গল্পটা মোটেও নতুন কিছু মনে হল না।
মনে হল-এই গল্প তো হরদমই শুনেছি নিজ দেশে। পাকিস্তানে এমনকি ভারতেও। দক্ষিণ এশিয়ার সেই চিরায়িত কাহিনী এসে শুনতে হল শ্রীলঙ্কাও! ক্রিকেটের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের গল্প। থাক সেই বাজে গল্প পরে শুনি। আগে শহরের কাহিনী।
২০০৭ সালে দেখা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ২০১২ শ্রীলঙ্কার পার্থক্য বেশ। আগে রাস্তায় মোড়ে মোড়ে বালির বস্তা সাজিয়ে মেশিনগান হাতে ব্যস্ত সেনাবাহিনীকে দেখা যেত। এমন সেসব কোনে ফুলের দোকান! প্রভাকরণকে হত্যার পর এলটিটিএ’র সঙ্গে শ্রীলঙ্কান সরকারের যুদ্ধটা আপাতত শেষ। চারধারে বেশ শান্তিশৃঙ্খলার একটা ভাব। পর্যটকও প্রচুর বেড়েছে। পাঁচতারকা হোটেলের সংখ্যাও বাড়ছে। আরো উঁচু উঁচু ভবন তৈরি হচ্ছে। সমুদ্রের গর্জন; ঢেউয়ের সাদা কেশরকে আরও সবল দেখাচ্ছে।
আরেকটা পার্থক্য বড় বেশি চোখে পড়ল। সন্ধ্যা রাতে ট্যাক্সিতে (এখনো টুকটুক বলে) উঠলেই চালক কান ঝালাপালা করে ফেলে‘স্যার, মাসাজ, নাইটক্লাব!’ মাসাজ পার্লার ও নাইটক্লাব থেকে কমিশনের ধান্দায় সন্ধ্যা হতেই এদের গ্রাহক খোজা শুরু। পাঁচবছর আগেও ছিল এটা। তবে এখন সংখ্যাটা বেড়েছে। পর্যটকের শহর বলে কথা!
শহরের গল্প থাক। এবার ক্রিকেটে ফিরি।
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট নিয়ে পেছনের ১৩ দিনে কলম্বো এবং ক্যান্ডিতে যার সঙ্গেই কথা হয়েছেÑতাদের সব সিদ্ধান্ত একজায়গায় গিয়ে স্থিররাজনীতি থেকে মুক্ত নয় শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট। এই অভিযোগ তো হরদমই শুনে আসছি আমরাÑবাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে। তবে শ্রীলঙ্কায় এই অভিযোগটা আরো ভয়াবহ। এখানকার ক্রিকেটে রাজনৈতিক কলুষতার সঙ্গে ধর্মীয় ব্যাপার-স্যাপারও জড়িয়ে পড়ছে।
বিভিন্নজনের কাছে এমন অভিযোগটা শুনে কিছুটা বিস্মিত হলাম। শুধুমাত্র বলার জন্য বলা নয়; যারা এই অভিযোগ করছে তারা কিন্তু বিভিন্ন প্রান্তের একেবারে সাধারণ মানুষ। তাদের বিশ্বাসÑঅভিযোগটা ঠিক। এই অভিযোগে ঠিক বিশ্বাস রাখতে ইচ্ছে হল না। তাই সেটা একটু পরেই আনছি। তার আগে শুনি ঠিক কোথায় কিভাবে রাজনীতির হাতে বন্দি শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট।
সনাৎ জয়াসুরিয়া শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক। তার রাজনৈতিক পরিচয়টা হল তিনি ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম এলায়েন্সের সঙ্গে জড়িত। শুধু জড়িত বললে ঠিক বলা হবে না। জয়াসুরিয়া এই দলের সংসদ সদস্য। শ্রীলঙ্কার ক্ষমতায় বর্তমানে এই দলটি। আর দলীয় এমপি হবার সুবাদে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাাহিদ্রা রাজাপাকশের সঙ্গে জয়াসুরিয়ার সম্পর্কটা বেশ ভাল। আর তাই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডে কোন পদে না থেকেও জয়াসুরিয়া এখানে দারুণ ক্ষমতাবান! সেই ক্ষমতার দাপটেই তিনি শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড থেকে অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে সরে যেতে বাধ্য করেন। ছোট্ট একটা ফুটনোট দিচ্ছি ১৯৮৯ সালে যে ওয়ানডেতে জয়াসুরিয়ার অভিষেক হয়েছিল তাতে অধিনায়ক ছিলেন রানাতুঙ্গা। ক্রিকেট থেকে বিদায় নেয়ার পর রানাতুঙ্গাও রাজনীতিতে জড়ান। একসময় তার রাজনৈতিক দলও ক্ষমতায় ছিল; এখন ক্ষমতার বাইরে। খেলার মাঠে জয়াসুরিয়া ও রানাতুঙ্গা একই দলে খেললেও রাজনীতির ময়দানে দুজনে দুই দলে।
রাজনীতির সেই ক্ষমতার লড়াইয়ে জয়াসুরিয়ার কাছে এখন ক্রিকেটে রানাতুঙ্গার হার! দল নির্বাচন থেকে শুরু করে বোর্ডে কে কোন পদে থাকবেÑসবকিছুই নাকি স্থির হয় জয়াসুরিয়ার সিদ্ধান্তে। ক্ষমতাসীন দলের এমপি। ক্ষমতা তো দেখাতেই হবে!
ক্রিকেটে রাজনীতির এমন পঙ্কিলতা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সরকার বদল হলেই ক্রিকেট বোর্ডেও ক্ষমতার বদল হয়! তবে শ্রীলঙ্কার আমজনতার বিশ্বাস এখন যেসব দল নির্বাচন হয় সেখানে ধর্ম-টর্মও নাকি বিবেচনায় নেয়া হয়। এই অভিযোগ প্রসঙ্গে মুসলমান ক্রিকেটার নাভেদ নেওয়াজের উদারহণটাই সবাই বেশি টানেন। শ্রীলঙ্কার ঘরোয়া ক্রিকেটে নাভেদ নেওয়াজ কয়েকবার বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন। ওয়ানডে দলেও খেলেন। কিন্তু তার প্রতিভা বিকাশের জন্য তাকে যথাযথ সুুযোগ দেয়া হয়নি বলে এখানে অভিযোগ রয়েছে। সে কারণে রাগ করে নাভেদ নেওয়াজ মাত্র ২৭ বছর বয়সেই খেলোয়াড়ি জীবন ছেড়ে ক্রিকেট কোচিংয়ে জড়িয়ে পড়েন। দলে জায়গা পাবেন না জেনে একসময়ের শ্রীলঙ্কার সেরা এই অলরাউন্ডার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এল শ্রীলঙ্কার বর্তমান দলের ওপেনার তিলকরতেœ দিলশান মুসলমান ছিলেন। সেসময় তার নাম ছিল তুয়ান দিলশান। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করার পর তিনি তুয়ানের জায়গায় নামটা বদলে তিলকরতেœ রাখেন। শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলে নিজের ক্যারিয়ার লম্বা করার জন্যই নাকি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দিলশান!
আবার বলছিÑএসব অভিযোগ বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না।
বলতে পারেন-তাহলে কেন লিখলাম?
কি করবো এই অভিযোগটা যে শ্রীলঙ্কার অনেকের!
Discussion about this post