ট্রফিটা ফেরত চায় মোহামেডান
সুপার কাপে ভাগ্য তাহলে সুপ্রসন্ন। তিনটি আসরের ফাইনালিস্ট। একটিতে শিরোপা, অন্যটিতে রানার্সআপ। আগামীকাল কি তাহলে শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন! যেভাবে মোহামেডান এগোচ্ছে তাতে মিশন সফল হলে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সাদা-কালো শিবির সুপার কাপ ট্রফি জেতার জন্য বলতে গেলে মুখিয়ে। কাল দলের কোচ ও অধিনায়কের কণ্ঠে তেমনই আত্মবিশ্বাসী সুর ছিল।
মৌসুমের তিনটি আসরের কোনোটিতে ফাইনাল দেখা হয়নি। সুপার কাপে বরং ফাইনালে উঠে হাজারো সমর্থকদের উত্কণ্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে। শেষ রক্ষা হবে তো। এমন প্রশ্ন এখন সবার মনে। দলের কোচ সাইফুল বারী টিটু কৌশলী উত্তর দিয়েছেন-‘শিরোপার দিকে যাচ্ছি আমরা। শুরুর ম্যাচ যেমন খেলেছিলাম তেমনটি আগামীকাল হলে চ্যাম্পিয়নশিপ সম্ভব। শিরোপার স্বপ্ন না দেখার কোনো কারণ দেখছি না।’
অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার রজনী কান্ত বর্মণের হাতে একাধিক ট্রফি উঠেছে। ক্যারিয়ারের শেষদিকে এসে ঐতিহ্যবাহী দলটিকে আরও একটি ট্রফি এনে দিতে চান। অধিনায়ক হিসেবে বললেন, ‘আমরা ভালো খেলে ফাইনালে এসেছি। ফাইনালে সবার দোয়া চাই যেন চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। এছাড়া আরও একটি বিষয় বলতে চাই, বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়া প্রমাণ হয়েছে আমরা ভালো ফুটবল খেলতে পারি।’
প্রতিপক্ষ শেখ রাসেল বধে পরিকল্পনাটা আগেভাগে জানিয়ে দিলেন কোচ টিটু। বললেন, ‘ওদের বিশেষত তিনজন খেলোয়াড় আছে। যাদের অকার্যকর করে দিতে পারলে ম্যাচ বের করে আনা সম্ভব। মামুনুল-জাহিদ-এমিলি তাদের অন্যতম। তারা যে কোনো সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। আমি তাদের বিপক্ষে ভিন্ন পরিকল্পনা এঁটেছি। তা ম্যাচেই দেখা যাবে।’ নিজেদের খেলাটা কীভাবে হবে। কোচ বললেন, ‘আমাদের যে শক্তি তাতে অলআউট খেলা সবসময় কঠিন। তাই প্রতিআক্রমণ নির্ভর খেলব। বল দ্রুত আদান-প্রদানে খেলতে হবে। যদি মোবারক-ওয়াহেদের পাশাপাশি সোহেল রানা-মানিকরা সাইড থেকে এসে গোল করতে পারত, তাহলে দলের জন্য তা সহায়ক হতো। কিন্তু সমস্যা হল সেটি হচ্ছে কমই।’
প্রতিপক্ষ নিয়ে টিটুর কথা, ‘রাসেলের কোচ বেশ উঁচুমানের। তারা পিছিয়ে থেকে ম্যাচে ফিরে আসার ক্ষমতা রাখে। আগে বেশ কয়েকবার তা দেখা গেছে। তবে বিদেশি ছাড়া তাদের এই প্রথম শিরোপা স্বপ্ন। যা আগে হয়নি। এ চ্যালেঞ্জ তারা কতকুকু নিতে পারবে তা দেখার আছে। যদিও তাদের খেলোয়াড়দের মান খুব একটা খারাপ নয়।’
বলা হচ্ছে দেশের সেরা দুই কোচ মুখোমুখি। কে কাকে কীভাবে বধ করবেন, তা দেখার আছে। ট্যাকটিস-টেকনিক নিয়ে অন্যরকম লড়াই। টিটু অবশ্য সেদিকে না হেঁটে বলেছেন, ‘আট কোচই সেরা। সবাই সবার সম্পদ কাজে লাগিয়েছে। কোচদের নিয়ে লড়াই থাকবে। মাঠে খেলোয়াড়রা কতটুকু তা প্রয়োগ করতে পারবে তা দেখতে হবে। আমি চাই ফাইনাল ম্যাচ হোক দৃষ্টিনন্দন। দর্শকরা যেন বলতে পারে ফাইনাল হয়েছে দেখার মতো। এবং সঙ্গে মনও ভরেছে।’
জিতলেই শেখ রাসেলের রেকর্ড
ট্রেবল জিতে ইতিহাসের পাতায় ঢুকে পড়েছে শেখ রাসেল। এটি কিছুদিন আগের খবর। নতুন খবর হল-ইতিহাসের পাশাপাশি রেকর্ডের পাতায় নাম লেখানোর অপেক্ষায় তারা! ঘরোয়া মৌসুমে টানা চতুর্থ শিরোপা যে অন্য কোনো দল জিততে পারেনি। রেকর্ড কি করতে পারবে জয়ের ধারাবাহিকতা দেখানো দলটি! টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু দারুণ আত্মবিশ্বাসী। মৌসুমের শেষ ট্রফিটি তাদের ঘরে নিতে বদ্ধপরিকর।
হাইপ্রোফাইল কোচ হিসেবে মারুফুল হক খ্যাতি অর্জন করতে শুরু করেছেন। স্বাভাবিকভাবে ক্যারিয়ারে চতুর্থ সাফল্য নিতে চাইবেন। সেটি উচ্চারিতও হল তার কণ্ঠে, ‘আমরা ধারাবাহিকতা রেখে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। ফুটবল ইতিহাসে নতুন রেকর্ডও গড়তে ইচ্ছুক। দলের সবাই এর জন্য মুখিয়ে আছে বলতে পারেন। এর বিকল্প কিছু চিন্তা করছি না।’ দলের অধিনায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য আরও একধাপ এগিয়ে জানালেন, ‘সবার কাছে দোয়া চাই। রাসেল যেন প্রথমবারের মতো সুপার কাপ জিততে পারে। ক্লাবের জন্য যা হবে নতুন ইতিহাস। একজন খেলোয়াড় হিসেবেও একসঙ্গে চারটি ট্রফি জেতার রেকর্ডের অধিকারী হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। মোহামেডানকে হারিয়ে সেটাই করব।’
আবহাওয়াকে অন্যতম প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে এনেছে শেখ রাসেল। কোচ মারুফুল হক তাই বললেন, ‘তাপমাত্রা-আর্দ্রতা বড় সমস্যা। তার ওপর বৃষ্টি হলে আরও সমস্যা। এভাবে ভালো ফুটবল খেলা কঠিন। বিশেষ করে গতিময় ফুটবল। তারপরও আমাদের চেষ্টা থাকবে সেরাটা খেলার।’ প্রতিপক্ষ মোহামেডানকে যথারীতি সমীহ। ট্রেবলজয়ী কোচ বললেন, ‘তারুণ্য-অভিজ্ঞতার মিশেলে গড়া দল। তারা যোগ্যতর দল হিসেবে ফাইনালে এসেছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যোগ্যতা রাখে। সবাই নিজেদের সেরাটা খেলার ক্ষমতা রাখে।’ নিজ দল সম্পর্কে তার কথা, ‘আমাদের দলটি অভিজ্ঞ। তিনটি ট্রফি জেতার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমার একটু ভয় ছিল বিদেশি খেলোয়াড় নেই। দলীয় সমন্বয় কেমন জানি হয়। আশার কথা দলীয় সমন্বয় ভালোই ছিল। সেই ভয় এখন আর নেই। খেলোয়াড়রা উজ্জীবিত। চতুর্থ ট্রফি জেতার জন্য সবাই উন্মুখ।’
আবারও সেই প্রশ্ন। চাপ অনুভব করছেন? মারুফের সেই আগের উত্তর, ‘চাপকে জয় করতে শিখেছি। খেলোয়াড়রা এখন সামনের দিকে এগোতে চায়। ফাইনালকে কোনোমতেই চাপ হিসেবে দেখার কিছু নেই। এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হচ্ছে। চ্যালেঞ্জকে জয় করতে হবে। এরজন্য সবাই সতর্ক।’ দুই কোচের প্রসঙ্গ উঠতেই তার কথা, ‘দুই কোচের মধ্যে ট্যাকটিকালি কিছু বিষয় তো থাকবেই। সেটা মাঠে ভালো দেখা যাবে। গেমপ্ল্যান নিয়ে যারা মাঠে ভালো খেলবে তারাই তো সেরা হবে। আর সবার তো আলাদা আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে।’
হঠাত্ করে আসা সুপার কাপ জিততে যে দলটি মরিয়া, তা তাদের কর্মপরিকল্পনাতে পরিষ্কার। এমিলি-মিঠুন-জাহিদ-মামুনুলরা তা কতটুকু করে দেখাতে পারবে-তা মাঠেই পরিষ্কার হবে। ইতিহাসের নতুন রেকর্ড যে তাদের সামনের দিকে টানছে!
Discussion about this post