৮৪ রানে নেই ৭ উইকেট! সাকিব আল হাসান বিদায় নিতেই শঙ্কা জাগছিল। ঠিক তখনই ঠান্ডা মাথায় দ্বায়িত্বটা নিজেদের কাধে তুলে নেন মুক্তার আলি ও তানবির হায়দার। উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে অসাধারণ এক জুটিতে মিশন সাকসেসফুল! শেষ বিকেলের রুদ্ধশ্বাসে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ৩ উইকেটে জিতল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।
বৃহস্পতিবার বিকেএসপির চার নম্বর মাঠের উইকেট ভেজা থাকায় নির্ধারিত সময়ের বেশ পর ম্যাচ শুরু হয়। ১৭ ওভার কমে ম্যাচ দাঁড়ায় ৩৩ ওভারে। যেখানে টস জিতে প্রাইম ব্যাংককে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় রূপগঞ্জ। তারপর সাকিব-মাশরাফি বিন মর্তুজার দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে অসহায় প্রাইম ব্যাংক। তারা তুলে ১৫২ রান। জবাব দিতে নেমে ৩২.৪ ওভারে জয়ের বন্দরে নোঙর করে মাশরাফির রূপগঞ্জ।
ম্যাচটা অবশ্য জিততে বেশ বেগই পেতে হয়েছে লিজেন্ডসদের। শেষটাতে এসে তানবির ও মুক্তার ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তায় প্রতিরোধ না গড়লে সর্বনাশই হয়ে যেতো সাবেক চ্যাম্পিয়নদের। চাপের মুখে দু’জন খেললেন দ্বায়িত্বশীল ইনিংস। গড়লেন অষ্টম উইকেটে ৭০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। দলকে জিতেই মাঠ ছাড়লেন দু’জন।
চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে ১২ ম্যাচ শেষে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রূপগঞ্জ। রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবকে ৫৫ রানে হারিয়ে সুপার লিগে পথচলা শুরু করে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। এরপর বৃহস্পতিবার প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে তুলে নিল আরেকটি জয়।
বৃষ্টির কারণে সকালে নির্ধারিত সময় শুরু হতে পারেনি খেলা। যে কারণে ওভার কমে দাঁড়ায় ৩৩-এ। কার্টেল ওভারের ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নামা প্রাইম ব্যাংককে ১৫২ রানে আটকে রেখে স্বস্তিতেই ছিল লিজেন্ডসদের শিবির। মনে হচ্ছিল অনায়াসেই। কিন্তু তা আর হলো কোথায়?
বিকেএসপিতে বৃহস্পতিবার বসেছিল তারার হাট। চলতি মৌসুমে দলটির হয়ে প্রথববারের মতো খেলতে নামেন সাকিব আল হাসান। সঙ্গে মাশরাফি তো ছিলেনই। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ডিপিএলের এবারের আসরের প্রথম ম্যাচ খেলেন ওপেনার তামিম ইকবাল।
তবে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, এনামুল হক বিজয়দের এ ম্যাচে নায়ক মুক্তার আলি ও তানবির হায়দার। শেষদিকে ৪৫ বলে হার না মানা ৩৯ রানের ইনিংস খেলে রূপঞ্জকে ৩ উইকেটে জয় এনে দেন মুক্তার। এই জয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্নটাও বাঁচিয়ে রাখল লিজেন্ডসরা।
১৫৩ রানের অনেকটা সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২৬ রানে ৩ উইকেট হারায় লিজেন্ডস রূপগঞ্জ। নিজের আউটটি মানতে পারেন নি রকিবুল হাসান। রান আউটের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাঠ ছাড়েন তিনি। সাব্বির রহমান ২৬ রানে ফেরেন। ৪২ রানে ৪ উইকেট হারালে মাঠে আসেন সাকিব। অবশ্য তিনিও বড় ইনিংস গড়তে পারেন নি। ফেরেন ২১ রানে।
৮৪ রানের মধ্যে চিরাগ জানি ও মাশরাফিকে হারিয়ে দল আরও চাপে পড়ে। তারপর মুক্তার-তানবির জুটিতে রক্ষা। তানবির শেষ অব্দি ৩৯ বলে ৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
এর আগে টস জিতে প্রাইম ব্যাংককে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় রূপগঞ্জ। দলটির হয়ে প্রথমবারের মতো মাঠে নামেন তামিম ইকবাল। আল-আমিন হোসেনকে ছয় দিয়ে রানের খাতার খুলেও সুবিধা করতে পারেননি তামিম। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে সাকিবের বলে আউট হন ৫ বলে ৮ রান তুলে।
শাহাদত হোসেন দিপুকে শুরেতেই ফেরান নাবিল সামাদ। এরপর নিজের দুই ওভারে ফেরান মুমিনুল (১৩) ও মিঠুনকে (৩)সোজঘরের পথ দেখান মাশরাফি। নাসির হোসেনকেও দ্রুত ফেরান সাকিব। তবে এনামুল হক বিজয় ধরে রাখেন ছন্দ। বাংলাদেশের হয়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এক মৌসুমের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি।
সাইফ হাসানকে টপকে গেলেন এদিন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে ১৬ ম্যাচে সাইফ ৬২.৬১ গড়ে রান করেন ৮১৪। বিজয়ের রান এখন ৮৭৮ রান। মৌসুমের ষষ্ঠ অর্ধশতক তুলে নিয়ে বিজয় ফেরেন ৭৩ রানে। ৯১ বলের ইনিংসটি সাজান ৬টি চার ও ১ চারে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান বিজয়।
বল হাতে এদিন সফল রূপগঞ্জের চিরাগ জানিও। তিনিও নেন দুটি উইকেট। নাবিল ও আল আমিন নেন একটি করে উইকেট।
তারপর ব্যাট হাতে বীরত্ব গাথা উপহার দিলেন মুক্তার-তানবির। দুইয়ে মিলে আরেকটি জয় ধরা দিল লিজেন্ডসদের হাতে। এই সাফল্য ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে চায় সাবেক চ্যাম্পিয়নরা।
Discussion about this post