটিং এবং ফিল্ডিংয়ের সময় তাদের শারীরিক ভাষা-সবকিছু মিলে স্পষ্ঠতর জানান দেয়, এই ম্যাচের ফল মাঠে নামার আগেই ‘ঠিক’ হয়ে গেছে!
মিরপুরের উইকেটে এমন কিছুই ছিল না যে আগে ব্যাট করতে নেমে আবাহনী মাত্র ১৬০ রানে গুটিয়ে যাবে? টপঅর্ডারে নাসির এবং লিটন কুমার ছাড়া আবাহনীর আর কোন ব্যাটসম্যানকে ‘সিরিয়াস’ হতে দেখাও গেল না! সবচেয়ে অবাক করার মতো ঘটনা ঘটল আবাহনীর ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’তে। এমনিতেই ম্যাচে নেতিয়ে যাওয়া ব্যাটিং করছিল আবাহনী, ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’তে এসে তাদের ‘পাওয়ার’ পুরোটাই যেন ফুরিয়ে গেল! ৩০ থেকে ৪০ ওভারের এই ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’তে আবাহনী তুলল মাত্র ৮ রান! বিস্ময় বিস্ময়!! ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’তে ২ উইকেট হারানো আবাহনীর ব্যাটিং জানাচ্ছিল-রান করা নয়, ওভার ‘খেয়ে’ যাও!
শেষমেষ আবাহনী গুটিয়ে গেল মাত্র ১৬০ রানে। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে-চলতি লিগে আগে ব্যাট করে আবাহনীর এটাই সর্বনিম্ম রান। মজার তথ্য হল-লিগে প্রথম মোকাবেলায়ও প্রাইম ব্যাংকের বিরুদ্ধে আবাহনী মাত্র ১৬৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এত কম সঞ্চয় নিয়েও সেই ম্যাচে দারুণ বোলিং দাপট দেখিয়ে আবাহনী জিতেছিল ৩৩ রানে!
কিন্তু মিরপুরে ৪ জানুয়ারির সুপার লিগের ম্যাচে জয়ের জন্য আবাহনীর কোন তাড়াই যেন চোখে পড়ল না। আবাহনীর অধিনায়কের কিছু সিদ্ধান্তও রহস্যময়ই হয়ে রইল। ম্যাচে প্রাইম ব্যাংকের পেসার ফরহাদ রেজা ৯.২ ওভারে মাত্র ১৭ রানে ৪ উইকেট পেলেন। কিন্তু একই ম্যাচে নিজ দলের সেরা পেসার আল আমিনকে মাত্র ২ ওভার করতে দিলেন আবাহনী অধিনায়ক!
-কেন?
উত্তর-প্রাইম ব্যাংকের জয়ে যেন কোন বাধা না আসে-সেই পথটাই যে পরিস্কার করে দিচ্ছিল আবাহনী।
৯ উইকেটে এই ম্যাচ জিতে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট একাডেমি এবারের লিগে নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু প্রিমিয়ারের এই শেষ ম্যাচ যে অনেক সন্দেহ, অনেক প্রশ্ন রেখেই গেল!
চরম বাজে এবং পক্ষপাতমুলক, র্নিলজ্জ্ব আম্পায়ারিং নিয়ে আগেই কলঙ্কিত হয়েছে এবারের প্রিমিয়ার লিগ। মাঠ ছেড়ে দল বেরিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। আর লিগের শেষটা হল গড়াপেটা ম্যাচের সন্দেহের কলঙ্কে!
Discussion about this post