আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া সব ধরনের ক্রিকেটে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকায় বুধবার বিশেষ ট্রাইবুন্যাল এই শাস্তি ঘোষণা করে। সঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্যদিকে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় বিপিএলের দল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিহাব চৌধুরীকে ক্রিকেট সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড থেকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সঙ্গে জরিমানা ২০ লাখ টাকা।
তিনবছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের লু ভিনসেন্ট। ১৮ মাস নিষিদ্ধ দলটির শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটার কৌশল লোকোয়ারাচ্চি।
শাস্তিপ্রাপ্ত ক্রিকেটার-কর্মকর্তারা আগামী ২১ দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।
প্রথমে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ আমি ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত। এরপর চোখের পানি ফেলে এমন কান্ডের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি। তারপরও শাস্তি থেকে মুক্তি মিলল না। আশরাফুলের বিরুদ্ধে ৪টি অভিযোগ ছিল। সবকটিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করল মোহাম্মদ আশরাফুলকে। এর অর্থ ক্রিকেটার আশরাফুলের ক্যারিয়ার শেষ! কেননা, তার বয়স এখন প্রায় ৩০।
বিপিএল ফিক্সিং কেলেংকারি টাইমলাইন-
- বিসিবির দুর্নীতি দমন আইনের ২.১.১ ধারায় ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল ও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের ব্যবস্থাপক শিহাব চৌধুরী অভিযুক্ত হয়েছিলেন। ম্যাচের ফলকে অন্যায় ও অনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং ম্যাচ গড়াপেটার চেষ্টা ও ফলের ওপর প্রভাব ফেলা-সবই ওই দুর্নীতি দমন আইনের আওতায় পড়ে।
- আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের (আকসু) তদন্ত করে জানতে পারে গতবছর বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিপিএল) ইচ্ছাকৃতভাবে ম্যাচ দুটি হারার পেছনে নিজের ভূমিকা ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ম্যাচ গড়াপেটায় সম্পৃক্ত থাকার মধ্য দিয়ে আশরাফুলের ফিক্সিং কেলেঙ্কারি বের হয়ে আসে। তখনই বাংলাদেশ ক্রিকেটের কালো অধ্যায়সহ সাবেক কয়েকজন বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটারের নামও চলে আসে সামনে। তারা অবশ্য পরে নির্দোষ প্রমানিত হয়েছেন।
- গতবছর বিপিএল’র দ্বিতীয় আসর শুরু হয় ১৮ জানুয়ারি। তবে প্রথম আসরে ফিক্সিংয়ের গুঞ্জন থাকায় বিপিএল-এর দ্বিতীয় আসরকে বাজিকরদের কালো থাবা থেকে বাঁচাতে আকসু’র সাহায্য নেয় বিসিবি। আকসু ফাইনালের পরদিনই কয়েকটি ম্যাচ এবং ক্রিকেটারসহ কয়েকজনের আচরণ সন্দেহজনক বলে প্রতিবেদন জমা দেয়। বিশেষ করে ২ ফ্রেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ও চিটাগং কিংস’র ম্যাচ এবং ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ও বরিশাল বার্নার্সের ম্যাচ নিয়ে সন্দেহ দেখায় তারা।
- এই প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় অধিকতর তদন্তের জন্য আকসু’র সঙ্গে চুক্তি করে বিসিবি। আকসু তদন্ত শুরু করলে গতবছর ২৩ মে আকসু বাংলাদেশে এসে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলেন। তখনই আশরাফুল আকসু’র কাছে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
- ৩০ মে আশরাফুল নিজেই মিডিয়াকে জানান- শুধু বিপিএলই নয়, ম্যাচফিক্সিংয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচেও তিনি জড়িত! সঙ্গে বাংলাদেশের আরও সাবেক দুই অধিনায়ক খালেদ মাসুদ ও খালেদ মাহমুদ এবং স্পিনার মোহাম্মদ রফিকের নাম উঠে আসে।
- তখন তদন্তের জন্য ছ’বার বাংলাদেশ সফর করে আকসু’র প্রতিনিধিদল। আইসিসি’র বোর্ড সভায়ও অধিকতর তদন্তের পরামর্শ দেয়া হয়। বিসিবি তদন্ত অব্যাহত রাখার কথা জানালে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে আকসু। দ্বিতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল।
- গতবছরের ৪ জুলাই আশরাফুলকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে বিসিবি।
- সেদিনই ম্যাচ পাতানোয় জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চান বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়। সর্বকনিষ্ট টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান বলেন- ‘আমি আশা করি আমি যা করেছি তার জন্যে দেশ আমায় ক্ষমা করে দেবে।’
- এরপর ১৯ জানুয়ারি থেকে চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রিমিয়্রা লিগে (বিপিএল) ম্যাচ পাতানো তদন্তের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। তদন্তের বিস্তারিত রায় জানাল ট্রাইব্যুনাল।
- গতবছরের ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি আব্দুর রশিদকে ডিসিপ্লিনারি প্যানেলের চেয়ারম্যান নিয়োগ করে বিসিবি। এরপর ১০ নভেম্বর প্যানেলের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের দুর্নীতি বিরোধী ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন।
- তারাই পুরো ব্যাপারটা তদন্ত আর শুনানি করে এই রায় ঘোষণা করল।
- এইতো এ বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হন জাতীয় দলের সাবেক বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক, বাঁহাতি স্পিনার মোশাররফ হোসেন এবং পেসার মাহবুবুল আলম।
- ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গৌরব রাওয়াদ ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার ড্যারেন স্টিভেন্সও নির্দোষ প্রমাণিত হন।
- এ বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি তার সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।
Discussion about this post