শিরোনাম দেখে চমকে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক। আসলে অনেকেই জানেন না ইমরুল কায়েসের পুর্বসুরীরা ভারতীয়। এইতো গত সপ্তাহে ঘুরে আসলেন ভারতের করিমপুরে। যেখানে তার পুর্ব পুরুষদের কতোশত স্মৃতি! তার ভারত ভ্রমন নিয়ে প্রতিবেদন লিখল আনন্দবাজার। কল্লোল প্রামাণিকের সেই প্রতিবেদন তুলে ধরা হল ক্রিকবিডি২৪ডটকমের পাঠকদের জন্য-
বাপ-ঠাকুর্দার মুখে ‘ইন্ডিয়ার বাড়ি’র কত যে গল্প শুনেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। সেই গল্প শুনতে শুনতে যেন চোখের সামনে দেখতে পেতেন সবুজে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম, গ্রামের পুকুর পাড়, খেলার মাঠ। কিন্তু বেশ কয়েকবার ভারতে এলেও নদিয়ার করিমপুর ২ ব্লকের সাহেবপাড়া গ্রামের সেই বাড়িটায় যাওয়া হয়নি বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের বাঁ-হাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েসের। অবশেষে মিটল সে সাধ। বাবা, মা ও এক বন্ধুকে নিয়ে গ্রাম ঘুরে গেলেন ইমরুল।
মঙ্গলবার মায়ের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন বাংলাদেশের ২৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেট-তারকা। মায়ের চিকিৎসার পরে কলকাতা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে সপরিবার সাহেবপাড়ায় যান তিনি। ইমরুলের ঠাকুরদা কায়েম বিশ্বাসের জন্ম সাহেবপাড়াতেই। পাঁচের দশকে কায়েম চলে যান পূর্ব পাকিস্তানের মেহেরপুরে। ইমরুলের বাবা বানি বিশ্বাসের জন্ম অবশ্য পূর্ব পাকিস্তানে। কিন্তু ১৯৭১ সালে যুদ্ধ বাধলে কায়েম বিশ্বাস সপরিবার ফিরে আসেন সাহেবপাড়ায়। বছরখানেক বাদে পরিবারটি ফেরে বাংলাদেশে। তারপর থেকে ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ হলেও আর এ দেশে আসা হয়নি তাঁদের।
সাহেবপাড়াতেই থাকেন ইমরুলের কাকা বজলু রহমান বিশ্বাস। বজলু বলেন, ‘‘কলকাতায় এসে সাগর (ইমরুলের ডাকনাম) ফোনে বলল গ্রামে আসতে চায়।’’ সেইমতো বৃহস্পতিবার বাড়িতে হইহই শুরু হয়ে যায়। বিশেষ পদ বলতে দেশি মুরগির মাংস আর শেষ পাতে রসগোল্লা। কিন্তু ইমরুল একটি রুটি, সামান্য মাংস ছাড়া আর কিছুই খাননি। রাতেও তাই। তিনটি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিকের খাওয়ার বহরে হতাশ তাঁর সম্পর্কিত বৌদি রিমা বিবি। তাঁর কথায়, ‘‘অত বড়
মাপের খেলোয়াড়। অথচ খাওয়ার বেলায় লবডঙ্কা! কথায় কথায় শুধু বলে, ‘বৌদি জমিয়ে আর এক কাপ চা কর দেখি’।’’
ইমরুলের আসার খবর শুনে শুক্রবার সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে বজলু রহমানের বাড়ির সামনে। করিমপুর জামতলা নবারুণ সঙ্ঘের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রেগুলেটেড মার্কেটের মাঠে ব্যাট হাতে স্থানীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতেও নেমে পড়েন তিনি। বেশ কিছু পরামর্শও দেন।
ইমরুলের কথায়, ‘‘সেই ছেলেবেলা থেকে করিমপুর, সাহেবপাড়ার নাম শুনে আসছি। এই প্রথম এখানে আসার সুযোগ হল। দাদু বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। এই এলাকার মানুষের আন্তরিকতা, ক্রিকেট নিয়ে এমন উন্মাদনার কথা আমারও মনে থাকবে।’’ শুক্রবার দুপুরে ইমরুল সপরিবার বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেন। যাওয়ার আগে কথা দিয়েছেন, আবার আসবেন।
Discussion about this post