দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে মিশ্র অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। ওয়ানডে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ার পর টেস্টে ভরাডুবি। দুই টেস্টে হারের ক্ষত নিয়ে ফিরতে শুরু করলেন টাইগার ক্রিকেটাররা। বুধবার সকাল ৯টায় প্রোটিয়া সফর শেষে দেশে ফিরলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক, লিটন দাস, ইয়াসির রাব্বি, খালেদ আহমেদ, তাইজুল ইসলাম, নুরুল হাসান, এবাদত হোসেন ও নাজমুল হোসেন শান্ত।
ঢাকা ফিরেই বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন মুমিনুল। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক শুনলেন কিছু অপ্রিয় প্রশ্নও। চলুন দেখে নেই কী বললেন মুমিনুল হক।
টেস্টে উন্নতির জন্য কী সাজেশন পেলেন?
ওয়ানডে সিরিজ তো প্রত্যাশা অনুযায়ী ছিল। টেস্টে উন্নতির কথা যদি বলেন আগামী দুই বছর বা সারাজীবনই খেলি উন্নতির শেষ নাই। টেস্ট ক্রিকেট ওয়ানডের মতো না। পাঁচ দিনের খেলায় সব বিভাগেই ভালো খেলা গুরুত্বপূর্ণ। ভালো জায়গায় বল করা, সেশন অনুযায়ী ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করা। আমি সবসময় বলি টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় উইকেট কী অপ্রত্যাশিত ছিল?
দেখুন অনেক সময় ক্রিকেটের ক্ষেত্রেই না সব ক্ষেত্রেই- আপনি যেটা আশা করবেন তার বিপরীতটাও হতে পারে। আপনার প্রতিপক্ষ এমন কিছু করবে যাতে আপনি সারপ্রাইজ হবেন। কিন্তু ওই লেভেলে গিয়ে আমি আশা করিনি এ কারণে এটা হয়েছে, এটা কোনো অজুহাত না। টপ লেভেলে খেলতে হলে অপ্রত্যাশিত ব্যাপারগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। আমার কাছে মনে হয় আমরা এটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারিনি।
দুইটা ম্যাচ হেরেছি- আপনি জেতেন বা হারে প্রতি সিরিজে শেখার অনেক কিছু থাকে। আপনি যদি শেখা বাদ দেন তাহলে উন্নতি করতে পারবেন না। আমার কাছে মনে হয় ব্যাটিংয়ে স্পিন কীভাবে হ্যান্ডেল করবেন। টেস্ট ক্রিকেটে কিছু সেশন থাকে যেখানে আপনি ডমিনেট করবেন আবার কোনো সেশন থাকবে ডমিনেট করবেন না। পেস বোলাররা নতুন ও পুরান বলে কীভাবে বোলিং করবে। শেষ সেশনে কীভাবে বোলিং করবে, তো শেখার অনেক কিছুই আছে।
টেস্ট এভাবে হার কী ভীতিকর?
না না এটা আপনি যদি বারবার চিন্তা করেন ব্রেইন এমন একটা জিনিস (বুঝি নাই)। আমার কাছে মনে হয় এক্সিকেউশনটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি স্পিন কীভাবে করবেন, কোন ওয়ে তে রান করবেন, কোন দিকে খেললে আপনি সেইফ, কোন দিকে খেললে আপনার ঝুঁকি থাকবে । ওইরকম চিন্তা করে খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যালার্মিং না- এটা আমার অবজার্বেশন এম্নটা কিন্তু অনেকবারই হয়েছে, বাংলাদেশেও কিন্তু হয়েছে। আপনাদের হয়তো প্রত্যাশা বেশি ছিল। অনেকেই মনে করছেন একটা টেস্ট জিতে আমরা হয়তো বিশ্বের এক বা দুই নম্বর দল হয়ে গেছি। ওয়ানডেতে তো আমরা অনেক স্ট্যাবল টিম, টেস্টে না। সেটাও আমাদের বুঝতে হবে। নড়বড়ের কিছুই হয়নি। যেটা বললাম কোন দিকে ঝুঁকি নিয়ে শট, রান করতে হবে সেগুলো বুঝতে হবে।
উইকেট নিয়ে যা কথা…
পেস সহায়ক উইকেট, এটা নির্ভর করবে প্রতিপক্ষ দলের শক্তিমত্তা অনুযায়ী। কারণ প্রতিপক্ষ যদি দক্ষিণ আফ্রিকা হয়, তাহলে ওইভাবে যাওয়া কঠিন। পেস বোলাররা অবশ্যই ইম্প্রুভ করছে। কিন্তু আমি মনে করি ওদের আরও কিছু জায়গায় ইম্প্রুভ করা উচিত। আপনারা খেলা দেখছেন কি না জানিনা আমার মনে নতুন বলে ওদের আরেকটু ধারাবাহিক হওয়া উচিত। বিশেষ করে আরেকটু সামনে বা চার মিটারে বল করতে হবে।
পরিকল্পনা যদি বিস্তারিত বলতে যাই পুরো দিন দলে যাবে। অবশ্যই সবাই তো জিনিসগুলো নিয়ে চিন্তা করে। এমন তো না যে এমন সিচুয়েশনে আমরা প্রথম পড়েছি। আমরা আগেও এই ধরণের পরিস্থিতিতে পড়েছি, বেরও হয়েছি। আমরা জানি এখান থেকে কীভাবে বের হতে হবে।
আপনার নেতিবাচক চিন্তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন..
এটা হতেই পারে। আমি যদি এখন থেকে নেগেটিভ চিন্তা করি তাহলে নিজের কাছে মনে হবে ভীতু। দেখেন আমি যদি ওইরকম চিন্তা করতাম আগের টেস্ট ম্যাচ জেতার পর এরকম ভীতু থাকতাম? আমি যেমন ছিলাম, তেমনই আছি। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যে ভুলটা করেছি, এই ভুলটা যেন নেক্সট সিরিজে না করি। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
কী প্রাপ্তি…
বাংলাদেশ ক্রিকেট এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে যেখানে ব্যক্তিগত অর্জন নিয়ে খুশি হওয়ার জায়গা নেই।। যেটা তিন-পাঁচ বছর আগে ছিল। তাইজুল অনেকদিন পর খেলতে নেমে ৯ উইকেট পেয়েছে, জয় ১৩৭ করেছে। দল যদি রেজাল্ট না করে তাহলে এই প্রাপ্তির মূল্য কমে যায়। তবে অবশ্যই তাঁদের সাধুবাদ জানাতে হয়।
Discussion about this post