ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
হারলেই সিরিজ শেষ। এমন সমীকরণের ম্যাচে টস ভাগ্য বৃহস্পতিবার কথা বলেনি ইংল্যান্ডের হয়ে। এ সুযোগে স্বাগতিকদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। শুরুটা ভাল করলেও একটা পর্যায়ে দ্রুত উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে জস বাটলারের দল। শেষ দিকে অবশ্য মঈন আলী, লিভিংস্টোন ও ডেভিড উইলির দৃঢ়তায় সম্মানজনক স্কোর গড়ে ইংলিশরা। তারপরও স্বাগতিকদের মনে হারের শঙ্কা ছিলই। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটা দূর করে দেন দলটির পেসার রিস টপলি। এ বাঁহাতি পেসার মাত্র ২৪ রানে নেন ৬ উইকেট—ওয়ানডেতে কোনো ইংল্যান্ড বোলারের যেটি সেরা ফিগার। শেষ পর্যন্ত তার রেকর্ডগড়া বোলিংয়ের ওপর ভর করে ইংল্যান্ড জিতে যায় ১০০ রানের বড় ব্যবধানে। সঙ্গে সঙ্গে তিন ম্যাচ সিরিজে সমতায় ফিরল দলটি।
লর্ডসে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভারে ২৪৬ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া ভারত গুটিয়ে যায় মাত্র ৩৮.৫ ওভারে ১৪৬ রানে। ২৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের বড় জয়ের নায়ক টপলি। ওয়ানডেতে এর আগে কখনও চার উইকেটের বেশি পাননি। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪০ ওভারের আগেই থমকে গেছে ভারত।
বৃহস্পতিবার বল হাতে শুরুতেই ইংল্যান্ডের সাফল্য এনে দেন টপলিই, তৃতীয় ওভারে রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে। লেংথ বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লু হন ভারত অধিনায়ক, রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি। ১০ বল খেলেও রান করতে পারেননি তিনি। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে সাজঘরের পথ ধরেন শিখর ধাওয়ান, ঋষভ পন্ত ও বিরাট কোহলি।
টপলির লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে কট-বিহাইন্ড শিখর ধাওয়ান। চার নম্বরে উঠে আসা ঋষভ পন্ত ব্রাইডন কার্সের নিরীহ লো ফুলটসে ক্যাচ তোলেন মিডউইকেটে। এদিকে ডেভিড উইলির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে কোহলি ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে বাটলারের হাতে।
ব্যাটিংয়ের জন্য খুব একটা সহজ নয় যে উইকেট, সেটিতেই ভারত পরিণত হলো ৩১ রানে ৪ উইকেটে। তবে তখনো ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া, সূর্যকুমার যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা। পান্ডিয়া ও সূর্যকুমারের জুটিতে ওঠে ৪২ রান। সে জুটি ভাঙেন টপলি, অফ স্টাম্পের বাইরে বাড়তি বাউন্সের লেংথ বলে কাট করতে গিয়ে ইনসাইড-এজে বোল্ড হন ২৯ বলে ২৭ রান করা সূর্যকুমার। পান্ডিয়া ও শামির সঙ্গে এরপর ২৮ ও ৩৯ রানের জুটি গড়েন জাদেজা। পঞ্চম বোলার হিসেবে আসা মঈন আলীকে স্লগ করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন ৪৪ বলে ২৯ রান করা পান্ডিয়া।
মোহাম্মদ শামি আরেকবার ব্যাটিং সামর্থ্যের পরিচয় দেন, তবে টপলির লো ফুলটসে হার মানতে হয় তাকে। এরপর ভারতের যেটুকু লড়াইয়ের আশা ছিল, তা শেষ হয়ে যায় ষষ্ঠ বোলার হিসেবে আসা লিয়াম লিভিংস্টোনের বলে জাদেজা বোল্ড হলে। নিজের শেষ ওভারে এসে যুজবেন্দ্র চাহালকে দিয়ে নিজের পঞ্চম, প্রসিধ কৃষ্ণকে আউট করে ষষ্ঠ উইকেটটি পান টপলি।
এর আগে ভারতের বোলিংয়ে নায়ক ছিলেন চাহাল। ৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে আগেভাগেই আটকে দিতে মূল ভূমিকা ছিল এ লেগ স্পিনারের। তবে গত ম্যাচের তুলনায় এদিন ইংল্যান্ডকে ভাল শুরু এনে দেন দুই ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো। তারা শুরুর জুটিতে তোলেন ৪১ রান। তবে মিডল অর্ডার ব্যর্থ আবারও—জো রুট, বেন স্টোকস ও জস বাটলার মিলে করেন মাত্র ৩৬ রান।
৩৮ বলে ৩৮ রান করা বেয়ারস্টোর পর রুট ও স্টোকসও ফেরেন চাহালের বলে। পরে মঈন আলীর উইকেটও নেন চাহাল। চার ইংলিশ ব্যাটসম্যানই আউট হন চাহালকে সুইপ করতে গিয়ে—বেয়ারস্টো ও রুট সাধারণ সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লু, স্টোকস রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লু, মঈন স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ।
স্টোকসের উইকেট দিয়েই ১০২ রানেই ইংল্যান্ড হারায় ৫ উইকেট। এরপর একটু লড়াই করেছিলেন মঈন । লিভিংস্টোনের সঙ্গে ৪৫ বলে ৪৬ রানের পর ডেভিড উইলির সঙ্গে তাঁর জুটিতে ওঠে ৭৮ বলে ৬২ রান। তবে মঈন, লিভিংস্টোন ও উইলি—তিন জনই ৩০ পেরোলেও ফিফটির দেখা পাননি কেউ। মঈন করেন ৪৭ রান। শেষ দিকে ৪৯ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলেন ১ রানেই পান্ডিয়ার বলে কৃষ্ণর হাতে জীবন পাওয়া উইলি, ২টি করে চারের সঙ্গে মারেন ২টি ছক্কা। যে কারণে লড়ায়ের মতো পুঁজি পায় স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত ঐ রানের ওপর ভর করে বল হাতে আগুন ছোঁটান টপলি। যে কারণে দারুণ এক জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাটলারের দল।
আগামী রোববার ম্যানচেস্টারে হবে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৪৯ ওভারে ২৪৬ (রয় ২৩, বেয়ারস্টো ৩৮, রুট ১১, স্টোকস ২১, বাটলার ৪, লিভিংস্টোন ৩৩, মইন ৪৭, উইলি ৪১, ওভারটন ১০*, কার্স ২, টপলি ৩; শামি ১০-০-৪৮-১. বুমরাহ ১০-১-৪৯-২, পান্ডিয়া ৬-০-২৮-২, প্রসিধ ৮-০-৫৩-১, চেহেল ১০-০-৪৭-৪, জাদেজা ৫-০-১৭-০)
ভারত: ৩৮.৫ ওভারে ১৪৬ (রোহিত ০, ধাওয়ান ৯, কোহলি ১৬, পান্ত ০, সূর্যকুমার ২৭, পান্ডিয়া ২৯, জাদেজা ২৯, শামি ২৩, বুমরাহ ২*, চেহেল ৩, প্রসিধ ০; টপলি ৯.৫-২-২৪-৬, উইলি ৯-২-২৭-১, কার্স ৭-০-৩২-১, ওভারটন ৭-০-২২-০, মইন ৪-০-৩০-১, লিভিংস্টোন ২-১-৪-১)
ফল: ইংল্যান্ড ১০০ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা
ম্যাচসেরা: রিস টপলি
Discussion about this post