সাফল্যের আকাশে উড়ছিল নিউজিল্যান্ড। এই সিরিজের আগে ঘরের ম্যাচে টানা ১৭ টেস্ট হারেনি কিউইরা। শেষ ১০ বছরে উপমহাদেশীয় কোন দলই হারাতে পারেনি তাদের। বাংলাদেশ তো তাদের বিপক্ষে জিততেই পারে না। ৯ টেস্ট আর তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৩২ ম্যাচ খেলে প্রতিটিতেই হেরেছে টাইগাররা। সেই দলই কীনা প্রথম টেস্ট জিতেছে ৮ উইকেটে!
তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের ছাড়াই দল পেলো টেস্ট ইতিহাসের সেরা সাফল্য। তাইতো এখন মুমিনুল হক-এবাদত হোসেনদের বন্দনায় মেতেছে ক্রিকেট বিশ্ব।
জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বুধবার জয়ের পর লিখলেন, ‘অসাধারণ জয়, ঐতিহাসিক জয়। গোটা দলকে অভিনন্দন। বছরের পর বছর বছর, সফরের পর সফর আমরা নিউজিল্যান্ড থেকে খালি হাতে ফিরেছি। এবার অনেক কারণেই পরিস্থিতি ছিল আরও কঠিন। সব বাধা দূর করে দারুণ এক জয় এনে দিল এই দল। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারানো এখন ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। আমরা দেখালাম, আমরা পারি!’
তামিম আরও যোগ করলেন, ‘সবচেয়ে ভালোলাগার বিষয়, সম্পূর্ণ দলীয় প্রচেষ্টার জয় এটি। দারুণ স্পিরিটেড ক্রিকেট খেলেছে দল। এবাদতের অসাধারণ বোলিংয়ে কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। জয় থেকে শান্ত, লিটন থেকে মিরাজ, ইয়াসির, শান্ত, এমনকি বদলি নেমে দুর্দান্ত শেষ ক্যাচটি নেয়া তাইজুল এবং দলের প্রতিটি সদস্য, সবার সম্মিলিত অবদানের জয় এটি। আমি তবু আলাদা করে বলব একজনের কথা। যখন চরম দুঃসময় এসেছে, কেউ যখন দলের ওপর বিশ্বাস রাখেনি, দলের ভেতরেও অনেকের যখন সংশয় জেগেছে নিজেদের নিয়ে, তখনও বিশ্বাস হারাননি একজন। সে সবসময় বিশ্বাস করে গেছে এবং প্রবল বিশ্বাস নিয়েই দলকে বিশ্বাস জোগানোর চেষ্টা করেছে, আমরা পারি, আমরা অবশ্যই পারি। বাজে দিন এসেছে, খারাপ পারফরম্যান্স হয়েছে। তার পরও সে কখনও দলের ওপর বিশ্বাস হারায়নি। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি তার আবেগ তীব্র, টেস্ট ক্রিকেটকে সে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয় সব সময়। মুমিনুল হক, আমাদের অধিনায়ককে টুপি খোলা অভিনন্দন!’
সাকিব আল হাসানও নেই দলে। অবশ্য অভিনন্দন জানাতে ভুল করলেন না। টুইট করে সাকিব লিখলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বছরটা কী দারুণভাবে শুরু হলো। অধিনায়ক, খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফকে বড় অভিনন্দন।’
ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষণ টুইটারে লিখেছেন, ‘মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ইতিহাস রচনার জন্য বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন। ৮ উইকেটের জয় এবং নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম জয় প্রেরণার এবং অবিশ্বাস্য অর্জন। আমি নিশ্চিত এ জয় স্মরণীয় থাকবে অনেক দিন।’
নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ড্যানি মরিসনের টুইট, ‘মনে রাখার মতো দিন। বাংলাদেশের জন্য জাদুকরি মুহূর্ত। দারুণ পারফরম্যান্স।’
এদিকে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজারের শিরোনাম, ‘২১ বছর পরে জয়, নিউজিল্যান্ডে গিয়ে তাদের হারিয়ে অনেক রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ।’ পত্রিকাটি তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘দলে নেই সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। কয়েক দিন আগেই ঘরের মাঠে পাকিস্তানের কাছে লজ্জার হার হয়েছে। তার মধ্যে নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে খেলা। অতি বড় সমর্থকও হয়তো আশা করেননি প্রথম টেস্টেই এভাবে নিউ জিল্যান্ডকে হারাবে বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা। যেদিন যে দল ভালো খেলবে, জয়তিলক তার কপালেই উঠবে। সেটাই হলো। নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে অনেক রেকর্ড নিজেদের নামে করল বাংলাদেশ।’
Discussion about this post