ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আরও একবার শুধু হতাশাই উপহার দিল বাংলাদেশ দল। ইতিহাস গড়লেই কেবল জিতবে দল। এমন সমীকরণের সামনে পারলেন না ব্যাটসম্যানরা। অথচ টার্গেট অনেকটা হাতের নাগালেই ছিল। ঢাকা টেস্টে জিততে বাংলাদেশের দরকার ছিল ২৩১ রান। ঢাকা টেস্টের চতুর্থ দিনে রোববার রেকর্ড গড়তে পারলেন না মুমিনুল হকরা। বলা যায় ব্যাটসম্যানরা দ্বায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেনি। দলেরও তীরে এসে ডুবল তরী।
ঢাকা টেস্টের ফল এসেছে চতুর্থ দিনেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলে নিয়েছে ১৭ রানের রোমাঞ্চকর এক জয়।
বাংলাদেশ ২৩১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে অলআউট ২১৩ রানে। আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩১ রানে তিনি ফিরলে স্তব্ধ হয়ে যায় টাইগার ভক্তরা। জয়ের খুব কাছে এসেও পারল না বাংলাদেশ। একইসঙ্গে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হলো। যদিও ওয়ানডে সিরিজ ৩-০রেত জেতে বাংলাদেশ
নিজেদের মাঠে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ১০১ রানের। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই রান তাড়া করে জিতেছিল দল।
সবমিলিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটা এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। ২০০৯ সালে তাদের মাটিতে ২১৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার জিততে করতে হবে ২৩১। সে লক্ষ্যে খেলতে নেমে তামিম ইকবালের সৌজন্যে শুরুটা দারুণ হয় বাংলাদেশের। কিন্তু
পেস-স্পিনে একের পর এক বাউন্ডারি আসতে থাকে তামিমের ব্যাটে। অন্য দিকে সৌম্য সরকারও বেশ দেখে-শুনে খেলছিলেন। এরমধ্যে দলের পঞ্চাশ হয়ে যায় একাদশ ওভারেই। ১৩ ইনিংস পর উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ পেল বাংলাদেশ। এর কিছুক্ষণ পরই ছন্দ হারায় স্বাগকিরা। দলীয় ৫৯ রানে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট বলে কাট করতে যান সৌম্য। ব্যাট ছুঁয়ে বল কিপারের গ্লাভসে গোত্তা খেয়ে জমা পড়ে স্লিপ ফিল্ডারের হাতে। এদিকে তামিম দ্রুত হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে পথ ধরেন সাজঘরের। ব্র্যাথওয়েটেরই নিরীহ এক বলে আলতো ড্রাইভ করে যেয়ে তিনি ক্যাচ দেন শর্ট কাভারে। এখানে শেষ নয়। চা বিরতির ঠিক আগে রাকিম কর্নওয়ালের বল ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্তও। সে সময় স্বাগকিদের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ৭৮ রান।
চা বিরতির পর ফিরে অবশ্য মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দারুণ খেলেন মুমিনুল হক। চতুর্থ উইকেটে তারা গড়েন ২৩ রানের জুটি। ঠিক এরপরই ওয়ারিক্যানকের ঘূর্ণিতে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন মুশি। আম্পায়ার আউট দিলেও বিশ্বাস হচ্ছিলো না তার। যে কারণে নেন রিভিউ। সেখানে স্পষ্ট দেখা যায় বল তার ব্যাটে ছুঁয়ে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে। ফেরার আগে মুশি করেন ১৪ রান।
মুশফিক ফেরার পর রাকিম কর্নওয়ালকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ডিপ স্কয়ার লেগে ছক্কা মেরে শুরু করা মিথুন আউট হন ১০ রান করে। তার বিদায়ে চাপে পড়ে টিম টাইগার্স। শঙ্কা জাগে মিরপুর টেস্ট হারের। তবে ষষ্ঠ উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন মুমিনুল-লিটন দাস। ধীরে ধীরে দলীয় স্কোর বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের জুটিও জমেছিল বেশ। কিন্তু তাদের পথচলায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ান সেই ওয়ারিক্যান। তার অফ স্ট্যাম্পে করা বল ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে শর্ট মিড-উইকেটে কর্নওয়ালের হাতে ধরা পড়েন মুমিনুল। তা বিদায়ে ভাঙে ষষ্ঠ উইকেট জুটির ৩৪ রানের ইনিংস। ফেরার আগে মুমিনুল করেন ৩ চারে ২৬।
এর আগে ৩ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু শুরু থেকে ক্যারিবীয়দের দারুণ পরীক্ষা নেন আবু জায়েদ রাহী। প্রথমে জোমেল ওয়ারিক্যান ও পরে কাইল মেয়ার্সকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি।
প্রথম ঘণ্টায় আবু জায়েদের জোড়া ছোবলের পর দ্বিতীয় ঘণ্টার শুরুটাও বাংলাদেশের হয় দারুণ। তাইজুল ফেরান বিপজ্জনক জার্মেইন ব্ল্যাকউডকে। বল ড্রাইভ করতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানের পা ক্রিজ থেকে বাইরে বেরোয় সামান্য। দুর্দান্ত ক্ষীপ্রতায় বেলস উড়িয়ে দেন কিপার লিটন। এরপর এনক্রুমা বোনার ও জশুয়া ডি সিলভা লাঞ্চের আগে প্রতিরোধ গড়েন। তবে লাঞ্চের পর আর পারেননি তারা। জশুয়াকে ২০ রানে থামান তাইজুল। আলজারি জোসেফ গিয়ে বিশাল এক ছক্কা মারেন নাঈম হাসানকে। পরের ওভারে জোসেফকেও থামিয়ে দেন তাইজুল। নাঈম এরপর এক ওভারেই নিয়ে নেন এনক্রুমা বোনার (৩৮) ও রাকিম কর্নওয়ালের উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসেও তাইজুলের শিকার ৪ উইকেট। ৩ উইকেট নেন নাঈম হাসান। আবু জায়েদ রাহী নেন ২টি উইকেট।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বোলাররা পথ করে দিলেও পারেন নি ব্যাটসম্যানরা। তাদের ব্যর্থতায় সর্বনাশ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই বাংলাদেশ। ২-০তে সিরিজ জিতে দেশে ফিরছে ক্যারিবীয় ক্রিকেটাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৪০৯/১০
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৯৬/১০
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৪১/৩) ৫২.৫ ওভারে ১১৭ (বনার ৩৮, ওয়ারিক্যান ২, মেয়ার্স ৬, ব্ল্যাকউড ৯, জশুয়া ২০, জোসেফ ৯, কর্নওয়াল ১, গ্যাব্রিয়েল ১*; তাইজুল ২১-৪-৩৬-৪, নাঈম ১৫.৫-৫-৩৪-৩, মিরাজ ৬-১-১৫-১, আবু জায়েদ ১০-৪-৩২-২)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৬২ ওভারে ২১৩/১০ (টার্গেট ২৩১)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে জয়ী
সিরিজ: ২ ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০তে জয়ী
Discussion about this post