সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তখন নিস্তব্ধতা। জয়ের জন্য দরকার মাত্র দুই রান, হাতে একটি উইকেট, বল দুটো। পায়ে ব্যথা, ব্যাট হাতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ক্রিজে দাঁড়িয়ে আব্দুল গাফফার সাকলাইন। হয়তো ভাবলেন, দৌড়ানোর চেয়ে একটিই শটে কাজ শেষ করা ভালো। রিপন মণ্ডলের ইয়র্কার লেন্থের বলটাকে তুলে মারলেন মিড অফের ওপর দিয়ে-চারের দারুণ লফটেড শটে রংপুরের জয় নিশ্চিত। সঙ্গে সঙ্গে মাঠে ছড়িয়ে পড়ে উল্লাস, ড্রেসিংরুম থেকে ছুটে আসে সতীর্থরা।
এক বল হাতে রেখে রংপুর বিভাগের ১ উইকেটের জয় যেন হয়ে রইল এবারের জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে নাটকীয় অধ্যায়। ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রেখে কোয়ালিফায়ারে জায়গা করে নিয়েছে রংপুর বিভাগ।
ঢাকা টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ১২৩ রান তুলেছিল। ইনিংসের শুরু থেকেই তারা বিপাকে পড়ে যায় নাসুম আহমেদ ও আবু হাশিমের স্পিনে। ২৪ রানে ৪ উইকেট হারানো ঢাকাকে একা কাঁধে তুলে নেন মোসাদ্দেক হোসেন। তাঁর ব্যাটে আসে ছয়টি ছক্কায় সাজানো ৩৬ বলে ৬১ রানের অসাধারণ ইনিংস। তবু দলকে লড়াইয়ের মতো স্কোরে থামতে হয় ১২৩ রান।
রংপুরের ইনিংসও শুরু থেকেই টালমাটাল। নাঈম ইসলাম, নাসির হোসেন, আল মামুন-সবাই ব্যর্থ। ৫২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে যখন ম্যাচ প্রায় ঢাকার দিকেই হেলে পড়েছে, তখন হাল ধরেন অধিনায়ক আকবর আলি ও নাসুম আহমেদ। দুজনের জুটি রংপুরের জন্য যেন আশার আলো।
একদিকে নাসুমের শান্ত ইনিংস, অন্যদিকে আকবরের তেজি ব্যাটিং-দুজন মিলে ৬২ রানের জুটি গড়ে ফেলে দেন ম্যাচের গতি। শেষ দিকে আকবর ২৭ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যান। শেষ ওভারের প্রথম বলে স্কুপ করে চার মেরে সমীকরণ সহজ করেন, কিন্তু পরের বলেই আউট। তখনো ম্যাচে রয়ে গেছে টানটান উত্তেজনা।
শেষ পর্যন্ত মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা আহত সাকলাইনই হয়ে যান রংপুরের অঘোষিত নায়ক। তার সেই এক শট শুধু ম্যাচ জেতায়নি, রংপুরের ফাইনাল স্বপ্নও বাঁচিয়ে রেখেছে। আকবর আলি হয়েছেন ম্যাচসেরা, আর রংপুর বিভাগ পা রাখল কোয়ালিফায়ারে। অন্যদিকে, মোসাদ্দেকের অসাধারণ ইনিংস সত্ত্বেও বিদায় নিতে হলো ঢাকা বিভাগকে-একটি হারের বেদনাময় স্মৃতি নিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ঢাকা: ১২৩/১০ (মোসাদ্দেক ৬১, শুভাগত ১৫; নাসির ২/২০, নাসুম ২/২৬)
রংপুর: ১২৬/৯ (আকবর ৪৪, নাসুম ২৬; মাহফুজুর ৩/১৪, নাজমুল ২/২২)
ফল: রংপুর ১ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: আকবর আলি
Discussion about this post