শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ টেস্ট দল চূড়ান্ত হয়েছে মঙ্গলবারই। ১৬ সদস্যের এই দলে আছেন মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, লিটন দাস, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, কামরুল ইসলাম রাব্বি, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন, শুভাশীষ রায় চৌধুরী ও রুবেল হোসেন।
দল ঘোষণার দিন প্রধান নির্বাচক কথা বলেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। এখানে সেই সংবাদ সম্মেলনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল-
ইমরুল নেই যে কারনে-
ইমরুল আমাদের অভিজ্ঞ একজন খেলোয়াড়। দূর্ভাগ্যবশত হায়দরাবাদ টেস্টে সে ইনজুরিতে পড়ে গিয়েছে। ফিটনেসের জন্য ওকে আমরা দুটি রাউন্ড দেখবো। ১ তারিখে ওর সেকেন্ড রাউন্ডটা শেষ হবে। দুইদিন বিশ্রাম নেওয়ার পর চার তারিখে ফিটনেস টেস্ট দেবে। ওর পজিশন যদি ভালো থাকে সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য তাকে আমরা দলে অন্তর্ভুক্ত করব।
সেক্ষেত্রে স্কোয়াডটা দাঁড়াবে ১৭ জনের। যেহেতু লম্বা সফর। নিউজিল্যান্ডে আমরা বাড়তি কিছু খেলোয়াড় নিয়ে গিয়েছিলাম। আর ইমরুল কায়েসতো আমাদের ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টিতেও বিবেচনায় আছে। সুতরাং তাকে আমাদের যোগ করতে কোন অসুবিধা হবে না।
মুস্তাফিজ সেরে উঠছেন দ্রুত…
আগের চেয়ে এখন যথেস্ট উন্নতি করেছে। যার কারনে আমরা বিসিএলে ওকে পর পর দুটি ম্যাচ খেলিয়েছি। দুটি ম্যাচে আটদিন খেলার পর ওর অবস্থা কি হয় সেটা দেখাই ছিল উদ্দেশ্যে। প্রথম ম্যাচে থেকে দ্বিতীয় ম্যাচের সেকেন্ড দিন থেকে তার উন্নতি ছিল যথেস্ট ভালো। বোলিংও অনেক ভালো করেছে। আমার মনে হয়েছে তিন ফরম্যাট খেলতে মুস্তাফিজের কোন অসুবিধা হবে না।
লিটন যে কারণে দলে
লিটনকে ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে নেওয়া হয়েছে। তবে আমার মনে হচ্ছে ইমরুল অবশ্যই ফিটনেস টেস্টে উৎরে যাবে। এখন দেখার বিষয় দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার পর ওর অবস্থাটা কি দাঁড়ায়। মাসল ইনজুরি আগের থেকে বলা খুব মুশকিল। অনেকসময় মনে হয় সমস্যা নেই। কিন্তু লংগার ভার্সনে সেশনের পর সেশন ফিল্ডিং করতে হয়। আমরা আমাদের ফিজিও ও ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন ইমরুল যদি ফিটনেসে উৎরে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে সে দলে ফিরবে।
মুশফিক কি তিন দ্বায়িত্বেই থাকবেন?
বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। আমরা যেখানেই যাই একজন সেকেন্ড উইকেট কিপার সঙ্গে নিয়ে যাই। মুশফিক আমাদের নাম্বার ওয়ান উইকেট কিপার। আমার মনে হয় তিনটি পজিশনের কোনটিতেই মুশফিকের অসুবিধা নেই। এখন নিজে থেকে যদি মুশফিক কিছু না বলে সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।
দল নির্বাচনের প্রক্রিয়া যেভাবে
আমাদের ‘এ’ দলের সফর হচ্ছে না অনেকদিন ধরে। সেই সঙ্গে গত এক বছরে এইচপির কোন প্রোগ্রাম আমরা করতে পারিনি। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই এখানে খেলোয়াড়গুলো আসে। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কিছু খেলোয়াড় কিছুদিন ধরেই অসাধারণ পারফরম্যান্স করছে। নাম যদি বলি তুষার ইমরান ও অলক কাপালিরা ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফরম্যান্স করে চলছে। এদেরকে কিন্তু একটা প্লাটফর্ম আমাদের দিতে হবে। অবশ্যই এরা আমাদের নজরে আছে। বয়সের জন্য তাদেরকে আমরা আমাদের নজরের বাইরে নিয়ে যাইনি। ওদেরকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসতে হলে অবশ্যই ‘এ’ টিম কিংবা এইচপি টিমের হয়ে কোন সফর করতে হবে। দেখতে হবে তাদের পজিশন কোথায়।
আমরা আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে সব সময় আলোচনা করছি। বিকেএসপিতে যে উইকেটে খেলা হয়, পৃথিবীর আর কোন দেশে এমন ফ্লাট উইকেটে খেলা হয় না। যে সমস্ত খেলোয়াড়রা রান করছে তাদেরকে সুযোগ দিতে গেলে অন্য একটা ফ্লাটফর্ম আগে তৈরি করে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার স্বক্ষমতা দেখতে পারব। তখন তাদেরকে জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করা হবে। এখন ২৪ জন খেলোয়াড়দের একটা পুল আছে। সেখান থেকেই আমরা খেলোয়াড়দের বিবেচনা করছি। আমার মনে হয় ‘এ’ দলের সফরটা যদি আমরা রেডি করতে পারি। এই সমস্ত খেলোয়াড়কে আমরা সুযোগ করে দিতে পারবো।
শফিউল আউট রুবেল ইন
শফিউল ইসলাম হায়দরাবাদে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার পর একটু সমস্যা হয়েছে স্টোমাক মাসল! আমাদের কাছে রিপোর্ট আসছিল এটা হার্নিয়ার সমস্যাও হতে পারে। ওখানে ওর টেস্ট করা হয়েছে। আমরা ওর ফিটনেস নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। সেই হিসেবে বিসিএলের ম্যাচের জন্য ওকে আমরা কনসিডার করছি এখন। এখন ওর ফিটনেসের লেভেলটা দেখতে হবে। এখন সমস্যা হচ্ছে, এখানে ফিট দেখে আমরা নিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু ওখানে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে। এই মুহুর্তে ফিটনেসের ব্যাপারে আমরা অধিক মাত্রায় গুরুত্ব দিয়েছি। পুরোপুরি সুস্থ না হলে তাদের নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার।
রুবেল বিসিএলে পরপর তিনটি ম্যাচ খেলেছে। সেখানে ভালো বোলিং করেছে। বিশেষ করে এই রাউন্ডের আগের রাউন্ডটায় অসাধারণ বোলিং করেছে। আমার মনে হয় ওর এখন অ্যাবিলেটি আছে টেস্ট ক্রিকেটকে কিছু দেওয়ার।
সোহান কেন নেই?
যদি উইকেট কিপিং নিয়ে প্রশ্ন হয় তাহলে সোহান অনেক ভালো উইকেট কিপার। কিন্তু যদি ব্যাটিং বিষয়টি সামনে আনেন সেক্ষেত্রে এগিয়ে লিটন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই লিটনকে আমরা ভালো ব্যাটসম্যান হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেছি।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লিটন ইনজুরিতে পড়ার আগে দ্বিতীয় উইকেট কিপার হিসেবেই দলে ছিল। লিটনের কিপিংয়ের ব্যাপারে আমরা যথেস্ট আত্মবিশ্বাসী। এজন্যই তাকে আমরা সুযোগ দিয়েছি।
৫ পেসার কেন দলে?
সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার গলে অনুষ্ঠিত টেস্টে সাউদি কিন্তু অলমোস্ট আট উইকেট নিয়েছে। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়। গলে কিন্তু স্পিনের উপর তার সব সময় নির্ভর করে না। সেই হিসেবে আমরা চিন্তা করেছি।শ্রীলঙ্কার গলে ঘাসের উইকেট থাকতে পারে। ওরা স্পোর্টিং ট্রাক দিলে হয়তো তিনটা সিমার নিয়ে খেলতে হতে পারে। তো এখান থেকে বসে বলা সম্ভব নয়, আমরা কোন ধরনের উইকেট পাচ্ছি।
পিসারাতে আমরা সব সময়ই জানি টার্নি উইকেট হয়। সেই হিসেবে গলেরটা কিন্তু ভিন্ন হবে। হোম কন্ডিশনে কিভাবে উইকেট বানাতে এটা আমরা এখান থেকে বসে ভাবতে পারবো না। ওদের নিজস্ব একটা প্লান থাকে। আমরা চেষ্টা করেছি সবকিছু বিবেচনা করে দলটা বানাতে।
পাঁচজন পেসার নেওয়ার একটা যুক্তি আছে। আমাদের দুইদিনের একটা প্রস্তুতি ম্যাচও আছে। শ্রীলঙ্কার কন্ডিশন আমাদের এখান থেকে অনেক ইউনিক। আমাদের রবিউলকে নিয়ে বাজে একটি অভিজ্ঞতা ছিল। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার পর টেস্টের প্রথমদিন থেকেই তার সমস্যা হচ্ছিল। আমাদের পেসারদের এক নাগারে অনেক ওভার বল করার অ্যাবেলিটি কম আছে।
Discussion about this post