এ মুহুর্তে আলোচিত এক নাম-তামিম ইকবাল। অবশ্য মাঠের নৈপুন্যে দিয়ে নয়, আম্পায়ারের সঙ্গে বাজে আচরন করে সমালোচিত হচ্ছেন আবাহনীর অধিনায়ক। প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচের সেই ঘটনায় এখন কাঠগড়ায় তামিম। দৈনিক কালের কন্ঠ এনিয়ে কথা বলেছে এই ক্রিকেটারের সঙ্গে। মঙ্গলবার প্রকাশিত সেই সাক্ষাতকার এখানে তুলে ধরা হল-
প্রশ্ন : গতকাল (পরশু) রাতে টিভির খবরে দেখেছেন নিজেকে?
তামিম ইকবাল : হুম, দেখেছি। দেখব আর কী, মাঠে তো আমিই করেছি। তবে টিভিতে দেখে বুঝতে পারলাম ঘটনার ইনটেনসিটি। মোটেও ভালো দৃশ্য নয়। বাসায় সাধারণত ক্রিকেট নিয়ে কথা-টথা বলি না। কিন্তু আমার স্ত্রী টিভিতে দেখে বলল, ‘এইটা কি করসো তুমি!’ ওই মুহূর্তে যেটা করেছি সেটা প্রচণ্ড আবেগ থেকে, অতটা বুঝতে পারিনি। রাতে টিভি দেখে নিজেরও একটু লজ্জা লেগেছে।
প্রশ্ন : লজ্জা লাগল কেন?
তামিম : যখন যে দলেরই হয়ে খেলি, তখন সে দলের জন্য শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি। একই ইমোশন কাজ করে। তবু এত দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি, আজকে ওই ঘটনা যদি জুনিয়র কোনো ক্রিকেটার করত, তাহলে ঠিক ছিল। কিন্তু প্রায় ১০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর এতটা করা ঠিক হয়নি। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকেই আপত্তি করে। কিন্তু আমি একটু বেশিই করে ফেলেছিলাম। আমি জানি, ওই মাঠে এমন অনেক ক্রিকেটার ছিল যারা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, অনুসরণ করে। ওদের কথা ভেবেই ঘটনাটার জন্য রিগ্রেট করছি আরো বেশি। আমার ওটা করা ঠিক হয় নাই। ওই সময়ে আমার প্রতিক্রিয়া ভালো হওয়া উচিত ছিল। আমি এখন দেশের সিনিয়র ক্রিকেটারদের একজন। মাশরাফি ভাই, মুশফিক, সাকিব, রিয়াদ ভাই— আমাদের মতো সিনিয়রদের বাড়তি দায়িত্ব আছে। আমরা যে যখন যে দলেই খেলি না কেন, আমাদের সবারই বাড়তি কিছু দায়িত্ব আছে। দুঃখজনকভাবে ওই ঘটনায় আমি আমার যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। বেশি করে ফেলেছি।
প্রশ্ন : ‘বেশি’ করলেন কেন? মূল ঘটনাটা আপনার কাছ থেকেই শুনতে চাচ্ছি।
তামিম : শোনেন তাহলে। ওটা প্রথম ঘটনা ছিল না। তান্না ভাইয়ের (ইমতিয়াজ হোসেন) বিপক্ষে জোরালো একটা আবেদনে আম্পায়ার আউট দেননি। যদিও বোলার তাসকিন খুব কনভিন্সড ছিল। আমি যেহেতু কাভারে ছিলাম, তাই আম্পায়ারের কাছে একবার ব্যাখ্যা চেয়েই নিজের জায়গায় ফিরে গেছি। কিন্তু রকিবুলের স্টাম্পিংটা পরিষ্কার আউট। সেটি আম্পায়ার না দেওয়ায় প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল। আমরা বেশি রান করিনি, ওটা টার্নিং পয়েন্ট হতে পারত। সে রাগ আরো বেড়ে যায়, আম্পায়ার যখন বলেন যে রকিবুল নাকি ক্রিজ থেকেই বের হয়নি। অথচ আপনারা সবাই দেখেছেন রকিবুল ডাউন দ্য উইকেটে গিয়েছিল। আমি নিজেকে ডিফেন্ড করছি না। আমি তো অন্যায় করেছিই। কিন্তু পরিস্থিতিটাও বিবেচনা করা দরকার। আমি একটা দলের ক্যাপ্টেন, আর ওই একটা মুহূর্তের ওপর শিরোপা রেসে এগিয়ে যাওয়া কিংবা পেছানোর সম্ভাবনা নির্ভর করছে। চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্টের ব্যবধান মাত্র ৩। একটি ম্যাচের ফলই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওই মুহূর্তে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি।
প্রশ্ন : কিন্তু সবাই তো আবাহনী-প্রাইম দোলেশ্বর ম্যাচ পণ্ডের সিংহভাগ দায় আপনার ঘাড়ে চাপাচ্ছে?
তামিম : ভাই, ম্যাচ তো আমি বন্ধ করিনি! স্বীকার করছি আমি বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু আম্পায়ার-খেলোয়াড় ঝগড়া তো নতুন কিছু নয়। আর আমি যে অন্যায় করেছি, সেটার শাস্তির বিধান তো আইনে আছে। খেলা বন্ধ করতে হবে কেন? আপনি কি কখনো দেখেছেন খেলোয়াড়দের ওপর রাগ করে আম্পায়ার মাঠ থেকে উঠে গেছেন?
প্রশ্ন : আম্পায়াররা তো উঠে গেছেন নিরাপত্তার অভাবে?
তামিম : কেউ কি উনাদের (আম্পায়ার) গায়ে হাত তুলেছিল, নাকি খেলোয়াড়রা বন্দুক তাক করেছিল? দর্শকরা কবে কাকে গালাগাল করেননি? তা-ও মানলাম যে আম্পায়ারদের গালাগাল সহ্য হয়নি। তাহলে দোলেশ্বরের একজন খেলোয়াড় যখন গালাগাল করছিল তখন কেন আম্পায়াররা নিরাপত্তার অভাব বোধ করেননি? আসলে এখন সবচেয়ে সুবিধা হলো আবাহনী সুবিধা নিচ্ছে—এটা প্রমাণ করা।
প্রশ্ন : তার মানে কি আবাহনী এবার অপপ্রচারের শিকার বলছেন?
তামিম : অপপ্রচার কিনা জানি না, তবে এটা কিন্তু ঠিক যে অনেক সিদ্ধান্ত আমাদের বিপক্ষেও গেছে। মানুষের ভুল হতেই পারে। কিন্তু সমস্যা হলো আবাহনীর পক্ষে গেলে সে সিদ্ধান্ত বায়াসড আর বিপক্ষে গেলে হিউম্যান এরর—এটা কেমন কথা? দোলেশ্বরের বিপক্ষে ম্যাচে তান্না ভাই আউট ছিলেন, রকিবুল আউট ছিল—এগুলা তো আর লিখবেন না (হাসি)।
প্রশ্ন : ওই ভুলগুলো লিখলেও কি পরশুর ম্যাচে তামিমের ছবি মুছবে?
তামিম : জানি, মুছবে না। চাই যেন মুছেও না যায়।
প্রশ্ন : মানে?
তামিম : আমি ছবিটা মনে পড়লেই রিগ্রেট করছি, নিজেকে বলছি ভবিষ্যতে এমন কিছু আর করব না। নতুনরা যেন বুঝতে পারে এমন আচরণ করা ঠিক না। শাস্তি হবে কি হবে না, জানি না। তবে আমি জানি আমি একটা ভুল করেছি। একজন সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে নিজের ভুল স্বীকার করা উচিত, তাতে নতুন ক্রিকেটাররা আরেকটু সতর্ক হবে।
Discussion about this post