হঠাৎ করেই বাসায় টিভি সাংবাদিকদের ডেকেছিলেন বিসিবি সভাপতি। সেখানে শুরুতেই অবশ্য তিনি একটা বিষয় পরিস্কার করে দেন-‘মুশফিককে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে এই বছর সরানোর কোন সুযোগ নেই।’
-কারণ?
নাজমুলের জবাব-‘আমাদের কাছে তারচেয়ে ভাল কোন বিকল্প নেই।’
মুশফিকের টেস্ট অধিনায়কত্বের ভালমন্দের বিষয়ে আরও বিস্তারিত ব্যাখায় বিসিবি সভাপতির সার্টিফিকেটটা এমন-‘এখন পর্যন্ত আমাদের যে কয়টা সাফল্য আছে তার বেশিরভাগই মুশফিকের অধিনায়কত্বে। তাই আমরা তার অধিনায়কত্ব নিয়ে চিন্তিত নই। তবে ব্যাটিংয়ে যেন আরও অবদান রাখতে পারে এবং সেটাতে (ব্যাটিংয়ে) যেন অসুবিধা না হয় সেজন্য উইকেটকিপিং এমনকি অধিনায়কত্বও যদি ছাড়তে হয় সেটা মুশফিককেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
মুশফিকের কৃতিত্বের প্রশংসা করতে কোন কার্পন্য করেননি বিসিবি সভাপতি। তবে সেই সঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক মুশফিক, ব্যাটসম্যান মুশফিক এবং উইকেটকিপার মুশফিক-একের মধ্যে তিনের এই মুশফিককে বিসিবি দেখতে চায় না। দায়িত্বের বোঝাটা কমাতে আগ্রহী বিসিবি।
-মুশফিকের কোন দায়িত্বটা বিসিবির কাছে বোঝা মনে হচ্ছে? এবার সেটা জানি।
নাজমুল হাসান পাপন এই প্রসঙ্গে বললেন-‘একটা মানুষের পক্ষে তিনটা জিনিষ করা কষ্টকর। একটা হচ্ছে সারাদিন ধরে উইকেটকিপিং করা। তারপর ব্যাটিংয়ে লম্বা ইনিংস খেলার দিকে মনোযোগ দেয়া। তারপর আবার অধিনায়কত্ব করা। শেষ টেস্টে উইকেটকিপিং করতে গিয়ে মুশফিক ইনজুরিতে পড়ে। এটা তার ব্যাটিংয়ে প্রভাব পড়েছে। ঠিকমতো সে ব্যাটিং করতে পারেনি। আমাদের জন্য ওটা অনেক বড় ক্ষতি। মুশফিকের মতো খেলোয়াড়ের যদি তিনটার মধ্যে কোনোটা ছাড়তে হয় তবে আমি পরিস্কার বলছি, ফাস্ট উইলবি উইকেটকিপিং। এখন মুশফিককেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে কোনটা ছাড়তে চায়, বা চায় না।’
মজার তথ্য হল-মুশফিককে কি ছাড়তে হবে আর কি ছাড়তে হবে না, এই বিষয়টা বিসিবি সভাপতি ঘটা করে মিডিয়াকে ডেকে নিয়ে জানালেও যিনি এই বিষয়ে সবচেয়ে ভাল উত্তর দিতে পারতেন, সেই মুশফিকের সঙ্গে কিন্তু এখনো এসব প্রসঙ্গে বিসিবি কোন আলাপই করেনি!
তবে মুশফিক বুদ্ধিমান। এখন তিনি নিশ্চয়ই জানেন তাকে কি সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
গতবছরের নয় মাসে ১৩টি ওয়ানডে এবং সাতটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচে হারের পর মুশফিকের অধিনায়কত্ব তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি ম্যাচ বাংলাদেশ প্রায় জয়ের অবস্থায় থেকেও হেরে যায়। পারিপার্শ্বিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিশ্বকাপের আগেভাগে মুশফিককে ওয়ানডে এবং টি-টুয়েন্টির অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। শুধু টেস্টে তিনি অধিনায়কত্বের দায়িত্বে বহাল থাকেন। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের পর তার টেস্ট অধিনায়কত্ব নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। এই টেস্টের সেরা একাদশ গঠন নিয়ে প্রকাশ্যেই টিম অপারেশন্স কমিটির চেয়ার নাঈমুর রহমান দুর্জয় সমালোচনা করেন। টসে জিতে বাংলাদেশের ফিল্ডিং নেয়াকেও অনেকেই এই টেস্টে দলের হারের কারন হিসেবে উল্লেখ করেন। চারদিনে ঢাকা টেস্ট শেষ হওয়ার পর মুশফিককে এই টসের বিষয়েও বড় ব্যাখা দিতে হয়েছিল। মুশফিক জানিয়েছিলেন-টস এবং একাদশ গঠনের সিদ্ধান্ত পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট মিলে নেয়া হয়। এটা কারো একার সিদ্ধান্ত নয়।
এতক্ষনে বোঝা গেল ঢাকা টেস্টে টসের সিদ্ধান্তটা বিসিবি সভাপতিকেও অবাক করেছিল। নাজমুল বিস্ময়টা গোপন রাখলেন না-‘টসে জিতে আগে কেন ফিল্ডিং নেয়া, এটা নিয়ে আমার মনেও প্রশ্ন উঠেছিল। আমি তখন লন্ডনে ছিলাম। সেখান থেকে আমি সাকিবকে ফোন করে এর কারণও জিজ্ঞেস করেছিলাম। সাকিব বলেছিল, সবাই মিলেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর পেস বোলাররা যদি শুরুতে চোট না পেত এবং আমরা যদি আগেভাগে ব্রেকথ্র“ পেতাম তাহলে পরিস্থিতি হয়তো বা ভিন্ন হতে পারত।’
উল্লেখ্য টেস্টে কিন্তু সাকিব নন, সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন তামিম ইকবাল। কিন্তু ঢাকা টেস্টের টসের বিষয়ে সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি অধিনায়ক বা সহ-অধিনায়কের কাছে খোঁজ না নিয়ে নিলেন ওয়ানডের দলের সহ-অধিনায়কের কাছে!
বিসিবি সভাপতির ভাষ্য জানাচ্ছে অনানুষ্ঠানিকভাবে মুশফিকের টেস্ট অধিনায়কত্ব চলতি বছরের জন্য আপাতত নিরাপদ।
তবে সেই সঙ্গে মুশফিক জেনে গেলেন বিসিবি তার বিকল্প খুঁজছে!
Discussion about this post