কি হাতিদের এতিমখানা!
সেটা আবার কি। এতদিন তো জানি যে হাতি থাকে পাহাড়ে, বনে বা চিড়িয়াখানায়। কিন্তু হাতিদের আবার এতিমখানাও আছে-এটা তো এই প্রথম শোনা। তাই ক্যান্ডি থেকে কলম্বো ফেরার পথে কৌতুহলটা বেড়ে গেলো।
পরিকল্পনায় যোগ হলো ‘হাতির এতিমখানা’ দেখে যাবো আমরা।
‘কাম অন ম্যান, ইউ আর গোয়িং টু লেট’ হোটেলের পোর্চে রাখা মাইক্রোবাসে উঠার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন কুইন্স হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার। ম্টোাসোটা ভদ্রলোক ঘেমে উঠছেন ক্যান্ডির সকালের রোদে। চ্যানেল আইয়ের স্পোর্টস রির্পোটার এহসান মোহাম্মদ তখন নিচে নামেননি। জেনারেল ম্যানেজার আরেকবার তাড়া দিলেন তোমরা কিন্তু সত্যিই দেরি করে ফেলছো। হাতির গোসল করার দৃশ্য মিস করবে কিন্তু। সকাল ১০টায় হাতির পাল একসঙ্গে বের হয়।
ক্যান্ডির হোটেল থেকে রওয়ানা হওয়ার ঘন্টা খানেক পরে যখন আমাদের মাইক্রোবাস যখন পিনাওয়ালায় ‘এলিফ্যান্ট অরফানেজের’ এসে থামলো তখনই মনে হলো হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার কেন তাড়া দিচ্ছিলেন। এতিখানা থেকে বের হয়ে হাতি রাস্তা পার হচ্ছে। যাচ্ছে পাশের ঝরনায়, গোসল সারতে। একটা দুটো নয় পুরো একপাল হাতি! বিশালদেহী হাতির ভিড়ে বাচ্চা হাতিও আছে। গুনতে গুনতে সংখ্যা ঠিক রাখতে না পেরে পাশের সুভেনির দোকানের বিক্রেতাই আমাদের গাইড বনে গেলেন।
এখানে এই এতিমখানায় ৮৪টি হাতি আছে।
আচ্ছা, তোমরা এই হাতির চিড়িয়াখানাকে এতিমখানা কেন বলছো?
বিক্রেতা সুরঙ্গা জানালÑআসলে এখানে যে হাতি গুলো তোমরা দেখছো তাদের অনেকেই আহত। কারো হয়তো এটা পা উড়ে গেছে মাইনের আঘাতে। কেউ বা অন্ধ হয়ে গেছে বোমার আঘাতে!
Ñবনের হাতিদের আবার বোমা আর মাইন দিয়ে কে মারে?
সুরঙ্গা জানালপাহাড়ে এবং জঙ্গলে এলটিটিইরা যে মাইন ও বোমা পুতে রেখেছে তাতেই এই হাতিদের এই অবস্থা। নিরীহ প্রানীগুলোতো আর কোনটা বোমা আর কোনটা মাইন বুঝতে তো পারে না। সেই বিস্ফোরনে আহত হাতিদের এখানে রাখা হয়। তাদের যত্মআত্তি নেয়া হয়। জীবনের বাকি সময়ট তাদের এখানেই কাটে।
হাতিদের গোসল করার দৃশ্য দেখতে হলে আড়াইশ রুপীর টিকিট কেটে এলিফ্যান্ট পার্কের ভেতর ঢুকতে হলো। পাশের ঝরনা দিয়ে গড়িয়ে পড়া পানিতে গোসল করছে একপাল হাতি। ছোট টিলা বেয়ে সেই ঝরনায় নামার সময়ে একটা হাতিকে দেখলাম অনেক খুড়িয়ে খুড়িয়ে নামছে।
কি ব্যাপার ব্যথা পেল নাকি?
ভুলটা ভাঙ্গলো একটু পরেই। এই হাতিটা হাঁটছে তিনপায়ে ভর করে। পেছনের একটা পা হাটুর নিচ থেকে কাটা।
এলটিটি’র মাইনের শিকার!
এলিফ্যান্ট পার্ককে ঘিরে পুরো এলাকার পর্যটন বানিজ্যে বেশ জমজমাট। হাতিদের গোসল এবং দুধ খাওয়ানোর এই দৃশ্য দেখতে রোজই ভিড় করে এখানে শতশত দেশী-বিদেশী পর্যটক। হাতির শুড় জড়িয়ে ধরে ছবি তোলা নিয়ে চারধারে দারুন উৎসাহ।
‘হাতিশালা’ থেকে বেরিয়ে আসার সিঁড়ি টপকানোর পথে হঠাৎ এক লোকের অনুরোধÑ স্যার, আই পামিস্ট, চেক ইউর লাক স্যার। বগলে কালো ব্যাগ এবং হাতে ম্যাগনিফাইং গ্লাস।
হাত দেখে অন্যের ভাগ্য বলে দিতে যার এত আকুতি সে নিজের ভাগ্যটাই কেন দেখে নেয় না!
Discussion about this post