মনে হচ্ছিল অনেকটা অনায়াসেই জিততে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ বেলায় এসে রোহিত শর্মা প্রাণ ফেরালেন লড়াইয়ে। রুদ্ধশ্বাস এক রোমাঞ্চের দেখা মিলল মিরপুরের শেরেবাংলায়। তবে স্বস্তি এটাই তীরে এসে তরী ডুবল না বাংলাদেশের। শেষ দিকে দারুণ জমে যাওয়া ম্যাচে ৫ রানে জিতল বাংলাদেশ। এনিয়ে দেশের মাটিতে টানা দুই সিরিজে হারাল ভারতকে।
সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দল তুলে ২৭১ রান। জবাব দিতে নেমে ৯ উইকেটে ২৬৬ রান করে রোহিত শর্মার দল। প্রথম ম্যাচ ১ উইকেটে জেতা বাংলাদেশ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এগিয়ে গেল ২-০ ব্যবধানে। ভারতকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার হাতছানি টাইগারদের সামনে।
মেহেদী হাসান মিরাজের অবিশ্বাস্য সেঞ্চুরি আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অপ্রতিরোধ্য পথ খুঁজে পায় বাংলাদেশ। এরপর ইবাদত-মুস্তাফিজুর রহমান বল হাতে দেখালেন দক্ষতা। অবশ্য শুরুতেই ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে পিছিয়ে পড়ে ভারত। তারপর অবশ্য শ্রেয়াস আইয়ার-অক্ষর প্যাটেলের শতরানের জুটিতে দল গড়ে প্রতিরোধ। আইয়ার সর্বোচ্চ ৭৭ রান ও ৫৬ রান করেন অক্ষর।
আঙুলে চোট নিয়ে খেলতে নেমে রোহিত ম্যাচটা জমিয়ে তুলেন। ২৭ বলে ফিফটি করেন অপরাজিত। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৬ রানের। মুস্তাফিজের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে মাত্র ১ রান নিতে পারে সফরকারীরা।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ইবাদত। ২ উইকেট করে নেন সাকিব-মিরাজ। এর আগে ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ দল। ৭ বছর পর সফরে এসে ফের টাইগারদের কাছে হারল তারা।
অথচ ৬৯ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ। তারপরই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে টানলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মাহমুদউল্লাহ ফিরলেন চেনা ছন্দে। ভারতের বিপক্ষে দু’জন গড়লেন রেকর্ড গড়া জুটি। শেষ দিকে নাসুমের সঙ্গে গড়লেন বিস্ফোরক এক জুটি। বাংলাদেশের ইনিংস শেষে ৮৩ বলে ৮ চার ও ৪ ছয়ে ১০০ রানে অপরাজিত মিরাজ। সপ্তম উইকেটে ১৪৮ রানের জুটি গড়েন মিরাজ-রিয়াদ। এটিই ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে যে কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। ২০১৪ সালে ফতুল্লায় তৃতীয় উইকেটে এনামুল হক ও মুশফিকুর রহিমের ১৩৩ রান ছিল এত দিন সর্বোচ্চ। সেটা ছাড়িয়ে গেল মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ!
শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশ তুলে ৬৮ রান। ১১ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ১৮ রানে অবদান রাখেন নাসুম আহমেদ। ২৩ বল স্থায়ী ৫৪ রানের জুটি গড়নে নাসুম-মিরাজ। তার পথ ধরেই বোলাররাও লড়লেন। আর দল পেলো ৫ রানের জয়। দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। দুই জয়েই সেরা ক্রিকেটার হলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেঞ্চুরির সঙ্গে দুই উইকেট আর দারুণ ফিল্ডিংয়ে ম্যাচ সেরা মিরাজ ছাড়া আবার কে?
১০ ডিসেম্বর ভারতকে হোয়াইট ওয়াশের মিশনে নামবে বাংলাদেশ দল। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭১/৭ (এনামুল ১১, লিটন ৭, শান্ত ২১, সাকিব ৮, মুশফিক ১২, মাহমুদউল্লাহ ৭৭, আফিফ ০, মিরাজ ১০০*, নাসুম ১৮*; চাহার ৩-০-১২-০, সিরাজ ১০-০-৭৩-২, শার্দুল ১০-১-৪৭-০, উমরান ১০-০-৫৮-২, ওয়াশিংটন ১০-০-৩৭-৩, আকসার ৭-০-৪০-০)
ভারত: ৫০ ওভারে ওভারে ২৬৬/৯ (কোহলি ৫, ধাওয়ান ৮, শ্রেয়াস ৮২, ওয়াশিংটন ১১, রাহুল ১৪, আকসার ৫৬, শার্দুল ৭, চাহার ১১, রোহিত ৫১, সিরাজ ২, উমরান ০*; মিরাজ ৬.১-০-৪৬-২, ইবাদত ১০-০-৪৫-৩, মুস্তাফিজুর ০-০-০-০, নাসুম ১০-০-৫৪-০, সাকিব ১০-১-৩৯-২, মাহমুদউল্লাহ ৩.৫-০-৩৩-১)
ফল: বাংলাদেশ ৫ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : মেহেদী হাসান মিরাজ
সিরিজ : ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে
Discussion about this post