বাংলাদেশ ক্রিকেটে নিবেদন, পরিশ্রম আর একাগ্রতার প্রতীক হিসেবে যে নামটি বারবার উচ্চারিত হয়, তিনি মুশফিকুর রহিম। দুই দশকের লম্বা পথচলায় নিজের জায়গা, নিজের সাফল্য-কেউ তাকে উপহার দিয়ে দেয়নি; তিনি অর্জন করেছেন ঘামে, শৃঙ্খলায়, আর নিজের ওপর অবিশ্বাস্য কঠোরতার মাধ্যমে। শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করার পর সংবাদ সম্মেলনে সেই পথচলার নেপথ্য গল্পই তুলে ধরলেন ৩৬ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার-ব্যাটার।
‘আমি আসলেই একজন বোরিং মানুষ’-এভাবেই নিজের কথা শুরু করেন মুশফিক। তার মতে, প্রতিদিন একই রুটিনে কাজ করা, একই অনুশীলন, একই প্রক্রিয়া-এটাই তাকে টিকিয়ে রেখেছে এত বছর। বয়স বাড়লেও সেই একাগ্রতায় এক বিন্দু ভাটা পড়েনি। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন একই জিনিস করি। বয়স যাই হোক, আমি একইভাবেই কাজ করে যেতে পারি। প্রফেশনালিজমে আমার কোনো ছাড় নেই। সফলতা আমার হাতে নেই, আমি শুধু প্রচেষ্টা আর সততার জায়গাটাই ধরে রাখি।’
লর্ডসে অভিষেকের পর দুই দশক পার করে আজ তিনি বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলেছেন। আর তাও সেঞ্চুরি করে। প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানের ইনিংস খেলেই জায়গা করে নিয়েছেন ইতিহাসের ১১ জন ক্রিকেটারের সেই এলিট তালিকায়, যারা শততম টেস্টে শতকের কীর্তি গড়েছেন। তবে এত বড় অর্জনেও তার সরলতা লুকিয়ে ছিল না। বললেন, ‘আজ মাঠে নামার সময় মনে হচ্ছিল যেন প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছি। আমার জন্য প্রতিটি টেস্টই বিশেষ। আজও উত্তেজনা ছিল ঠিক প্রথম দিনের মতো।’
তার সাফল্যের খুঁটি যে কঠোর অনুশীলন-তা সবাই জানে। কিন্তু সেই অনুশীলনের ফলে পরিবারকে কতটা সময় দিতে পারেন না, তা প্রকাশ করতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে ওঠেন তিনি। স্ত্রীকে নিয়ে বলেন, ‘আমার জন্য সবচেয়ে বড় ত্যাগ করেছে আমার স্ত্রী। অন্যদের তুলনায় আমি বেশি অনুশীলন করি, বেশি বাইরে থাকি। ঘরে শান্ত পরিবেশ না থাকলে কখনোই এত কাজ করা সম্ভব ছিল না।’
দুই সন্তানের বাবা মুশফিক। কিন্তু নিজের ক্রিকেটকে টানটান রাখতে কখনও রাতজাগা বা ক্লান্তিতে পুড়তে হয়নি-এ কৃতিত্ব পুরোটা স্ত্রীকে দেন তিনি, ‘বাচ্চারা ঘুমায় না, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার কখনও নির্ঘুম রাত কাটেনি। সে সারারাত জেগেছে, আমাকে কখনো টেনশনে ফেলতে দেয়নি। তাই আমি সবসময় তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
ক্যারিয়ারের দীর্ঘ যাত্রা তাকে তৃপ্ত করেছে বলেও জানালেন তিনি। তবে নিজের সাফল্যে থেমে যেতে চান না; বরং ভবিষ্যতের জন্য রেখে যেতে চান উত্তরাধিকার, ‘নিজেকে নিয়ে আমি খুশি। দেশের হয়ে প্রতিটি টেস্ট আমার জন্য গর্বের। আমি যখন থাকব না, তখন যেন এক–দুইজনকে তৈরি করে যেতে পারি-এটাই চেষ্টা।’









Discussion about this post