মনে মনে অনেক আগে থেকেই ফুঁসছিলেন ক্রিকেটাররা। লটারি পদ্ধতির অদ্ভুতুড়ে দলবদলের বিপক্ষে নিজেদের অবস্থানের কথা স্পষ্ঠ করেছিলেন দেশের ক্রিকেটাররা। শীর্ষ স্থানীয় কয়েকটি ক্লাবের কর্তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যই প্রিমিয়ার ক্রিকেটে এবার লটারি পদ্ধতিতে ক্রিকেটারদের দলবদলে একপ্রকার বাধ্য করেন। দেশের ক্রিকেট বন্ধ করে ক্রিকেট কর্তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলে সমর্থও হলেন। ক্রিকেট কর্তাদের এই ‘অক্রিকেটীয়’ আচরণের সমালোচনা করতে ক্রিকেটাররা পিছপা হলেন না। সবার আগে এই বিষয়ে মুখ খুললেন জাতীয় দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। তাদের সাফ জবাব-লটারির পদ্ধতির এই নতুন নিয়মের দলবদল ক্রিকেটারদের স্বাধীনতার পরিপন্থি। একজন ক্রিকেটার নতুন মৌসুমে কোন দলে খেলবে-সেটা যদি তারা নিজেরা বেছে না নিতে পারে, তাহলে সেটা তো পরাধীনতারই নামান্তর! লটারি পদ্ধতিতে দলবদলের কারণে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক কম অর্থে খেলতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ গেছে কমে। স্বাধীনভাবে পছন্দের দলে খেলার পথও রুদ্ধ। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলে গতকাল দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রেখেই লটারির দলবদলের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এ প্রক্রিয়ায় দলবদলের সঙ্গে বিপিএলের মিল খুঁজে পেয়ে যারপরনাই চিন্তিত। তার সংশয়মাখা উচ্চারণ-‘পারিশ্রমিক নিয়ে হয়তো বিপিএলের মতো ঝামেলাই পোহাতে হবে।’ নতুন নিয়মের দলবদলে এবার তার নতুন ঠিকানা কলাবাগান ক্রীড়া চক্র। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভিক্টোরিয়ার অধিনায়ককে এবার খেলতে হচ্ছে আগেরবারের মাঝারি শক্তির কলাবাগানে। তবে তা নিয়ে কোনো আফসোস নেই। পারিশ্রমিক পাওয়া নিয়ে রাজ্যের চিন্তা সাকিবের। বললেন, ‘আমার সন্দেহ আবার অর্থ পেতে ঝামেলায় পড়তে হবে। নিলাম পদ্ধতিতে দলবদল মোটেই ভালো নয়। আমার মনে হয় এর আগে যে পদ্ধতি ছিল, সেটা খুবই ভালো ছিল। জানি না কেন পরিবর্তন করা হল। বিপিএলের মতো এবার এখানেও (প্রিমিয়ার লিগে) টাকা-পয়সা নিয়ে সমস্যা হবে। আশঙ্কা নয়, আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে এমনই হবে।’ জাতীয় দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও লটারির দলবদলের বিরুদ্ধে। তার মূল্যায়ন-‘লটারির দলবদলে কোনো খেলোয়াড়ই সন্তুষ্ট নয়। এতে খেলোয়াড়ের দল বাছাইয়ের কোনো স্বাধীনতা থাকে না।’ মুশফিকের ধারণা, এ পদ্ধতিতে এটাই হবে শেষ দলবদল। আর সে কারণেই মুখে এমন সংলাপ-‘বোর্ড আমাদের কথা দিয়েছে লটারিতে দলবদল শুধু এ বছরই হবে। তাদের ওপর আমরা আস্থা রেখেছি এবং আশা করছি আগামী বছর থেকে এটা পরিবর্তন হবে। বেশ কিছু বড় দল ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়তে পারেনি। আবার অনেক দল ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়েছে। কাগজে-কলমে অনেক দল এখন ‘আন্ডারডগ’ মনে হলেও মাঠে হয়তোবা ভালো করবে। কারণ খেলা হয় মাঠে। তাই সব দলই চেষ্টা করবে তার সেরাটা দেওয়ার।’ দলবদল শেষ হলেও লিগ শুরু নিয়ে রয়েছে সংশয়। মূল ভেন্যু শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাঠ খেলার উপযোগী নয়। এছাড়া ক্লাবগুলোও প্রস্তুতির অজুহাত তুলে লিগ পেছানোর দাবিতে সোচ্চার। কিন্তু মুশফিক চান যত দ্রুত সম্ভব লিগ শুরু করতে-‘আমি চাই দ্রুত লিগ শুরু করা হোক। যেন আমরা কয়েকটা ম্যাচ খেলতে পারি।’
Discussion about this post