বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নির্বাচন ঘিরে নাটক যেন থামছেই না। একের পর এক প্রার্থী সরে দাঁড়াচ্ছেন, অভিযোগ উঠছে অনিয়ম ও পক্ষপাতের, আর তার মধ্যেই নতুন করে বিস্ফোরক ঘোষণা দিলেন ঢাকার প্রথম সারির ক্রিকেট ক্লাবগুলো। শনিবার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা ঘোষণা দেন-আগামীকালের (৫ অক্টোবর) মধ্যে তিন দফা দাবি না মানলে বাংলাদেশের সব ধরনের ক্রিকেট তারা বর্জন করবেন।
সংবাদ সম্মেলনের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিসিবি নির্বাচনে মোহামেডান ক্লাবের কাউন্সিলর মাসুদউজ্জামান। তার পাশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার নামকরা ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিরা। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘বিসিবি নির্বাচনে নোংরামির বিরুদ্ধে ক্লাব, সংগঠক ও কাউন্সিলরদের প্রতিবাদ।’
মাসুদউজ্জামান বলেন, ‘বিসিবি নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে। এটি শুধু দেশের ক্রিকেট নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। আমরা চাই সবাইকে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন, কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা একপেশে এবং বিতর্কিত।’
তিনি জানান, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ বাড়িয়ে পরে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা, অথবা অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন দেওয়া, প্রয়োজনে বর্তমান তফসিল বাতিল করে নতুন তফসিল ঘোষণা করা- এই তিনটি দাবিই এখন দেশের ক্রিকেটের সুষ্ঠু ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই দাবিগুলোর পক্ষে ইতোমধ্যে ৪৮টি ক্লাব একমত হয়েছে।
মোহামেডান ক্লাবের এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইন্দিরা রোড ক্রীড়া চক্রের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, যিনি এর আগে বিসিবি কার্যালয়ে গিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে একই দাবি তুলেছিলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাসুদউজ্জামান বলেন, ‘আমরা আলোচনার দরজা বন্ধ করিনি। গত পরশু (২ অক্টোবর) আমরা ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি বলেই আজ সংবাদ সম্মেলনের এই জায়গায় এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আপিল করতে পারতাম, কিন্তু বাস্তবতা হলো- আমরা পারছি না কিছু করতে। ক্রিকেটের স্বার্থেই আমরা কথা বলছি, ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়। এখনো আলোচনার পথ খোলা আছে। যারা রিট করেছেন, তারা চাইলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব।’
বিসিবির বর্তমান অচলাবস্থার শুরু তৃতীয় বিভাগ বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসা ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ হাইকোর্টে স্থগিত হওয়া থেকে। এরপর থেকেই নির্বাচনকে ঘিরে নানা জটিলতা তৈরি হয়। পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালসহ ১৬ জন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
পরে আরও দুই প্রার্থী-রাজশাহী অঞ্চল থেকে হাসিবুল আলম এবং ক্লাব ক্যাটাগরিতে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের লুৎফর রহমান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। লুৎফর রহমান বাদল আজ শনিবারের সংবাদ সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন এবং ক্লাবগুলোর দাবির প্রতি তার সমর্থন জানান।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই সাংবাদিকদের হাতে একটি লিখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তুলে দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘বিতর্কিত নির্বাচনের নীলনকশা বাতিল না করা হলে বাংলাদেশের কোনো ক্লাব আসন্ন কোনো ধরনের ক্রিকেটে অংশ নেবে না।’ একই সঙ্গে জেলা ও বিভাগীয় কাউন্সিলর তালিকায় সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগও তোলা হয়।
সংগঠকদের দাবি, আবাহনী ও মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরদের নির্বাচনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদকে কাউন্সিলরশিপ দেওয়া হয়েছে, ১৫ ক্লাবকে কাউন্সিলর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, আর জেলা-বিভাগীয় প্রতিনিধিদের ভোটাধিকারের ওপরও প্রভাব খাটানো হচ্ছে!
Discussion about this post