সাকিবকে নিষিদ্ধ করে বিসিবি এখন চুপচাপ। সাধারণত কাউকে শাস্তি দেয়া হয় তার শুদ্ধিকরনের কথা চিন্তা করে। কিন্তু বিসিবি সাকিবকে যে কঠিন শাস্তি দিয়েছে-তার ধরন, প্রকরন এবং মেয়াদ সবকিছুই থেকেই একটাই গন্ধ ছড়াচ্ছে-ঈর্ষা!
সাকিব যে ছয়মাস ঘরোয়া এবং আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ থাকবেন-সেসময়টায় তিনি কিভাবে কাটাবেন। কোথায় অনুশীলন করবেন। তিনি কোন কোচের অধীন থাকবেন। নিজের ফিটনেস ঠিক রাখতে কোথায় শরীরচর্চা করবেন? ইত্যাদি অনেক প্রশ্নের কোন উত্তরই নেই বিসিবির কাছে। বিসিবির ভাবখানা এমন-‘দিলাম একটা শাস্তি। এবার দেখ মজাটা!’
দেশের সেরা ক্রিকেটারের প্রতি বিসিবির এমন আচরণ মোটেও অভিভাবকসুলভ নয়। নতুন কোচ চন্দিকা হাতুড়েসিংহে এখন জাতীয় দলের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। তার কোচিংয়ে জাতীয় দল এখন অনুশীলন করছে। কিন্তু সাকিবের জন্য বিসিবি সামনের ছয়মাস কোন রোডম্যাপ তৈরি করে দিতে পারেনি। বিসিবি আগে জানিয়েছিল-কোচ দেশে ফেরার পর তিনিই সাকিবের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করবেন। কিন্তু দেশে ফেরার পর কোচ জানাচ্ছেন-‘সাকিবকে বিসিবি নিষিদ্ধ করেছে। আমিও বিসিবির চাকরি করি। তাই আমার কিছু করার নেই।’
তাহলে কি বাংলাদেশ দলে সাকিবের জন্য দরজা একেবারে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে বিসিবি? এই প্রসঙ্গে গাজী ট্যাংক ক্রিকেটার্সের স্বত্বাধিকারি লুৎফর রহমান বাদল বিসিবির সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন। বাদল বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন। সেখান থেকেই তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় জানান-‘সাকিবকে এই বোর্ড প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছে। একজন ক্রিকেটার কোথায় বোর্ডের কাছ থেকে নির্ভরতা খুঁজবে-তা না সাকিবকে এখন এই বোর্ড তাদের সবচেয়ে বড় শত্র“ ভাবতে শুরু করেছে। বোর্ড সভাপতি সেদিন সাকিবের শাস্তি ঘোষণার সময় যে মনোভাব নিয়ে কথা বললেন-সেটা দুঃখজনক। সাকিব আসলে বোর্ডের কিছু ব্যক্তির ঈর্ষার শিকার। বোর্ডের এই হিঃসুক ও পরশ্রীকাতর কর্তারা ভাবছেন-সাকিব ক্রিকেট খেলে এত টাকা আয় করছে। ওর টাকা উপার্জনের রাস্তা বন্ধ করতে হবে। সাকিবের পারফরমেন্সই প্রমান করছে-সে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার। তাহলে এই সেরা ক্রিকেটারকে ছাড়াই কেন আপনি কোন ম্যাচ খেলতে নামবেন। কেন তাকে সাসপেন্ড করবেন? আজ যে কর্মকর্তারা ডিসিপ্লিনের দোহাই দিচ্ছেন-তারা নিজেরা কতটুকু ডিসিপ্লিন মানছেন? সাকিব বিদেশের লিগে খেলে ভাল উপার্জন করায় অনেকের জ্বালা-পোড়া শুরু হয়ে গেছে। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে সাকিব ক্রিকেট বোর্ডের প্রাতিষ্ঠানিক এবং কিছু ব্যক্তির ঈর্ষার রোষানলে পড়েছে। বিদেশি লিগের ক্রিকেট কর্মকর্তারা পরিকল্পনা করেন-সাকিবকে কিভাবে তাদের দলের কাজে লাগানো যায়। কিভাবে তার সেরা পারফরমেন্স পাওয়া যায়-এসব নিয়ে ভাবেন। আর আমাদের দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা চিন্তা করেন-কিভাবে সাকিবের মতো দেশের সেরা সম্পদকে নষ্ট করা যায়।’
বাদল বলেন-‘আর মাত্র ৭ মাস পরে বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু সাকিব তো ছয়মাস ক্রিকেটে নিষিদ্ধ। এমনকি জাতীয় দলের সঙ্গেও সে অনুশীলন করতে পারবে না। তাহলে কি বিসিবির বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় সাকিব নেই! দেশের সেরা ক্রিকেটারকে ছাড়াই কি তাহলে বিশ্বকাপে খেলার পরিকল্পনা করছে বিসিবি? সাকিবকে ক্রিকেট মাঠে নিষিদ্ধ করে বিসিবি তো বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই বড় ক্ষতি করল! আমি সাকিবকে চিনি অনেকদিন আগে থেকে। আমার ক্লাবে সে খেলেছে। দলকে জিতিয়েছে। সাকিবকে অর্ন্তমুখী ধরনের ছেলে। নিজের খেলা এবং নিজের জগত নিয়েই থাকতে বেশি পছন্দ করে। কিন্তু যখন আপনি তাকে তার জগতের সুখ নষ্ট করে দেবেন-তখন তার কাছ থেকে নিশ্চয়ই ভাল কিছু আশা করতে পারেন না। সাকিব যদি ভুল কিছু করে থাকে-তবে ক্রিকেট বোর্ডের উচিত ছিল অভিভাবক হিসেবে তার পাশে দাড়নো। তাকে বোঝানো। কিন্তু বোঝানোর বদলে তাকে আপনি প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেললে তো হবে না। সাকিব সুপারস্টার। একজন সুপারস্টারকে কিভাবে আপনি নিয়ন্ত্রন করবেন। তার সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত-সেটা যদি না জানেন-তাহলে তো সমস্যা হবেই। সাকিবকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে ছয়মাসের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে বোর্ড নিষিদ্ধ করেছে। আমি তো মনে করি আমার ক্লাবে যাতে সাকিব এই মৌসুম ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে না পারে-সেজন্যই তাকে এই মনগড়া শাস্তি দেয়া হয়েছে। গত মৌসুমেও সাকিব আমার ক্লাবে খেলতে চেয়েছিল। কিন্তু বোর্ড হঠাৎ করে কোথা থেকে প্লেয়ার বাই চয়েজ নামের অদ্ভুত একটা নিয়ম আবিস্কার করে। ফলে সে এবং তামিম কেউ গেল মৌসুমে আমার ক্লাবের হয়ে খেলতে পারেনি। কিন্তু তারপরও আমার দল চ্যাম্পিয়ন হয়। এ বছর সাকিব-তামিম দুজনেই আমার ক্লাবে খেলতে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। সেটা বোর্ডের লোকজনও বেশ ভালই জানে। সাকিব যদি আবাহনীর খেলোয়াড় হত-তাহলে বিসিবি কি তাকে নিষিদ্ধ করার সাহস দেখাত?
Discussion about this post