টানা দুই হার। শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, কাল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। শনিবার এজবাস্টনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে জয়ও পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে নিয়ে যাওয়ার জন্য এখন আর যথেষ্ট নয়। পরাজয়ের পাশাপাশি পাকিস্তানের জন্য শঙ্কার ব্যাপার যা তা হলো, দুটো ম্যাচের একটিতেও ২০০ রানের ঘরে প্রবেশ করতে না পারা। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতায় টানা দুই ম্যাচে এই পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না দলীয় অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ১৭০ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর বোলাররা প্রতিরোধ গড়েছিলেন। ক্যারিবীয়দের আট উইকেট ফেলে দিয়ে দলকে প্রায় জয়ের বন্দরে নিয়ে গিয়েছিলেন দলের বোলিং সৈনিকেরা। কিন্তু কাল প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মাত্র ২৩৫ রানের লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ১৬৭ রানেই ‘শেষ’ হয়ে গেলেন, তা তির হয়ে বিঁধছে অধিনায়ক মিসবাহর বুকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৩৫ রানের ‘সহজিয়া’ লক্ষ্যকে ছুঁতে না পারার ব্যর্থতায় প্রচণ্ড হতাশ ও ক্ষুব্ধ মিসবাহ। তিনি বলেছেন, ‘দু-একজন খেলোয়াড়ের ধারাবাহিক ব্যর্থতা পুরো দলকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। খেলোয়াড়দের দায়িত্বশীল হতে হবে পূর্ণমাত্রায়।’
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে মিসবাহর ব্যাট অবশ্য কথা বলেছে দুই ম্যাচেই। ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ার-সেরা অপরাজিত ৯৬ রানের পাশাপাশি কাল এজবাস্টনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৫৫ রান। মিসবাহর পাশাপাশি ব্যাট কথা বলছে নাসির জামশেদের। কিন্তু ইমরান ফরহাত, মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিকরা টেনে যাচ্ছেন নিজেদের ব্যর্থতার গ্লানি।
কাল প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়া আসাদ শফিকের বদলে মাঠে নামানো হয়েছিল উমর আমিনকে। কিন্তু তিনি ১৬ রানে ফিরে গিয়ে নিজের অন্তর্ভুক্তির যথার্থতা প্রমাণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মাঠে উপস্থিত পাকিস্তানি সমর্থকদের কাছ থেকে তিক্ত অভ্যর্থনা পেয়েছেন মিসবাহ। দর্শকদের দুয়োধ্বনি তাঁকে বিচলিত করলেও তা তাঁকে অবাক করেনি বলেই জানালেন তিনি। যখন খেলোয়াড়েরা দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণে নিদারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দেন, তখন ব্যাপারটি অস্বাভাবিক নয় বলেই মত দিয়েছেন তিনি।
খেলোয়াড়দের ওপর বিরক্তি ঝরেছে তাঁর পরের কথায়, ‘এ মুহূর্তে আমাদের ব্যাটসম্যানরা যে ধরনের পারফরম্যান্স করছেন, তাতে তাঁরা দলে তাঁদের অন্তর্ভুক্তির যথার্থতা প্রমাণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’
পুরো ব্যাপারটিই ব্যাটসম্যানদের ‘প্রয়োগ-ক্ষমতা’র ব্যর্থতা বলে জানিয়েছেন মিসবাহ। তাঁর মতে, ‘ব্যাটিং
পারফরম্যান্স এমন হলে তা সবার জন্যই হতাশার।’
দলের ব্যর্থতার জন্য উইকেটকে দায়ী করার কোনো কারণ দেখছেন না মিসবাহ। ‘এ ধরনের উইকেটে খেলে অভ্যস্ত পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা। এজবাস্টনের উইকেট একেবারেই পাকিস্তানি উইকেটের মতো। এই উইকেটে রান করতে না পারার কোনো কারণ থাকতে পারে না।’ মিসবাহর খেদোক্তি।
তাঁর মতে, পাকিস্তান ইনিংসের মাঝামাঝি পর্যায়েও প্রয়োজনীয় রানরেট কখনোই ছয় অতিক্রম করেনি। এত সহজ উইকেটে ওভারপ্রতি ছয়ের কম রান তাড়া করে পাকিস্তানের জিততে না পারাটার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এখনো পর্যন্ত পাকিস্তানের আশার জায়গা বোলিং। ফিল্ডিংয়ের উন্নতিও স্পষ্ট। ব্যাপারটি স্বস্তি দিচ্ছে মিসবাহকেও। কিন্তু পরক্ষণেই ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কথা মনে করে তিনি হতাশায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন। ব্যাটিংকে তাঁর মনে হচ্ছে ‘পথ হারানো পথিকে’র মতোই।
রয়টার্স
Discussion about this post