ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
টানা সাত ম্যাচ জিতে রীতিমতো উড়ছিল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। রোববার শক্তিশালী আবাহনীর বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং-বোলিংয়ে মাঠের ক্রিকেটেও সেই ছাপ রাখল নারায়ণগঞ্জের দলটি। শুভাশিষ রায়, মোহাম্মদ শহিদ ও নাবিল সামাদের অসাধারণ বোলিংয়ে আগেই লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যেই পেয়ে যায় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। পরে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার মেহেদি মারুফ ও মোহাম্মদ নাঈমের সৌজন্যে দারুণ শুরু পায় দলটি। শেষ পর্যন্ত তাদের দেখানো পথে হেঁটে সহজেই ৬ উইকেটে জিতে যায় লিজেন্ডসরা। তাতে আবাহনীর জয়রথ থামিয়ে দলটি চলতি লিগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেল।
মিরপুর শের-ই-বাংলার উইকেটে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই রীতিমত রান উৎসব হয়েছে। কিন্তু রোববার সেখানেই শক্তিশালি আবাহনী লিমিটেডকে বল হাতে বড় পরীক্ষায় ফেলেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের পেসার শুভাশিষ রায় ও মোহাম্মদ শহীদ। পরে তাদের দেখানো পথে হাঁটেন স্পিনার নাবিল সামাদ। শেষ পর্যন্ত তাদের নৈপুণ্যে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল আগে ব্যাট নেমে গুটিয়ে যায় ৩৯.১ ওভারে মাত্র ১২২ রানে। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৪০ রান করেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এদিকে ৩৮ রান আসে মোহাম্মদ মিথুনের ব্যাট থেকে। জবাব দিতে নেমে মেহেদির (৫৯) ব্যাটে ভর করে ওভার আর ৬ উইকেট হাতে রেখে ২৬.৫ ওভারেই সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় রূপগঞ্জ। তাতে আকাশি-নীল জার্সিধারীদের পেছনে ফেলে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে নাঈম ইসলামের দল।
রোববার টস জিতে আগে বল হাতে মাঠে নামে রূপগঞ্জ। শুরুতেই আবাহনীর শক্তিশালি টপ অর্ডার গুড়িয়ে দেন পেসার শুভাশিষ রায়। এরপর মোহাম্মদ শহীদ ডিপিএল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের মিডেল অর্ডার ধসিয়ে দেন। শেষ দিকে নাবিল সামাদ, মুক্তার আলি ও ঋষি ধাওয়ান বড় পরীক্ষায় ফেলে মাশরাফি বিন মর্তুজার দলকে অল্প রানে অলআউট করে দেন।
আগের ম্যাচে ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আবাহনীকে জেতানো জহুরুল ইসলাম শনিবার সাজঘরে ফিরেন ইনিংসের প্রথম বলেই। শুভাশিষ রায়ের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন এ ডানহাতি। এরপর নিজের দ্বিতীয় আর দলের তৃতীয় ওভারেই আকাশি-নীল শিবিরে দ্বিতীয় ধাক্কা দেন সেই শুভাশিষ। এবার তিনি উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন নাজমুল হোসেন শান্তকে। ৯ বলে ৬ রান করে ফেরেন শান্ত। অন্যদিকে উইকেট না পেলেও দারুণ মাপা বোলিং করতে থাকেন মোহাম্মদ শহীদ। পরপর দুই ওভারে দুইটি বাউন্ডারি মেরে পাল্টা আক্রমণের আভাস দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। তবে তাকে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে শুভাশিষ। অযথাই অফস্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে গিয়ে এ বাঁহাতি উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২২ বলে ১৪ রান করে।
ইনিংসের ১০ম ওভারে উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন শহিদও। ভারতীয় রিক্রুট প্রিয়াঙ্ক ক্রিত পাঞ্চালকে সাজঘরে ফেরান এ ডানহাতি পেসার। সৌম্যের মতোই অফস্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর নিজের পরের ওভারে তথা ইনিংসের ১২তম ওভারে ফের আঘাত হানেন শহিদ। এবার তিনি সাজঘরের পথ দেখান সাব্বির রহমানকে। শহীদের বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই বোল্ড হয়ে যান সাব্বির। ১২ ওভার শেষে আবাহনীর সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ২৯ রান।
দ্রুত উইকেট হারালেও ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মোহাম্মদ মিথুন। তারা গড়েন ৪৩ রানের জুটি। এরপরই মিথুন ফিরে যান নাবিল সামাদের ঘূর্ণিতে। বেশিক্ষণ টেকেননি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মেহেদি হাসান মিরাজও। তবে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নিয়ে নবম উইকেটে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। কিন্তু তাকে বেশি সুবিধা করতে দেননি লিজেন্ডসদের বোলাররা। যে কারণে ১২২ রানেই গুটিয়ে যেতে হয় দলটির।
রূপগঞ্জের হয়ে ৮ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন শুভাশিষ রায়। এদিকে সমান ওভারে মাত্র ১১ রানে ২টি উইকেট পকেটে পুরেছেন মোহাম্মদ শহিদ। এছাড়া ১০ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন নাবিল সামাদ। ১টি করে উইকেটের দেখা পেয়েছেন ঋষি ধাওয়ান ও মুক্তার আলি।
রান তাড়ায় দুই ওপেনার মেহেদি মারুফ ও মোহাম্মদ নাঈম রূপগঞ্জের দারুণ শুরু এনে দেন। ১০.৪ ওভারেই তারা দলীয় স্কোর বোর্ডে যোগ করেন ৬২ রান। এরমধ্যে নাঈমের অবদান ছিল ২০ বলে ২ চারে রান। এরপেরই মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে অতিরিক্ত খেলোয়াড় জাহিদ জাভেদকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
নাঈম ফিরে গেলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে দুর্দান্ত খেলেন মেহেদি মারুফ। অন্যপ্রান্তে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা মুমিনুল হক। তাদের জুটির রসায়নে এক পর্যায়ে ৭৮ বলে ৫ চার ও ১ ছয়ে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মেহেদি।
হাফসেঞ্চুরির পর কিছুটা ধীরে খেলেন মেহেদি। অন্যদিকে মুমিনুলও সতীর্থের দেখানো পথে হাঁটেন। এক পর্যায়ে তারা ২১.৫ ওভারেই দলীয় রানকে পৌঁছে দেন একশোতে। এর কিছুক্ষণ পরই দূর্ভাগ্যজনক রান আউটের ফাঁদে পড়েন মুমিনুল। তার আগে এ বাঁহাতি করেন ৩৫ বলে ১ চারে ১৭ রান।
মুমিনুল ফেরার চার বল পরই সাজঘরের পথে হাঁটেন মেহেদি। ইনিংসের ২৪তম ওভারের নাজমুল ইসলামের তৃতীয় বলে বোল্ড হওয়ার আগে এ ডানহাতি করেন ৮৫ বলে ৭ চার ও ১ ছয়ে ৫৯ রান। এর কিছুক্ষণ পরই সাব্বির রহমানের শিকারে পরিণত হন জাকের আলি। তিনিও ফেরেন বোল্ড হয়ে। এরপর শাহরিয়ার নাফিজ ও অধিনায়ক নাঈম ইসলাম জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলেন। তাতে শক্তিশালি আবাহনীকে হারিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে লিজেন্ডসরা।
আবাহনীর হয়ে নাজমুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও সাব্বির রহমান নেন ১টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী: ৩৯.১ ওভারে ১২২ (জহুরুল ০, সৌম্য ১৪, শান্ত ৬, প্রিয়াঙ্ক ১, মিথুন ৩৮, সাব্বির ০, মোসাদ্দেক ৪০*, সাইফ ১, মিরাজ ৫, মাশরাফি ১৫, অপু ১; শুভাশিস ৮-০-৩৭-৩, শহিদ ৮-৪-১১-২, ধাওয়ান ৬.১-০-১৭-১, নাবিল ১০-৪-১৫-২, মুক্তার ৭-০-৪২-১)।
রূপগঞ্জ: ২৬.৫ ওভারে ১২৫/৪ (মারুফ ৫৯, মোহাম্মদ নাঈম ২২, মুমিনুল ১৭, জাকের ২, নাঈম ইসলাম ৩*, শাহরিয়ার ১২*; মাশরাফি ৩-০-১৫-০, মিরাজ ৪-১-২০-০, অপু ৪-০-৩৩-১, সাইফ ৬-০-১৬-১, সৌম্য ৪-০-১৮-০, মোসাদ্দেক ৪-০-১০-০, সাব্বির ১.৫-০-১৩-১)।
ফল: লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: শুভাশিস রায়
Discussion about this post