ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
তিন দিনের মধ্যে ইনিংস ব্যবধানে ইন্দোর টেস্টে হেরেছিল বাংলাদেশ। ইডেন গার্ডেনের গোলাপি বলে দিবারাত্রির এ টেস্ট শুরুর আগেই নতুন করে এসেছিল সে প্রশ্নই। যদিও শনিবার বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুটা দিয়েছিল ভিন্ন ইঙ্গিতই। কেননা ভারতের চেয়ে ২৪১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ রান তোলার আগেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল! তাতে নতুন করে সবার মনে প্রশ্ন জেগেছিল আজই শেষ হবে না তো এ ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত মুশফিকুর রহিমের বীরত্বের কারণে হয়নি তেমনটি। ঠিকই এ টেস্ট গড়িয়েছে তিন দিনে।
শনিবার মুশফিক প্রান্ত আগলে রাখায় ৬ উইকেটে ১৫২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এরআগে ইডেন টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ৯ উইকেটে ৩৪৭ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩০.৩ ওভারে ১০৬ রানে অলআউট হয়েছিল। যে কারণে ২৪১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে টিম টাইগার্স। তবে দিন শেষে স্বাগতিকদের চেয়ে টাইগার পেছনে ৮৯ রান। রবিবার এ রান করতে পারলেই বিরাট কোহলিদের ফের নামতে হবে ব্যাটিংয়ে।
শনিবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেই ৭ ওভারের মধ্যেই মাত্র ১৩ রানে টপ অর্ডারের ৪ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। যে কারণে ইনিংস পরাজয় এড়ানোর চেয়ে তখন তৃতীয় দিনে ম্যাচ গড়ানো নিয়েই শঙ্কা জেগেছিল। মাহমুদউল্লাহর পাল্টা আক্রমণে ভিন্ন কিছুর শুরু, এরপর মুশফিকের লড়াই। প্রথমবার দুই দিনে টেস্ট হারার শঙ্কা কাটিয়ে দ্বিতীয় দিন উতরে গেল বাংলাদেশ। দারুণ খেলতে থাকা মাহমুদউল্লাহ ৩৯ রান করে হ্যামস্ট্রিংয়ের টানে মাঠ ছাড়েন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তবে মিরাজকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান মুশফিক। ফিফটির জুটির পর মিরাজ বিদায় নেন, খানিকটা সঙ্গ দিয়ে হাল ছাড়েন তাইজুল। তবে মুশফিক টিকে আছেন চোয়ালবদ্ধ লড়াইয়ে। দিন শেষ অপরাজিত তিনি ৫৯ রান করে।
ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে ইশান্ত শর্মা দিন শেষ করেছেন ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে। দেশের মাটিতে প্রথমবার ১০ উইকেট স্বাদ পাওয়ার আশায় তৃতীয় দিন শুরু করবেন তিনি।
দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত টপঅর্ডার গুটিয়ে যাওয়ায় বড় বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে পঞ্চম উইকেটে মুশফিক-মাহমুদল্লাহর লড়াইয়ে এগিয়ে যায় টিম টাইগার্স। এরই এক পর্যায়ে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান জুটিতে তোলেন ৬৯ রান। এর কিছুক্ষণ পরই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পড়েন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে। যে কারণে ইনিংসের ১৯তম ওভারের মাঝপথে তিনি রিটায়ার্ড হার্ড হয়ে ফিরে যান। তার আগে এ ডানহাতির ব্যাট থেকে এসেছিল ৭ চারে ৩৯ রান। পরে মেহেদি হাসান মিরাজ শুরু করেন দেখেশুনে। মুশফিককে যোগ্য দেন। এরমধ্যে আবার এ ডানহাতি রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে অজিঙ্কে রাহানের সৌজন্যে বেঁচে যান। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ইশান্ত শর্মার বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি (১৫)। মুশফিককে পরে সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তাইজুল। কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ পারেননি। দিনের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। তবে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে অন্যপ্রান্তে অপরাজিত রয়েছেন মুশফিক। রবিবার টেস্টের তৃতীয় দিনে ভালো কিছু উপহার দেয়ার আশা করছেন তিনি। যদিও কাজটি বেশ কঠিন।
এরআগে বাংলাদেশের বোলাররা দারুণ বোলিং করেন। বিরাট কোহলি ক্যারিয়ারের ২৭তম সেঞ্চুরি পেলেও ভারতের শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের তেমন সুযোগ দেয়নি তারা। আগের দিনের ৩ উইকেটে করা ১৭৪ রানের সঙ্গে গতকাল স্বাগতিকরা আরও ৬ উইকেট হারিয়ে দলীয় স্কোর বোর্ডে যোগ করে ১৭৩ রান।
লাঞ্চ বিরতির পর প্রথম ওভারেই আবু জায়েদ রাহীর বলে বোল্ড রবীন্দ্র জাদেজা। ৮১ ওভারের সময় নতুন বল হাতে নিয়েই আরো বড় সাফল্য বাংলাদেশের। এবার এবাদতের বলে আউট বিরাট কোহলি। ফাইন লেগে দুর্দান্ত ক্যাচটা ধরেন তাইজুল ইসলাম। ১৩৬ রান করে বিরাট কোহলির আউটের পর ভারতের ইনিংস হুড়মুড়িয়ে পড়তে শুরু করে। যা দেখে স্বাগতিক অধিনায়ক ৯ উইকেটে ৩৪৭ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা দেন। এবাদত ও আল-আমিন তিনটি করে উইকেট পান। ২ উইকেট পকেটে পুরেন আবু জায়েদ। আর ১ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩০.৩ ওভারে ১০৬
ভারত ১ম ইনিংস: ৮৯.৪ ওভারে ৩৪৭/৯ (ডি.) (আগের দিন ১৭৪/৩) (মায়াঙ্ক ১৪, রোহিত ২১, পুজারা ৫৫, কোহলি ১৩৬, রাহানে ৫১, জদেজা ১২, ঋদ্ধিমান ১৭*, অশ্বিন ৯, উমেশ ০, ইশান্ত ০, শামি ১০*; আল আমিন ২২.৪-৩-৮৫-৩, আবু জায়েদ ২১-৬-৭৭-২, ইবাদত ২১-৩-৯১-৩, তাইজুল ২৫-২-৮০-১)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৩২.৩ ওভারে ১৫২/৬ (সাদমান ০, ইমরুল ৫, মুমিনুল ০, মিঠুন ৬, মুশফিক ৫৯*, মাহমুদউল্লাহ ৩৯ (আহত অবসর), মিরাজ ১৫, তাইজুল ১১; ইশান্ত ৯-১-৩৯-৪, উমেশ ১০.৩-০-৪০-২, শামি ৮-০-৪২-০, অশ্বিন ৫-০-১৯-০)।
Discussion about this post