বেশ কিছুদিন ধরেই যাই যাই করছিলেন তিনি। তারপরও সবাই আশায় ছিলেন মাঠৈর সেই অপ্রতিরোধ্য পেলে যেভাবে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ডজ দিয়ে করেছেন গোল, সেভাবেই মৃত্যুকে ডজ দিয়ে আবারও ফিরবেন হাসপাতাল থেকে। কিন্তু হলো না, অমোঘ সত্য-মৃত্যু। সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলে খ্যাত পেলে চলেই গেলেন না ফেরার দেশে। গত বৃহস্পতিবার ৮২ বছর বয়সে মারা হেলেন ব্রাজিলের এই কিংবদন্তি ফুটবলার।
সেই ২০২১ সাল থেকেই শঙ্কায় ছিলেন। কোলন ক্যানসারের চিকিৎসার সঙ্গে একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয়। এরপর গত এক মাস ধরে সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ছিলেন তিনি। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী এই ফুটবলার।
গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও তুমুল জনপ্রিয় তিনি। অনেকেই আদর করে তাকে ডাকেন কালো মানিক। সেই আদরের ফুটবলারটির মৃত্যুর খবর দিলেন তারই আদরের কন্যা কেলি নাসিমেন্তো। তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘তোমাকে ধন্যবাদ বাবা। তোমাকে অন্তিম ভালোবাসা, শান্তিতে ঘুমাও।’
অন্যসব ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির মতোই জীবনের গল্প পেলের। একেবারেই অসহায় সুবিধাবঞ্চিত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন তিনি।
ব্রাজিলের সাও পাওলোর রাস্তায় মোজার ভেতরে কাগজ ভরে ফুটবল বানিয়ে খেলতে খেলতেই শুরু। তারপর এই ফুটবলই তাকে নিয়ে গেছে সাফল্যের শিখরে। তিনি হয়ে উঠেন সর্বকালের সেরা। তার গোল সংখ্যা ১২৮১! বিস্ময়কর!
মাত্র ১৭ বছর বয়সে সুইডেনে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে টুর্নামেন্টের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে জেতেন ট্রফি। ফাইনালে সুইডিশদের বিপক্ষে ৪-২ গোলের জয়ে দুটি তার। পরের বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে খেলেন মাত্র দুটি ম্যাচ। মেক্সিকোতে ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে পেলে জয়ের নায়ক। ইতালির বিপক্ষে ৪-১ গোলে ফাইনাল জয়ে গোল করেন।
বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসে পেলেই একমাত্র ফুটবলার যার তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড রয়েছে (১৯৫৮, ৬২ ও ৭০)। এছাড়াও দলের হয়ে ৯২ ম্যাচে ৭৭ গোল করে ব্রাজিলের সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতাও হন এই লিজেন্ড!
তারপর তিনি হয়ে উঠেন গোটা বিশ্বের সবচেয়ে নামী ফুটবলার। কল্পনা করা যায় তার জন্য থেমে গিয়েছিল যুদ্ধ। ১৯৬৭ সালে নাইজেরিয়া তাদের গৃহযুদ্ধে বিরতি টানে যেন দেশটিতে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে পারেন পেলে। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ নাইট উপাধি দেন পেলেকে।
১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর মিনাস গেরাইসের ছোট শহর ট্রেস কোরাকোয়েসে জন্ম। কল্পনা করুন- কতোটা ফুটবল প্রেম ছিল তার। ফুটবলের সরঞ্জাম কিনতে জুতা পালিশ করতেন। ১৯৫৬ সালে ১৬ বছর বয়সে ব্রাজিলিয়ান ক্লাবে অভিষেক। তারপর আর তাকে কে আটকায়? ফুটবল পায়ে ম্যাজিকের জন্ম দিয়ে ইতিহাসের সেরা তিনি। ফুটবল খেলাটা যতোদিন থাকবে ততোদিন ডিয়েগো ম্যারাডোনার মতোই বেঁচে থাকবেন পেলে!
তারপরও ভক্তদের কষ্ট একটাই, এই পৃথিবী ছেড়ে, ‘রাজা চলে গেছেন।’
Discussion about this post