ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
দুই ওপেনারের ব্যাটে দারুণ শুরু পেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে হঠাৎ ছন্দপতন হয় দলটির। যে কারণে অল্পতেই গুটিয়ে যাওয়ায় শঙ্কায় পড়ে স্বাগতিকরা। ঠিক সে সময়ই ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন শাদাব খান। ছাড়ান আলো। তার নৈপুণ্যে পাকিস্তান পায় লড়ায়ের পুঁজি। এই অলরাউন্ডার বল হাতেও নিজেদের সেরাটা দিলেন। তার পথ ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেও জিতে যায় পাকিস্তান সহজেই। এই সাফল্যে সফরকারীদের পাকিস্তান দিয়েছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা।
রোববার রাতে মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ৫৩ রানে মনে রাখার মতো জয় তুলে নেয় পাকিস্তান।
এদিন আগে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। অবশ্য ইনিংসের মাঝপথে ধূলিঝড়ে তছনছ হতে বসেছিল সবকিছু। ঘণ্টাখানেক খেলা বন্ধ থাকার পর ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে হয় ৪৮ ওভার। যেখানে ৫ উইকেটে ১১৭ রানের বাজে অবস্থা কাটিয়ে ৯ উইকেটে ২৬৯ রান করে স্বাগতিকরা। ইমাম-উল-হকের আরেকটি ফিফটিরেদেখা মিলল। ৭৮ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৮৬ রানের ইনিংস গড়েন শাদাব। এরপর এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার বল হাতে নেন ৬২ রানে ৪ উইকেট।
উইন্ডিজের হয়ে এদিন দাপট দেখান অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। ১০ ওভার বোলিং করে ৪৮ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট!
মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ আর মিডল অর্ডারই সর্বনাশ করেছে। দল যখন চাপে তখন সাত নম্বরে নেমে আকিল হোসেনের করেন টর্নেডো ফিফটি। ৩৭.২ ওভারে ২১৬ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা।
রোববার রাতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দারুণ করে পাকিস্তান। পাওয়ার প্লেতে দলটির দুই ওপেনার করেন ৫৬ রান। তবে ১৩তম ওভারে ফখর (৪৮ বলে ৩৫) বোল্ড হয়ে আউট। তার বিদায়ে ভাঙে ৮৫ রানের শুরুর জুটি। এরপরই সাজঘরের পথ ধরেন বাবর। এবার তিনি আউট ১ রানে। লেগ স্পিনার হেইডেন ওয়ালশের বলে এলবিডব্লিউ হন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেটটা পায় রিভিউ থেকে। ওই ওভারেই ইমাম ফিফটি করেন ৫৫ বলে। ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা ৭ ইনিংসে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন তিনি। টানা সবচেয়ে বেশি ৯ ইনিংসে ফিফটি ছোঁয়ার রেকর্ড পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াঁদাদের।
এ পর্যায়ে একই ওভারে তিন বলের মধ্যে ইমাম ও মোহাম্মদ হারিসকে আউট করেনপুরান। স্লগ সুইপের চেষ্টায় ব্যাটের কানায় লেগে কিপারের গ্লাভসে যায় বল, ইমামের ৬৮ বলে ৬২ রানের ইনিংসে ছিল ৭ চার ও এক ছক্কা।
এরপরের ওভারে আরেকটি বড় উইকেট তুলেন পুরান। এবার তার শিকার মোহাম্মদ রিজওয়ান। এই উইকেটও আসে রিভিউ নিয়ে। একটা পর্যায়ে বিনা উইকেটে ৮৫ থেকে পাকিস্তানের রান তখন ৫ উইকেটে ১১৭! এরপর ধূলিঝড়ের কারণে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। পরে খেলা শুরু হলে শাদাবের ব্যাটে আবার পাল্টে যায় দৃশ্যপট। দলকে টেনে স্কোর আড়াইশ পার করেন!
খুশদিল শার সঙ্গে ৮৪ রানের জুটিতে দলকে পথ দেখান শাদাব। ৪৩ বলে ৩৪ রান করেন খুশদিল। ৫৭ বলে চতুর্থ ওয়ানডে ফিফটি করা শাদাব সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও তৈরি করেন। সেটা করতে শেষ ওভারে তার দরকার ছিল ১৪ রান। তবে তিনি জেডেন সিলসের ইয়র্কারে বোল্ড প্রথম বলে।
এরপর বলে হাতে নিয়ে শুরু থেকেই দাপট দেখায় পাকিস্তানি বোলাররা। এদিন কাইল মেয়ার্সকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শাহনাওয়াজ দাহানির বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দ্রুত সাজঘরে ফেরেন শেই হোপ (২১), শামার ব্রুকস (১৮), পুরান (১১) ও রভম্যান পাওয়েল (১০)। ৯৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে সফরকারীরা। সে সময় দলকে এগিয়ে নেন দলে ফেরা কেসি কার্টি। ৪৫ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় করেন ৩৩! কিন্তু লাভ হয়নি! ম্যাচে শেষ হাসি পাকিস্তানের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৪৮ ওভারে ২৬৯/৯ (ফখর ৩৫, ইমাম ৬২, বাবর ১, রিজওয়ান ১১, হারিস ০, খুশদিল ৩৪, শাদাব ৮৬, নওয়াজ ৮, ওয়াসিম ৬, হাসান ৮*, দাহানি ৪*; সিলস ৬-১-৩৯-১, পল ৯-০-৫৭-২, শেফার্ড ৩-০-১৩-০, ওয়ালশ ১০-০-৬৬-১, পুরান ১০-০-৪৮-৪, আকিল ১০-০-৪৩-১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩৭.২ ওভারে ২১৬/১০ (হোপ ২১, মেয়ার্স ৫, ব্রুকস ১৮, কার্টি ৩৩, পুরান ১১, পাওয়েল ১০, আকিল ৬০, পল ২১, শেফার্ড ১৬, ওয়ালশ ৩, সিলস ০*; হাসান ৫.২-০-২৯-২, দাহানি ৬-০-৩৬-১, ওয়াসিম ৭-১-২১-১, নওয়াজ ১০-১-৫৬-২, শাদাব ৯-১৬২-৪)
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ৫৩ রানে জয়ী পাকিস্তান
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ তে পাকিস্তান জয়ী
ম্যাচসেরা: শাদাব খান
সিরিজসেরা: ইমাম-উল-হক
Discussion about this post