ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
স্থগিত হয়ে গেল বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর। সোমবার মিরপুরের বিসিবি কার্যালয়ে এই তথ্য জানালেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সফর বাতিল ছাড়াও আরও কিছু প্রসঙ্গে কথা বললেন তিনি। তিনি যা বললেন তার চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো-
শ্রীলঙ্কা সফর প্রসঙ্গে…
ওরা যে গাইডলাইনটা দিয়েছে এই গাইডলাইনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা সম্ভব না। এরপরেও ওদের ক্রিকেট বোর্ড, ওদের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অনেক চেষ্টা করেছে। আমাদের মিনিমান রিকয়ারমেন্ট আমরা পাঠিয়েছিলাম। একটা ছাড়া বাকি সবগুলোতে তারা রাজি হয়েছে। আমাদেরকে নিতে পারবে বলে ওরা আশ্বস্ত করেছে। কিন্তু ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টিই আসল ছিল। এখানে আমি আপনাদেরকে বলি সাধারণত কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশন দুটি দুই জিনিস হিসেবে আমরা ধরি। যে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবে সে ঘর থেকে বের হতে পারবে না। কিন্তু কভিড পজিটিভ কেউ থাকলে আমরা তাকে পুরোপুরি আইসোলেশনে রাখি। মানে ঘর থেকে বের হতে পারবে না সে, শুধু বাসা থেকে নয়, ঘর থেকেই বের হবে না সে। শ্রীলঙ্কার এটা ১৪ দিনের আইসোলেশন। যেটাকে ওরা কোয়ারেন্টাইন বলছে, সেটা অন্যান্য জায়গা থেকে আলাদা। এটা পুরোপুরি আইসোলেশন। এই আইসোলেশনে ঘর থেকেই বের হওয়া সম্ভব না। এই অবস্থায় কোনো খেলোয়াড়ের পক্ষে ১৪ দিন থাকা কিংবা থাকলে শারীরিক অবস্থা তো পরের ব্যাপার, মানসিক যে কন্ডিশনটা হবে সেখান থেকে ফিরে আসতে তো অনেক সময় লাগবে। এই অবস্থায় খেলা সম্ভব না সেটি আমরা আগেই বলে দিয়েছি। এটি তো শুধু আমাদের জন্য না, যেকোনো পর্যটক যারাই ওদেশে যাচ্ছে সবার জন্য এটি করা হয়েছে। এখন এই পয়েন্টে তারা কিছু করতে পারেনি। মানে আমরা যেটা বলেছি সেখানে ওরা বলেছে এটা ওদের পক্ষে সম্ভব না। কারণ একেক দেশে একেকটা আইন, ওদের দেশে এটাই আইন। আমরা যেহেতু বলে দিয়েছি এই কন্ডিশনে খেলা সম্ভব না। কালকেই আমরা ওদের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছি এবং আজকেই জানিয়ে দিয়েছি যে এটা সম্ভব না, রিসিডিউল করতে হবে। পরিস্থিতি যখন ভালো হবে এবং এই ধরণের কন্ডিশন থাকবে না তখন আমরা যাব।
ফের কবে খেলা শুরু করবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা?
এখন শুধু ক্রিকেটই শুরু হবে বলে আমাদের ধারণা। এটা তো বললেই হবে না। আসলে করোনা পরিস্থিতি তো আমাদের দেশে একেবারে ভালো হয়ে যায়নি যে আমরা এখনই সব শুরু করতে পারবো। তবে আমরা খেলা (ক্রিকেট) শুরু করছি। আপাতত আমাদের এখন ক্যাম্প তো চলছেই। আবার শুরু হচ্ছে জাতীয় দলের ক্যাম্প। এরপর আবার প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে ওরা তিনটি। বিস্তারিত আপনারা পেয়ে যাবেন কবে হবে সেগুলো। প্রস্তুতি ম্যাচের পর পরই আমরা ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু করতে যাচ্ছি। ঘরোয়া ক্রিকেটের দুটি ভাগ আছে। একটি হচ্ছে আমরা চিন্তাভাবনা করছি যে পাঁচ-ছয়টি দল নিয়ে প্রথমে খেলার জন্য। ছয়টি দল হলে ৯০ জন খেলোয়াড়। যদি এতজন খেলোয়াড় একসঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে সেটা ভালো হবে। মানে যত বেশি খেলানো যায় তত ভালো। ওদেরকে নিয়ে যদি আমরা একটা টুর্নামেন্ট করতে পারি, এটা কর্পোরেট লিগ হতে পারে বা বিসিবির দল হতে পারে। এমন একটা চিন্তা ভাবনা করছি। আবার একটা কথা হয়েছে যে এমনও হতে পারে আমাদের জাতীয় দল, এইচপি, অনূর্ধ্ব ১৯ ওদেরকে নিয়ে আমরা তিন-চারটি দল বানিয়ে ফেলতে পারি। এদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা হতে পারে, কিংবা ওদের মধ্যে একটা টুর্নামেন্ট আয়োজন করলাম। যেখানে বিসিবি স্পন্সর থাকবে। এটাও হতে পারে। এই দুটির একটি আমরা করে ফেলবো। এটা নিয়েই আজকে আলাপ হয়েছে। এর বাইরে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে লিগের খেলাগুলো চালু করে দিব। এটা আজকেই বলে দিতে পারতাম, তবে এখানেই শেষ না। আমি বলেছি ওদেরকে প্রস্তাব দিতে। খেলা তো শুরু করা যায় এটা তো সমস্যা না। তবে কিভাবে আমরা এই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ওদেরকে নিরাপদ রেখে আমরা খেলাটি পরিচালনা করতে পারি সেই প্রস্তাবটি দিতে বলেছি। এই নিয়ে কিছু সাজেশনও দেয়া হয়েছে, ওরা দুই এক দিনের মধ্যেই মনে হয় জানাতে পারবে।
শ্রীলঙ্কা সফরের ব্যাপারে আর সুযোগ আছে কি?
আমার মনে হয় আর কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছি রিসিডিউল করতে। এর মানে এটা নিয়ে আর সময় নষ্ট করার দরকার নেই। ওরা যদি পারতো তাহলে এর মধ্যেই পারতো। বেশ কিছুদিন সময় চলে গেছে এর মধ্যে। আমরা শুধু বলেছি রিসিডিউল করতে, এটা এভাবে সম্ভব না। যখন পরিস্থিতি ভালো হবে, এমন কন্ডিশন যখন থাকবে না তখন আমরা খেলতে যাবো।
খেলা কিভাবে মাঠে ফেরানো হবে এবং ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে…
খেলা তো চলবে, এদের তো এখনও ১৫ দিনের ক্যাম্প বাকি আছে। এই অনুশীলনটা চলবে। এরপর খেলা হবে। তিনটি অনুশীলন ম্যাচ হবে ওদের মধ্যেই। এরমধ্যেই শুরু হবে যে টুর্নামেন্টটি আমরা করতে চাচ্ছি সেটা। এটা যে নামেই হোক। জাতীয় দল, এইচপি, অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটার নিয়ে যদি আমরা টুর্নামেন্ট করতে পারি তাহলে সেটি দিয়েই ক্রিকেট শুরু হবে। এটা খুব সম্ভবত এখন পর্যন্ত যা বুঝতে পারছি টি-টোয়েন্টিই হবে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের যে লিগ, প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী, প্রিমিয়ার লিগ যা যা বাকি আছে সেগুলো শেষ করে ফেলা হবে। এটার প্রস্তুতির জন্যই একটু সময় নিচ্ছি। যেন খেলার মধ্যেই আমরা থাকি। খেলা চালু করা তো গুরুত্বপূর্ণ না, কথা হলো আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো কিভাবে? খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেকারণে আমি বলেছি ক্লাবগুলোকে ডাকতে, খেলোয়াড়দের সঙ্গে বসতে এবং আমাদেরকে একটা পরিকল্পনা দিতে। আমাদের কাছে যদি মনে হয় সেই পরিকল্পনা মোটামুটি সন্তোষজনক হয়, তাহলে আমরা দ্রুত খেলা চালু করে দিব।
স্থগিত লিগগুলো আয়োজন করা হবে?
চেষ্টা তো করবো যেটা স্থগিত আছে সেটা আয়োজন করার। এরপর আগামী বছরেরটা আগামী বছর হবে, দুটিই করার চেষ্টা করবো। এই প্রস্তাবগুলোই দিচ্ছি যে দুটি করা সম্ভব কিনা। আমাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা হচ্ছে দুটোই করা। যদি না হয় তাহলে এবারের যেটা বাকি সেটা সামনের বছর হবে, সামনের বছরেরটা হবে না। সবকিছু এখন আগাম বলাটা কঠিন। পরিস্থিতি কি হবে সেটার উপর নির্ভর করছে সবকিছু। আমরা যদি অন্যান্য দেশের দিকে তাকাই বিশেষ করে ইউরোপ-যতদিন যাচ্ছে সেখানকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। ওরা বলছে সামনে আরো খারাপ হবে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের এখানে কি হবে আসলে আমরা তো বলতে পারছি না। কাজেই আমাদেরকে সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে। আমাদের ঢিলেমি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
চার দলীয় টুর্নামেন্টটি কবে?
এটা চার হতে, পারে, পাঁচ হতে পারে, তিন হতে পারে।
Discussion about this post