স্মৃতির সোনালী ফ্রেমে বাধিয়ে রাখার মতো একটা বছর। তবে তাতে চাঁদের কলংকের মতো লেগে আছে ম্যাচ গড়াপেটা কেলেংকারি! তারপরও ২০১৩ সালটা বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা বারবার ফিরে দেখতে চাইবেন।
সাফল্যের পথচলা..
২০১৩ সালের শুরুতেই সাফল্যের দেখা পেয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কাতেই ধরা দেয় সাফল্য। মার্চে গলে প্রথম টেস্টে শ্রীলঙ্কানদের ৫৭০ রানের বিশাল সংগ্রহের সামনে চাপা না পড়ে বাংলাদেশ রীতিমতো লিগ নেয়। প্রথম ইনিংসে করে ৬৩৮। টেস্ট ড্র করেন মুশফিকুর রহীমরা।
কলম্বোতে অবশ্য সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা হয়নি। ড্র’র পর ৭ উইকেটে হার।
এরপর ওয়ানডেতে ফের চমক। পাল্লেকেলেতে চমক দেখিয়ে মুশফিকুর রহীমের দল তুলে নেয় ৩ উইকেটের দারুণ এক জয়।
সাফল্যের এমন মিশন কি আর ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের দ্যুতি ছাড়া সম্ভব? কিছুতেই নয়। পুরো দল দারুণ খেললেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন মুশফিকুর রহিম। সঙ্গে আশরাফুল-নাসির। দলগত সাফল্যে উজ্জ্বল হল ব্যক্তিগত সাফল্যও।
অবশ্য মাসখানেক পর জিম্বাবুয়েতে সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা হয়নি। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হেরে যায় ৩৩৫ রানের বড় ব্যবধানে। তবে দ্বিতীয় টেস্টে পথ খুজে পায় বাংলাদেশ। ধরা দেয় ১৪৩ রানের জয়।
ফের অক্টোবর-নভেম্বরে শোনা গেল বাঘের গর্জন। সোহাগ গাজী, মমিনুল হকদের উত্থানে জয়ের বাংলাদেশে হল কিউইবধ! বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ড্র। ওয়ানডেতে ফের হোয়াইটওয়াশ হল কিউইরা। মানে বাংলাওয়াশ!
টেস্ট-ওয়ানডে, টি-টুয়েন্টি-ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত সেরা বছর এটা। ছয় টেস্টে এক জয়ের বিপরীতে দুই হার। আর তিন ড্র। সব মিলে আগের যে কোনো বছরের তুলনায় উজ্জ্বল।
ওয়ানডেতে ৯ ম্যাচের পাঁচটিতে জয়। তিনটিতে হার ও একটি পরিত্যক্ত। টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে তুলনামূলক প্রাপ্তি কম। চার ম্যাচে জয় একটি। তিনটিতে হার।
ব্যাক্তিগত ম্যাজিক
এইতো কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের সাফল্য মানেই যেন ছিল আশরাফুল, সাকিব কিংবা তামিম ইকবালের ম্যাজিক। এখন পাল্টে গেছে সেইসব হিসেব। বাংলাদেশ পেয়েছে নতুন তারকা। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম তো ছিলেনই। এবার যোগ হলেন সোহাগ গাজী, মমিনুল হক, নাসির হোসেনরা।
প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। অনায়াসে সে কৃতিত্বের অধিকারী হতে পারতেন মোহাম্মদ আশরাফুল। কিন্তু ১০ রানের জন্য পারেননি। এ বছর তৃতীয় সেঞ্চুরিয়ানের খাতায় নাম লেখালেন নাসিরও। জিম্বাবুয়ে সফরে নিজেকে মেলে ধরলেন রবিউল ইসলাম। সোহাগ গাজী ছাড়িয়ে যান তাদেরও। গড়েন বিশ্বরেকর্ড। টেস্টে হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি তুলে নেন সেঞ্চুরি!
রেকর্ড হয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটেও। বিজয় দিবস টি-টুয়েন্টির ক্রিকেটে পেস বোলার আল-আমিন এক ওভারে হ্যাটট্রিকসহ ৫ উইকেট নিয়ে বিশ্ব রেকর্ডের নতুন গড়েন।
আশরাফুলের কান্না
২০১৩ সালে শ্রীলংকা সফরে যেন নতুন জš§ হয়েছিল আশরাফুলের। ফের সৌরভ ছড়াচ্ছিল তার ব্যাট। কিন্তু হঠাৎ করেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। নিজ মুখেই আশরাফুলের স্বীকারোক্তি-‘বেশ কয়েকবারই অন্যায়ভাবে ম্যাচ পাতানোয় জড়িত।’ এমন দোষ স্বীকার করে চোখের জল ফেলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন নিষিদ্ধ আশরাফুল।
জানা যায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ ফিীক্সং হয়েছে। ক্রিকেটকে ওই গড়াপেটা থেকে মুক্ত করতে সময়মতো উদ্যোগী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। ম্যাচ পাতানোমুক্ত নিষ্কলুষ ক্রিকেট অঙ্গনের আশায় আইসিসি দুর্নীতি দমন ইউনিটের শরণাপন্ন হল বিসিবি। নানা তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে আশরাফুলসহ আকসুর সন্দেহের তীর নয়জনের দিকে। তাদের সাক্ষ্য-প্রমাণ শুরু হয়েছে বিসিবির গড়া বিশেষ ট্রাইব্যুনালে।
মুশফিক রহীমের ডাবল সেঞ্চুরি
http://youtu.be/kb_Z9qQV-0s
সোহাগ গাজীর হ্যাটট্রিক
http://youtu.be/dN4umV2YAFI
মোহাম্মদ আশরাফুলের কান্না
Discussion about this post