আজ ২৪ এপ্রিল, শচীন টেন্ডুলকারের জন্মদিন! ব্যাটসম্যান ১৯৭৩ সালের আজকের এই দিনে ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এরপর সময়ের পথ ধরে হয়ে উঠেন কিংবদন্তি। জন্মদিনে চলুন আরেকটু জেনে নেই শচীনকে।
শচীন দেব বর্মণের দারুণ ভক্ত
শচীন টেন্ডুলকারের জন্ম ২৪ এপ্রিল ১৯৭৩ সালে, মুম্বাইতে। মা রজনী দেবী চাকরি করতেন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে। বাবা রমেশ টেন্ডুলকার একজন প্রখ্যাত মারাঠি ঔপন্যাসিক। রমেশ নিজে ছিলেন প্রখ্যাত সুরকার শচীন দেব বর্মণের দারুণ ভক্ত। তাই প্রিয় সুরকারের সঙ্গে মিল রেখে নাম রাখেন ছেলের। চার ভাইবোনের মধ্যে শচীন দুই নম্বর। দুই ভাই অজিত ও নিতিন। একমাত্র বোনের নাম সবিতা। চার ভাইবোনের মধ্যে বাবা-মায়ের কাছে শচীন ছিলেন সর্বাধিক আদুরে।
ছেলেবেলা এবং বিয়ে
ছেলেবেলায় ছিলেন ডানপিটে আর বড় হয়ে ঠিক তার বিপরীত। পুরোপুরি শৃঙ্খলিত জীবনে অভ্যস্ত করে নেন নিজেকে।
মাত্র সাড়ে বাইশ বছর বয়সে অঞ্জলিকে বিয়ে করেন। একে অন্যকে পছন্দ করতেন তারা। অঞ্জলিকে যখন বিয়ে করলেন তখন শচীনের চেয়ে তার বয়স প্রায় ছয় বছর বেশি। মানে টেন্ডুলকার সাড়ে বাইশ, অঞ্জলির প্রায় আটাশ! অঞ্জলি পেশায় ডাক্তার। বাবা আনন্দ মেহতা গুজরাটি শিল্পপতি। আর মা ব্রিটিশ সমাজকর্মী আনাকেল মেহতা। এক ছেলে এবং এক মেয়ের বাবা শচীন। মেয়ে সারার বয়স চৌদ্দ এবং ছেলে অর্জুনের বয়স বারো বছর।
তার স্কুল
মুম্বাইয়ের শারদাশ্রম বিদ্যামন্দিরে ভর্তি হওয়ার পরই ক্রিকেট ব্যাট পুরোপুরি হাতে তুলে নেন। এ ক্ষেত্রে প্রেরণা ছিলেন বড় ভাই অজিত। শচীনের মধ্যে অসাধারণ ক্রিকেট প্রতিভা দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৮ সালে এ স্কুল ক্রিকেটেই বিরল এক সাফল্য পান শচীন। এ বছর যে কয়টি ইনিংস খেলেন তার সবটিতেই সেঞ্চুরি হাঁকান। বন্ধুত্ব হয় ক্লাসমেট বিনোদ কাম্বলির সঙ্গে। লর্ড হ্যারিস শিল্ড ইন্টার স্কুল ক্রিকেটে বন্ধু কাম্বলির সঙ্গে জুটি বেঁধে ৬৬৪ রান করেন। হইচই পড়ে যায় সারা ভারতে।
প্রথম কোচ
শারদাশ্রম স্কুলে তার প্রথম কোচ ছিলেন রামাকান্ত। স্কুলে এমআরএফ ফাউন্ডেশনের প্রথম ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন ফাস্ট বোলিংয়ে। ওই ক্যাম্প পরিচালনা করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান বিখ্যাত ফাস্ট বোলার ডেনিস লিলি। কিন্তু নিজের উচ্চতার কারণে ফাস্ট বোলিং নয়, ব্যাটিংয়ে মনোযোগের উপদেশ দেওয়া হয় তাকে। এরপর থেকে নেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাটিং প্রাকটিস করতেন শচীন। নেটে তিনি এতটাই ভালো করতে থাকেন যে, কোচ রামাকান্ত নিজেই অবাক। স্টাম্পের ওপর এক রুপির কয়েন রাখতেন কোচ রামাকান্ত। বলে দিতেন শচীনের উইকেট যে নেবে সেই পাবে ওই কয়েন। ১৯৮৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ডাক পান জাতীয় দলে।
২০০ টেস্টে শচীনের রান ১৫,৯২১। সেঞ্চুরি ৫১। পাশাপাশি ৪৬৩ ওয়ানডেতে ৪৯ সেঞ্চুরিসমেত রান ১৮,৪২৬। টেস্ট এবং ওয়ানডের সর্বাধিক রান ও সেঞ্চুরির সব রেকর্ড রয়েছে তার দখলে।
তার যতো স্বীকৃতি-
* ভারতের একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ব্র্যাডম্যান ইলেভেনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
* ২০১০ সালের ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার হিসেবে আইসিসির স্যার গারফিল্ড সোবার্স ট্রফি জেতেন।
* ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ জেতেন ২০০৮ সালে।
* ২০০৪ ও ২০০৭ সালে আইসিসির বিশ্ব ওয়ানডে একাদশে স্থান পান।
* ২০০৫ সালে খেলাধুলার জন্য রাজীব গান্ধী পুরস্কার পান।
* ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপে হন প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট।
* ২০০১ সালে পান মহারাষ্ট্র প্রদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার মহারাষ্ট্র ভূষণ অ্যাওয়ার্ড।
* ১৯৯৯ সালে পান ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী।
* ১৯৯৭-৯৮ সালে ভারতে খেলাধুলায় অবদান রাখার জন্য ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার রাজীব গান্ধী খেলরত্ন
* ১৯৯৭ সালে হন উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার।
* ১৯৯৪ সালে খেলাধুলায় অসামান্য অবদান রাখায় ভারত সরকারের অর্জুন অ্যাওয়ার্ড প্রদান।
* ২০১০ সালের অক্টোবরে খেলাধুলায় অসাধারণ কৃতিত্ব রাখার জন্য লন্ডনে দ্য এশিয়ান অ্যাওয়ার্ডসের পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড পান।
* ২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি ‘ক্যাস্ট্রল ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’ হন।
* ২০১৩ সালে পান ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ভারতরত্ন।
Discussion about this post