এমন একটা ফাইনালের অপেক্ষাতেই ছিলেন ফুটবল ভক্তরা। এ যেন স্বপ্নের ফাইনাল! কনফেডারেশন কাপের শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি ব্রাজিল ও স্পেন। বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর ৪টায় ট্রফির জন্য লড়বে দুই দেশ।
এটা শুধু কি ফাইনাল? এ ফাইনালে উত্তর মিলবে কোটি ডলার মূল্যের একটি প্রশ্নেরও। বিশ্ব ফুটবলে স্প্যানিশ যুগ কি চলতেই থাকবে, নাকি নতুন করে শুরু হবে ব্রাজিল যুগের? কেউ আবার এ ফাইনালটি দেখছেন আগামী বছর অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফাইনালের ড্রেস রিহার্সেল হিসেবেও। সারা বিশ্বের চোখ আজ ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর দিকে।
কনফেডারেশন কাপ আয়োজন ব্রাজিলের জন্য ছিল একদিক দিয়ে চ্যালেঞ্জ। আগামী বছর বিশ্বকাপ আয়োজন কেমন করবে-তার উত্তরটা ভালোই জানিয়ে দিয়েছে তারা। মানে পরীক্ষায় পাস করেছে আয়োজকরা। ব্রাজিলের ব্যবস্থাপনায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট ফিফা। কনফেডারেশন কাপের এবারের আসরকে ফিফা সভাপতি সেপ ব্লাটার ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ইভেন্ট হিসেবেও আখ্যা দিয়ে বসেছেন।
ব্রাজিল-স্পেন ফাইনাল বলেই উত্তেজনার পারদ এত উঁচুতে। ব্রাজিলের সামনে টানা তৃতীয় এবং সব মিলিয়ে চারবার ট্রফি জয়ের সুযোগ। আর স্পেনের সামনে সুযোগ নিজেদের সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যাওয়ার। কনফেডারেশন কাপ জিতলেই সাফল্যের ষোলকলা পূরণ হয় তাদের। প্রথম কোনো দেশ হিসেবে পরপর চারটি সেরা টুর্নামেন্টের শিরোপার স্বাদ পাওয়ার হাতছানিতে এখন মুখর স্প্যানিশ শিবির। ২০১০ বিশ্বকাপ, ২০০৮ ও ২০১২-এর ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের পর কনফেডারেশন কাপ ঘরে তুলতে পারলে স্পেন সত্যিকার অর্থেই অন্যগ্রহের দলে পরিণত হবে।
কিন্তু স্পেন যুগের শেষ দেখতে চায় ব্রাজিল। এজন্য প্রস্তুত সুপারস্টার নেইমার। জানিয়ে দিয়েছেন, তার দল স্পেনকে হারিয়ে কনফেডারেশন কাপ জেতার জন্য প্রস্তুত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফুটবল বিশ্বে ছড়ি ঘোরানো স্পেনকে তারা এবার নিজেদের সেরাটা দেখিয়ে দিতে চায়। লুই ফেলিপ স্কলারি নেতৃত্বে জেগে ওঠা ব্রাজিল প্রিয় মারাকানায় নিজেদের সেরা খেলা উপহার দেওয়ার অপেক্ষায়।
টুর্নামেন্টের আগে নেইমার এবং ব্রাজিলকে কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি। কিংবদন্তি পেলে বর্তমান দলটির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন-এই দলটি বিশ্বকাপ জেতার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু টুর্নামেন্টে অসাধারণ পারফর্ম করে পেলেকে জবাবটা দিয়ে দিয়েছে স্কলারির দল। টুর্নামেন্টের আগে প্রীতি ম্যাচে ফ্রান্সকে ৩-০ তে হারানোর পর সেই যে আত্মবিশ্বাস জেগেছে, সেটা যেন দিন দিন আরও বাড়ছে। গ্রুপ পর্বে জাপান, মেক্সিকো এবং ইতালিকে হারানোর পর সেমিফাইনালে উরুগুয়েকে হারিয়ে দাপটে ফাইনালে উঠে যায় ব্রাজিল। এ টুর্নামেন্টে সেই পুরনো ব্রাজিলকেই সবাই খুঁজে পেয়েছে। আর পেলের ১০ নম্বর জার্সি পরার পর তো দুর্দান্ত রূপ নেইমারের। কোচ স্কলারি তো বলেই দিয়েছেন-‘তিনি যে একাদশ খুঁজছিলেন সেটা পেয়ে গেছেন।’
এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ব্রাজিল। সবাই বলছে-ধীরে ধীরে পুরনো ঐতিহ্যে ফিরে যাচ্ছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। কোচ যখন স্কলারির মতো বিচক্ষণ কেউ তখন তো আত্মবিশ্বাস একটু বেশি হবেই। তার অধীনেই ব্রাজিল সর্বশেষ ২০০২ সালের বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছিল। এবার তাকে দিয়েই ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জিততে চায় ব্রাজিলিয়ানরা। তবে তার আগে কনফেডারেশন কাপটা চাই তাদের। নেইমার, ফ্রেড, হাল্কদের নিয়ে গড়া দুর্দান্ত আক্রমণভাগই ব্রাজিলের প্রধান অস্ত্র। প্রতিটি ম্যাচেই প্রায় সমানভাবে জ্বলে উঠেছেন তারা।
অন্যদিকে গ্রুপ পর্বে নিজেদের আসল রূপ দেখালেও ইতালির বিপক্ষে সেমিফাইনালটা ছিল স্পেনের জন্য হতাশার। ভাগ্যের জোরে কোনোমতো ফাইনালের টিকেট পেয়ে যায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। দু’দলের তুলনা করলে স্পেনের চেয়ে ভালো ফুটবল খেলেছে স্বাগতিকরা।
কিন্তু ফাইনালে এসব আগাম বিশ্লেষন পাত্তা পাবে কিনা কে জানে? জমজমাট ফাইনাল দেখার অপেক্ষায় ফুটবল বিশ্ব!
Discussion about this post