ঢাকা টেস্টে জয়ের দরজা খোলা দু’দলেরই। জিততে বাংলাদেশের চাই ৮ উইকেট। আর অস্ট্রেলিয়া ১৫৬ রান করলেই জয়ের আনন্দে মাতবে। ম্যাচের এই যখন পরিস্থিতি তখন মঙ্গলবার মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন তামিম ইকবাল। সংবাদ সম্মেলনে সেই আলাপচারিতার চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হল।
জয়ের জন্য পুঁজিটা কম মনে হচ্ছে কি?
কম না। একটা দিন আগে হলেও ২৬০ রানে আমরা খুশি থাকতাম। কিন্তু আজকে আমাদের কাছে সুযোগ ছিলো। লিড বাড়িয়ে ৩০০এর বেশি করার। ওইদিক কিছুটা হতাশ। ৩০০ হলে সুবিধা হতো। উইকেটের কথা বলবো যে, এটা আনপ্রেডিক্টেবল। যে কোনো সময় যে কোনো কিছু হতে পারে। ধৈর্য্য ধরে আমাদের থাকতে হবে। আগের ইনিংসগুলোতে দেখছেন যে, একটা উইকেট পড়লে দুই তিনটা উইকেট পড়ে যায়। খুবই আনপ্রেডিক্টেবল। আমাদের এখন ভালো জায়গায় বল করতে হবে। আজও আমরা আরো জায়গায় বল করতে পারতাম। ওদের দুটি উইকেট পড়ার যদি আরো টাইট বল করতে পারতাম, দিনটা আরো ভালো হতে পারতো।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একই অবস্থা থেকে ম্যাচ জয়, অনুেপ্ররনা জোগাবে? সেঞ্চুরি মিসের হতাশা আছে?
ইংল্যান্ডের ম্যাচটার মতোই পরিস্থিতি। কাল আমাদের যে জিনিসটা করতে হবে, কিছুক্ষণ আগে বললাম, উইকেটটা আনপ্রেডিক্টেবল। ভালো জায়গায় বোলিং করে যেতে হবে। উইকেটের জন্য নয়। ডট বলের জন্য বল করি, চাপ দিতে থাকলে উইকেট আসবে। ১৫০ রান খুব বেশি মনে হচ্ছে না। উইকেটটাই এমন। যে দুজন আছে, তাদের একজন আউট হয়ে গেলে কী হবে— ইউ নেভার নো। এ রকম অনেক ম্যাচ দেখেছি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিও। ইতিহাস দেখে চিন্তা করলে চলবে না। কাজটা করতে হবে আমাদের। যে দুজন উইকেটে আছে, তারা ওদের সেরা ব্যাটসম্যান। যতো দ্রুত ওদের আউট করতে পারবো, ততো সুযোগ থাকবে আমাদের। দেখুন, আজ যেভাবে আউট হয়েছি, সেটা নিয়ে প্রশ্ন নিয়ে থাকা উচিত নয়। কারণ আমার নিয়ন্ত্রণে ছিলো না। প্রথম ইনিংসেরটাও। তবে আমি যেভাবে ব্যাটিং করেছি, সেঞ্চুরি পেলে অবশ্যই খুশি হতাম। যেভাবে ডিসিপ্লিনড ওয়েতে আমি ব্যাটিং করেছি, যতোটা কষ্ট করেছি, আমি একটা সেঞ্চুরি পেতেই পারতাম। কিন্তু এই উইকেটে কিছুই নিশ্চিত নয়।
দেশে খেলার সুবিধা..
আমাদের হোম অ্যাডভান্টেজ পাওয়া উচিত। কিন্তু এই ধরনের উইকেটে আমরা কতোটা খেলি? ডোমেস্টিকে? আমরা খেলি না। আমরা এ ধরনের উইকেটে খেলি আন্তর্জাতিক ম্যাচ এলে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ এলে আমাদের কন্ডিশনটাকে আমাদের জন্য অ্যাডভান্টেজ বলা হয়, আর বিদেশি দলের জন্য যা ডিসঅ্যাডভান্টেজ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা হোম কন্ডিশনে, ডমেস্টিকে আমরা ঘাসের উইকেট নিয়ে ব্যস্ত। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেখানে খেলি না। এই চিন্তাগুলো বদলাতে হবে। ঘাসের উইকেটে আমরা দেশের বাইরে খেলি। বছরে একটা ট্যুর করি। আমার কাছে মনে হয়, আমরা যদি এ ধরনের উইকেটে খেলতে চাই, বাংলাদেশের মাটিতে, তাহলে ডোমেসটিকেও এ ধরনের উইকেট করা উচিত। সব মাঠে না হলেও একটা দুইটা মাঠে; এটা হলে নতুনরা অভ্যস্ত হয়ে আসবে। স্পিনিং ট্র্যাক হলেই জাস্ট একটা স্পিনার এসে বল করে উইকেট পেয়ে যাবে না, এটারও একটা আর্ট আছে। যারা আছে, তাদেরও শিখতে সহজ হবে। ঘাসের উইকেটের চিন্তা বাদ দিয়ে এ সব নিয়ে যদি ভালোভাবে চিন্তা করে, তাহলে বেশি কাজে দেবে।
ক্লোজিং ফিল্ডারদের ক্যাচ মিস…
দুইটা জায়গায় খুবই ডিফিকাল্ট দুইটা জায়গায় ফিল্ডিং করা, স্লিপ আর সিলিতে। আমার কাছে মনে হয়, আমাদের সম্ভাব্য সেরা ফিল্ডাররা দাঁড়াচ্ছেন। ইমরুল অনেক দিন ধরেই সেখানে দাঁড়ায়, সৌম্যও অনেক দিন ধরে করতেছে। একটা দুইটা জায়গায় আসলে খুব সহজ ক্যাচও খুব কঠিন। আমার কাছে তা মনে হয়। তবে যারা আছে তারা নিজেদের সেরাটা দিচ্ছে। তারা শুধু ম্যাচে এসে দাঁড়ায় না। বরং অনুশীলনেও কষ্ট করে। আমাদের ক্রিকেট যেমন উন্নত হয়েছে, ক্যাচিংয়েও উন্নতি হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই।
ইমরুল ও সৌম্যর আউট প্রসঙ্গে
ইমরুলেরটা, দেখছেন যে একটা বল এক্সট্রা বাউন্স ছিলো। সৌম্যরটা, ও যদি বলটা বের করে ফেলতে পারতো, দিনটা ভালো হতো। কারণ ও টিকে গিয়েছিলো। ও যদি আরো থাকতে পারতো, আমাদের দিনটা ভালো হতো।
ক্যাচ মিস…
জাস্ট হাতে লেগে পড়ে গেছে বলে যে সেটা ক্যাচ ছিলো, সেটা এ রকম নয়। খুব কঠিন ছিলো। সৌম্যরটা খুব দ্রুত ছিলো। স্মিথ ও ওয়ার্নারের ক্যাচ দুইটা নিতে পারলে আমরা অবশ্যই আমরা খুব ভালো অবস্থানে থাকতাম। আর এখনকার যে পরিস্থিতি, এখনো তাদের ১৫৬ রান লাগবে, এই অবস্থায় আমরা তাদের কাজ কঠিন করে তুলতে পারি, আমার সহজও করে দিতে পারি। আমাদের চেষ্টা থাকবে, ওদের কাজটা কঠিন করে দেয়ার। ওদের এই দুইটা উইকেটের যে কোনো একটা যদি নিতে পারি, তাহলে ম্যাচটা আবার ওপেন হয়ে যাবে।
মুশফিকের আউট, সাব্বিরের রিভিউ না নেয়া…
আমি যেটা বললাম, মুশফিক-সাব্বির যেভাবে ব্যাটিং করছিলো, ওরা যদি ২৫-৩০টা রান যোগ করতে পারতো, তাহলে ৩০০ রানের লিড হতে পারতো। আর মুশফিকের আউটটা, ওর তো কিছু করার ছিলো না। সাব্বির কেনো রিভিউ নেয়নি— ওর কাছে মনে হয়েছিলো গ্লাভসে। প্রথম দিন মনে হয়েছিলো লাগে নাই, আসলে লাগছে। এটা তো ডিফিকাল্ট বলা যে, ও কী ভাবছে। প্রতিটি জিনিসই টার্নিং হয়ে যেতে পারে। আমরা চেষ্টা করবো কাল ভালোভাবে শুরু করবো।
সাকিবের আউট…
সাকিব রান নিতে চাচ্ছিলো। ও যদি আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষার করে শট খেলতো, তাহলে ভালো হতো। কারণ ও প্রথম ইনিংসে ভালো খেলছিলো। আরো কিছুক্ষণ থাকলে সেটা আমাদের জন্য ভালো হতো।
Discussion about this post