ব্যাটিং ব্যর্থতা, ভুল শট বাছাই আর টপঅর্ডারের ধস! ব্যস, আরেকটি ব্যর্থতার গল্প বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পুরোনো গল্পের পুনরাবৃত্তি হলো আবারও। চেনা গেল না স্বাগতিকদের!
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে ১৬ রানে হারল লিটন দাসের দল। সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ!
আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছুঁড়ে দেওয়া ১৬৬ রানের টার্গেট খুব একটা অতিক্রমণীয় ছিল না। বরং চট্টগ্রামের উইকেট আর বাউন্ডারির আকারের কথা ভেবে সেটি ছিল লড়ার মতো লক্ষ্য। কিন্তু ব্যাট হাতে প্রথম ছয় ওভারেই গুঁড়িয়ে গেল বাংলাদেশ। পাওয়ারপ্লের মধ্যেই ৪১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুটা ছিল সতর্ক। আলিক আথানাজে ও ব্রেন্ডন কিংয়ের ব্যাটে প্রথম ছয় ওভারে বিনা উইকেটে আসে ৩৫ রান। ওপেনিং জুটিতে দুজন মিলে তুলেছিলেন ৫৯ রান। ২৭ বলে ৩৪ রান করে আথানাজে ফিরলে কিছুটা গতি হারায় ইনিংস। কিন্তু অধিনায়ক শাই হোপ ও পাওয়ার হিটার রভম্যান পাওয়েল শেষভাগে পাল্টে দেন ম্যাচের চিত্র।
হোপ এক প্রান্তে ঠান্ডা মাথায় ইনিংস গড়েছেন, অন্যপ্রান্তে ঝড় তুলেছেন পাওয়েল। শেষ ওভারে তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে ২৮ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। হোপও খেলেছেন ২৮ বলে অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংস। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ১৬৫ রানে থামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে দুটি উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ, একটি রিশাদ হোসেনের।
চলতি বছর টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্বলতা যেন এখন পুরোনো বিষয়। আজও সেই একই ব্যর্থতা দেখা গেল। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমের ঝড়ো সূচনা (৫ বলে ১৫ রান) সামান্য আশা জাগালেও খুব দ্রুতই সেটি নিভে যায়। ৮ বলে ৫ রান করে ফেরেন লিটন দাস। সাইফ হাসান (৭ বলে ৮) ও শামীম হোসেন (৪ বলে ১) ফিরলে টপঅর্ডারের পতন সম্পূর্ণ হয়।
পাওয়ারপ্লের পর নুরুল হাসান সোহান ও তাওহিদ হৃদয় চেষ্টা করেছিলেন চাপ সামাল দিতে। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ায় সেটি হয়নি। সোহান ফেরেন ১০ বলে ৫ রান করে, হৃদয় আউট হন ২৫ বলে ২৮ রান করে।
এরপর কিছুটা লড়াই গড়েন তানজিম হাসান সাকিব ও নাসুম আহমেদ। দুজনের জুটিতে আসে ২৩ বলে ৪০ রান। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তানজিম করেন ২৭ বলে ৩৩, নাসুম খেলেন ১৩ বলে ২০ রানের ইনিংস— যা তাঁর ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ। কিন্তু এই লড়াইও ছিল হারের ব্যবধান কমানোর।
শেষ ওভারে যখন দরকার ২০ রান, তখন ক্রিজে ছিলেন তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম তিন বলে আসে মাত্র ৩ রান। চতুর্থ বলে ছক্কা মারতে গিয়ে তাসকিন এক পা পিছনে গিয়ে আঘাত করেন নিজের স্টাম্পে। বেল পড়ে যায়- হিট আউট হয়ে যান তিনি। ছক্কা মারলেও সেটি আর গণনা হয়নি, শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
বাংলাদেশ থামে ১৯.৪ ওভারে ১৪৯ রানে। হার ১৬ রানের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে জেসন হোল্ডার ও জেডন সিলস তিনটি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ শেষে স্পষ্ট ছিল দুই দলের পার্থক্য-একপাশে ছিল পরিকল্পিত ব্যাটিং, অন্যপাশে আতঙ্ক আর অস্থিরতা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেমন শেষ দিকে হিসাব করে বড় স্কোর দাঁড় করিয়েছে, বাংলাদেশ তেমনভাবে ইনিংস সাজাতেই পারেনি।
সিরিজের পরের ম্যাচ ২৯ অক্টোবর, চট্টগ্রামের মাঠেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৫/৩ (হোপ ৪৬*, পাওয়েল ৪৪*, অ্যাথানেজ ৩৪, কিং ৩৩; তাসকিন ২/৩৬, রিশাদ ১/৪০, নাসুম ০/১৫)।
বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ১৪৯/১০ (তানজিম ৩৩, হৃদয় ২৮, নাসুম ২০; হোল্ডার ৩/৩১, সিলস ৩/৩২, আকিল ২/২২)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রোভম্যান পাওয়েল।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।










Discussion about this post