বিজয় দিবস টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের ফাইনালে উঠেছে ইউসিবি এবং প্রাইম ব্যাংক। মিরপুরে তামিম ইকবাল ম্যাজিকে মোহামেডানের বিপক্ষে ২৯ রানে জিতল ইউসিবি। আবাহনীর বিপক্ষে ১৬ রানের জয় দিয়ে ফাইনালে প্রাইম ব্যাংক।
‘তামিমঝড়ে’ ফাইনালে ইউসিবি
আগের ম্যাচে এই মাঠে শূণ্য রানে আউট হয়েছিলেন তামিম ইকবাল। রোববার সেখানেই করলেন ১৩০! তাও আবার মাত্র ৬৪ বলে। মিরপুরে ‘তামিমঝড়ে’ উড়ে গেল মোহামেডানের বোলিং! যে জিতবে-সেই ফাইনালে। এমন সমীকরণের ম্যাচে তামিম সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে তার দল ইউসিবি-বিসিবি একাদশকে ২৯ রানে জিতিয়ে ফাইনালে পৌছে দিলেন।
বছরের শেষদিন বিজয় দিবস টুর্নামেন্টের ফাইনালে তামিম ইকবালের ইউসিবি-বিসিবি একাদশ মুখোমুখি হবে প্রাইম ব্যাংকের সাকিব আল হাসানের।
মিরপুরে ম্যাচের প্রথম ওভার থেকে তামিম ইকবাল চড়াও হন মোহামেডানের বোলারদের ওপর। মাত্র ৩৫ বলে ৫০ এল। ৫২ বলে ১৩ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় সেঞ্চুরি পুরো। সেঞ্চুরির পর আরও তেঁেড়ফুড়ে উঠল তামিমের ব্যাট। ওয়ানডাউনে নামা মিঠুন চৌধুরীর ব্যাটও হাসল ২৭ বলে ৪১ রানে। ২০ ওভারে ইউসিবির স্কোরবোর্ডে জমা ৪ উইকেটে ২১৭ রান।
বিশাল এই টার্গেটের পিছু ধাওয়া করতে নেমে মোহামেডানের শুরুটা হয় স্বপ্নের মতো। জহুরুল ও জুনায়েদের ওপেনিং জুটি ভাঙ্গল ৮.৩ ওভারে এসে। ততক্ষনে স্কোরবোর্ডে রান ১১৮! মনে হচ্ছিল মোহামেডান বোধকরি অনায়াসেই পেরিয়ে যাবে বিশাল টার্গেট। কিন্তু ওপেনারদের বিদায়ের পর বাকিরা ব্যাটিংয়ে পুরোদুস্তর ফ্লপ। জহুরুলের ৩১ বলে ৭ বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কা মাত্র ৩১ বলে ৮০ রানের ইনিংসের মর্যাদা দিতে পারলেন না দলের বাকি ব্যাটসম্যানরা। ওপেনিং জুটিতে উঠল ১১৮ রান। আর গোটা মোহামেডান গুটিয়ে গেল ১৮৮ রানে। বিয়োগফল জানাচ্ছে-শেষ ৭০ রানে মোহামেডান হারিয়েছে ১০ উইকেট!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ইউসিবি-বিসিবি একাদশ: ২১৭/৪ (২০ ওভারে, তামিম ইকবাল ১৩০, মিঠুন আলী ৪১, সাব্বির ২/৫৩)। মোহামেডান ১৮৮/১০ (১৮.৪ ওভারে, জহুরুল ৮০, জুনায়েদ ৩৬, পারভেজ ১৯, মুক্তার আলী ৩/২৯)। ফল: ইউসিবি-বিসিবি একাদশ ২৯ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: তামিম ইকবাল।
ফাইনালে প্রাইম ব্যাংক
সিলেটের পর ঢাকায়ও সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিল এনামুল হক বিজয়ের ব্যাট। তবে রোববার মিরপুরে আবাহনীর বিপক্ষে ১৬ রানে জয়ী ম্যাচে সেঞ্চুরি না পেলেও দলকে ঠিকই ফাইনালে তুলে নিয়ে গেছে এনামুল হকের ঝলমলো ৬৯ রানের ইনিংস। ৫ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ৪৩ বলে এনামুলের ৬৯ রানের কল্যানেই প্রাইম ব্যাংকের মোট যোগাড় ১৭৫ রান। সাকিব ২৫ ও দারুণ ফর্মে থাকা সাব্বির রুম্মান ২৬ রান করলেও প্রাইম ব্যাংকের এই ইনিংসে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়াল ওপেনার এনামুল হক বিজয়ের ব্যাট। রান তাড়ায় নেমে আবাহনী শুরুটা ভালই করেছিল। কিন্তু শুরুর সেই ভালটা তারা ধরে রাখতে পারল কই। এই ম্যাচে নামার আগেই আবাহনীর জন্য টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গিয়েছিল। জিতলেও এই ম্যাচ থেকে সামনে বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এমন ম্যাচে তাই ভাল কিছু একটা করার মটিভেশন খুঁজে পাওয়া দুঃস্কর! ১২ নম্বর ওভারে ৯১ রানে আবাহনীর ৫ম উইকেট পতনের পর এই ম্যাচের ফলাফল পরিস্কার হয়ে পড়ে। শেষের দিকে নাজমুল হোসেন মিলন ব্যাট আবাহনী শিবিরে কিছুটা স্বপ্নের আবেশ ছড়ায়। কিন্তু ততক্ষনে যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ৩ ছক্কা ও ১ বাউন্ডারিতে মিলনের ৩৮ বলে অপরাজিত ৪৬ এবং সোরওয়ার্দি শুভ’র ২৭ বলে হার না মানা ৩৫ রান আবাহনীর হারের ব্যবধান কিছুটা কমায় মাত্র।
বিজয়ের মাসে দারুণ ঝলমলো এনামুলের ব্যাট। টুর্নামেন্টে সবমিলিয়ে পেছনের ৬ ম্যাচে তার রান ২৭১। স্ট্রাইকরেট ১৪৫.৭০। সঙ্গে উইকেটের পেছনে ৪টি ক্যাচ ও ৮টি স্ট্যাম্পিং। ৩১ ডিসেম্বরের ফাইনালে আরেকটি বড়কিছু করতে পারলে এবারের বিজয় দিবস টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টকে পুরোপুরি নিজের করে নিতে পারবেন এই তরুণ ওপেনার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: প্রাইম ব্যাংক: ১৭৫/৬ (২০ ওভারে, এনামুল ৬৯, সাকিব ২৫, রুম্মান ২৬, মাহমুদউল্লাহ ২/২০)। আবাহনী: ১৫৯/৫ (২০ ওভারে, নাজমুল মিলন ৪৬*, শুভ ৩৫*)। ফল: প্রাইম ব্যাংক ১৬ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: এনামুল হক বিজয়।
Discussion about this post