সিরিজ জয়ের উৎসবটা ঢাকার মিরপুরেই সেরে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। ভারতের বিপক্ষে দেশের মাঠে ৭ বছর পর ফের ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়! লক্ষ্য ছিল প্রতিবেশী দেশটিকে প্রথমবারের মতো হোয়াইট ওয়াশ করার। সেই মিশনে দল খেলতে যায় চট্টগ্রামে। কিন্তু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে মুদ্রার অন্য পিঠ দেখল টাইগাররা। সঙ্গী হলো হতাশা। সেই পুরোনো বাংলাদেশেরই দেখা মিলল।
দিবা-রাত্রির ম্যাচে শনিবার টস ভাগ্য ছিল লিটন দাসের পক্ষে। বাংলাদেশ অধিনায়ক প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন। তার সেই সিদ্ধান্তটা অযৌক্তিক বানিয়ে রান উৎসবে মেতে উঠে ভারত। সিরিজ হারিয়ে জেগে উঠে তারা। ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৪০৯ রান করে তারা। রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরি করেন ইশান কিষান। ৩ বছর পর শতরানের দেখা পান বিরাট কোহলি।
ভারতের রান উৎসবের মাঠে হতাশই করেছে বাংলাদেশ। কেউ দাঁড়াতে পারলেন না। যা একটু লড়াই করলেন সাকিব আল হাসান। অন্যরা ফ্লপ। আর দল ৩৪ ওভারে অলআউট হয়ে তুলে ১৮২ রান। ২২৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। তার পথ ধরে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ জিতল ২-১ ব্যবধানে।
টানা দুই ম্যাচ স্বপ্নের মতো কাটল। প্রথমটাতে রোমাঞ্চ ছড়ানো জয়। পরেরটিকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এক সাফল্য। সেই দলটাই কীনা এবার সেই পুরোনো চেহারায়। পথ হারালো ব্যাটিং বোলিং দুটোতেই। তার পথ ধরে চট্টগ্রামে বড় হার।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে দিবা-রাত্রির ম্যাচে শনিবার টস ভাগ্যটা সঙ্গে ছিল বাংলাদেশেরই। লিটন দাস শুরুতে নেন বোলিং। কিন্তু যৌক্তিক হয়নি টাইগার অধিনায়কের সিদ্ধান্ত। ঈশান কিষানের রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরি দল তুলে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৪০৯ রান। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়ে।
অথচ আগের দুই ম্যাচে বেশ লড়েছিল বাংলাদেশ। এবার ব্যাট-বল দুটোতেই ফ্লপ। সাকিব শুধু করলেন ৪৩ রান। ২৯ লিটন দাস, ২৫ রান ইয়াসির আলির ব্যাটে। মুশফিকুর রহিম (৭) ফের ব্যর্থ। আগের ম্যাচের হাফসেঞ্চুরিয়ান রিয়াদ করেন ২০।
এর আগে দুপুরে চট্টগ্রামের মাঠে রীতিমতো ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন ইশান কিষান। তার পথ ধরে অসাধারণ এই কীর্তি যে গড়ে ফেলেন। ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করাদের তালিকায় উঠে গড়লেন বিশ্বরেকর্ড। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ১২৬ বলে দ্বিশতক করেন ইশান। ইনিংসে তখন ৯ ছক্কার সঙ্গে ২৩ চার। এটিই ওয়ানডেতে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি। আগের সেরা ছিল ক্রিস গেইলের, ১৩৮ বলে।
ওয়ানডে ফরম্যাটে সপ্তম প্লেয়ার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন ইশান। সব মিলিয়ে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে নবম ডাবল সেঞ্চুরি।
ভারতের হয়ে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন ইশান। একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে এই সংস্করণে তিনটি দ্বিশতক রোহিত শর্মার। একটি করে বিরেন্দর শেবাগ ও শচিন টেন্ডুলকারের। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে শনিবার আরও কিছু রেকর্ড গড়লেন তিনি।
১২৬ বলে ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন ইশান। এর আগে ১৩৮ বলে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিজ গেইল। উইন্ডিজ কিংবদন্তির চেয়ে ১২ বল কম খেলে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন ভারতের এই ব্যাটার। টাইগার বোলারদের হতাশ করে ৪৯ বলে ফিফটি করেন তিনি। ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে খেলেন ৩৬ বল। ৮৫ বলে ১৪ চার ও ২ ছক্কায় ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়ে যান।
মুম্বাইয়ের ক্রিকেটার সেঞ্চুরি থেকে ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে মাত্র ৪১ বল খেলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ইনিংসে ছিল জিম্বাবুয়ের চার্লস কভেন্ট্রির। ২০০৯ সালে বুলাওয়াওতে ১৯৪ রান করেন তিনি। সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে ইশান খেলেন ২১০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। ১৩১ বলের ইনিংসে ছিল ২৪ চার ও ১০ ছক্কা।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ৩৪ বাউন্ডারি মারার রেকর্ডও এখন ইশানের। শেন ওয়াটসনের ২০১১ সালে ১৮৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পথে ১৫টি করে ছক্কা-চারে মোট ৩০ বাউন্ডারি হাঁকান।
ইশানের একার রানই তুলতে পারল না বাংলাদেশ। তবে স্বস্তি এটাই সিরিজ জিতল টাইগাররা। এবার টেস্ট মিশন। দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি চট্টগ্রামেই। শুরু ১৪ ডিসেম্বর। যেখানে দলকে নেতৃত্ব দেবেন সাকিব আল হাসান।
Discussion about this post