কখনো কখনো ক্রিকেট যেন দুই বিপরীত মেরুর গল্প। একপাশে ছিল অদম্য এক মনোভাব, আরেকপাশে ছিল ছন্দে থাকা বোলিং আক্রমণের অসীম ধৈর্য। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আজ সেই দুই মেরুর মুখোমুখি সংঘর্ষে জয়ী হলো পরিকল্পনা আর চাপ প্রয়োগের কৌশল।
চারিথ আসালাঙ্কার ব্যাটিং ছিল যেন ঝড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃক্ষ। অন্যরা একে একে ভেঙে পড়লেও তিনি ছিলেন অবিচল, দৃঢ়। অথচ এই দাপুটে ইনিংসটির পরও শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ড থামল মাত্র ২৪৪ রানে, ৫ বল হাতে রেখেই অলআউট হয়ে।
কারণ? তাসকিন আহমেদের তীরের মতো গতি আর তানজিম হাসানের শৃঙ্খলিত আগ্রাসন। টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামলেও, যেন পরিকল্পনাটা ঠিক করে এনেছিলেন মিরাজ। নতুন বল হাতে তাসকিন আর তানজিম যেন প্রতিপক্ষকে চমকে দিতে চেয়েই নেমেছিলেন। হয়নি ভিন্ন কিছু।
নিশাঙ্কা শূন্য, কামিন্দুও রান না করেই বিদায়। মাদুশকা ফিরলেন ৬ রানে। স্কোরবোর্ডে তখন মাত্র ২৯ রান, উইকেট ৩টি। শ্রীলঙ্কা যেন তখন খুঁজছিল আশ্রয়।
এই ভাঙা নৌকায় দাঁড়িয়ে ডুবন্ত দলকে টেনে তুলতে শুরু করলেন ক্যাপ্টেন আসালাঙ্কা। অদ্ভুত এক নৈপুণ্যে তিনি সামলে নিলেন সিচুয়েশন। রক্ষণ আর আগ্রাসনের নিখুঁত মিশেল ছিল তার ব্যাটিংয়ে। ১২৩ বলের ইনিংসে তিনি তুলে নিলেন ১০৬ রান-৬টি চার, ৪টি ছক্কা। এমনকি ইনিংসের নবম উইকেটে আউট হয়ে গিয়েও দলের সংগ্রহ এনে দিলেন দুই-আড়াইশ’র কাছাকাছি।
২৪৩ রান যখন বোর্ডে, তখন বাকি ছিল মাত্র শেষ ওভার। কিন্তু অবাক করার মতো তথ্য হলো-শেষ ৩৪ বলে শ্রীলঙ্কা মারতে পারেনি একটি বাউন্ডারিও। এটি শুধু বোলারদের কৃতিত্ব নয়, এটি মানসিক চাপও বলে দেয়। তাসকিনের তীব্রতা, তানজিমের ধার, তানভীরের নিয়ন্ত্রণ-সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কাকে যেন ব্যাটে তালা পড়িয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ।
তাসকিন আহমেদ যেন ফিরলেন নিজস্ব সেই ভয়ংকর রূপে। নিয়েছেন ৪ উইকেট, তার মধ্যে ছিল গুরুত্বপূর্ণ তিন ধাক্কা। অন্যদিকে তরুণ তানজিম দেখালেন, শ্রীলঙ্কার উইকেটেও তিনি হতে পারেন নির্ভরতার প্রতীক-৩ উইকেট তার ঝুলিতে। রানটা বিশাল নয়, তবে প্রেমাদাসার উইকেট কখনোই নিছক সহজ নয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
শ্রীলঙ্কা: ৪৯.২ ওভারে ২৪৪/১০ (নিশাঙ্কা ০, মাদুশকা ৬, মেন্ডিস ৪৫, কামিন্দু ০ আসালঙ্কা ১০৬, লিয়ানাগে ২৯, রত্নায়েকে ২২, হাসারাঙ্গা ২২; তাসকিন ৪/৪৭, তানজিম ৩/৪৬)
Discussion about this post