আবুধাবির জায়েদ স্টেডিয়ামের বাতাসে যেন আজ অন্যরকম এক চাপা উত্তেজনা। মাঠে লড়ছে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান, অথচ চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে আরেকটি দলের নাম-বাংলাদেশ। ম্যাচে নেই, তবু একরকম অস্তিত্ব অনুভব করাচ্ছিল টাইগারদের ছায়া।
কারণ, এই একটি ম্যাচের ফলই বলে দেবে-বাংলাদেশের যাত্রা থামবে, না কি চলবে আরও এক ধাপ সামনে, সুপার ফোরে। এমন ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয় ৬ উইকেটে।
শুরুটা আফগানিস্তানের জন্য যতটা প্রতিশ্রুতির ছিল, বাস্তব ছিল ঠিক উল্টো। গুরবাজ ঝড়ের ইঙ্গিত দিয়েও থেমে যান মাত্র ৮ বলে ১৪ রানে। আর এরপর যেন নুয়ান থুসারার একার নাটক। একের পর এক উইকেট তুলে নিয়ে আফগান ইনিংসের কোমর ভেঙে দেন তিনি। পাওয়ারপ্লের মধ্যেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে আফগান ব্যাটিং। স্কোরবোর্ড তখন ৪০/৩।
এরপরও আশার আলো হয়ে টিকে থাকেন ইবরাহিম জাদরান, কিন্তু ইনিংসটিকে তিনি পরিণতি দিতে পারেননি। আফগানিস্তান যখন ৭৯ রানে হারিয়ে ফেলেছে ৬ উইকেট, তখন তাদের সুপার ফোরের স্বপ্নও যেন কুয়াশার মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছিল।
ঠিক সেই সময় যেন আগুন হাতে ক্রিজে নামলেন মোহাম্মদ নবী। প্রথমে সতর্ক, পরে বিধ্বংসী। শেষ ওভারে ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে একাই ম্যাচের রঙ পাল্টে দেন। মাত্র ২২ বলে ৬০ রান করে অপরাজিত থেকে দলকে এনে দেন লড়াকু স্কোর ৮ উইকেটে ১৬৯।
তবু তা যথেষ্ট ছিল না, কারণ সামনে ছিল ধীর অথচ নিশ্চিত শিকারি এক দল-শ্রীলঙ্কা।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ধাক্কা খেয়েছিল লঙ্কানরা। নিসাঙ্কা ফেরেন দ্রুতই। তবে কুশল মেন্ডিস ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। এক প্রান্ত আগলে রেখে, ধীরে ধীরে রান বাড়িয়ে নিয়েছেন, আরেক মেন্ডিস-কামিন্দুকে সঙ্গে নিয়ে গড়েছেন জয়ের ভিত।
কুশল পেরেরা ও আসালাঙ্কার ছোট ক্যামিও ইনিংসও ছিল কাজে লাগার মতো। তবু মূল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস। যখন তাঁর ব্যাটে উঠে এলো ফিফটির সংবেদনশীল উদযাপন, তখন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, আজ বাংলাদেশ হেরে যাবে না, জিতবে না, তবু বেঁচে থাকবে।
শেষ পর্যন্ত ৮ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেটে জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। সঙ্গে নিয়ে যায় বাংলাদেশকেও সুপার ফোরে। আর আফগানিস্তানের জন্য রয়ে যায় নবীর ঝড়ের ব্যক্তিগত সান্ত্বনা আর দলগত হতাশা।
এ যেন এমন এক ম্যাচ, যেখানে কাগজে ছিল দু’টি দল, কিন্তু গল্পে ছিল তিনটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৬৯/৮ (নবী ৬০, জাদরান ২৪, রশিদ ২৪, আতাল ১৮, গুরবাজ ১৪; তুষারা ৪/১৮, শানাকা ১/২৯, ভেল্লালাগে ১/৪৯, চামিরা ১/৫০)।
শ্রীলঙ্কা: ১৮.৪ ওভারে ১৭১/৪ (কুশল মেন্ডিস ৭৪*, কুশল পেরেরা ২৮, কামিন্দু মেন্ডিস ২৬*, আসালাঙ্কা ১৭; ওমরজাই ১/১০, নবী ১/২০, নুর ১/৩৭, মুজিব ১/৪২)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: কুশল মেন্ডিস
Discussion about this post