সিলেটের সন্ধ্যায় আজ লাল-সবুজ পতাকার মতোই উড়ছিল রংপুরের সাফল্য গাথা। গ্যালারির চিৎকার, খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস আর সোনালি আলোয় ভেসে যাচ্ছিল পুরো মাঠ। কারণ, জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আবারও রাজত্ব স্থাপন করল উত্তরবঙ্গের দল রংপুর বিভাগ। টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে তারা প্রমাণ করল-তাদের জয় কাকতালীয় নয়, ধারাবাহিকতারই নাম রংপুর।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ঘাসে যখন খুলনার ব্যাটসম্যানরা পা রাখেন, তখন তাদের চেহারায় ছিল আত্মবিশ্বাস। কিন্তু সেটি টিকল না এক ওভারও। নাসুম আহমেদের স্পিনে দ্বিতীয় বলেই ফেরেন ওপেনার ইমরানউজ্জামান। যেন প্রথম ঝড়েই কেঁপে উঠল খুলনা।
এরপর আসে পরপর বিপর্যয়। রান নিতে গিয়ে রান আউট হন এনামুল হক বিজয়। তিন বল পরই সৌম্য সরকার বোল্ড। তখনো পাওয়ারপ্লের আলো নিভে যায়নি, কিন্তু খুলনার ব্যাটিং যেন ইতিমধ্যেই অন্ধকারে।
দলটি একের পর এক উইকেট হারিয়ে যখন দিশেহারা, তখন অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন কিছুটা আলো দেখানোর চেষ্টা করেন। ৩২ বলে ৪৪ রানের ইনিংসটি ছিল একলা এক লড়াই। তাঁর সঙ্গী মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ১৩ বলে ২৪ রানে কিছুটা গতি ফেরান। কিন্তু রংপুরের বোলারদের শৃঙ্খল বোলিংয়ে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
আব্দুল্লাহ আল মামুন এক ওভারেই তুলে নেন মিঠুন ও অভিষেক দাসকে। খুলনার ইনিংস শেষ পর্যন্ত থামে ১৩৬ রানে-একটি ফাইনালের জন্য যা ছিল অনেক কম।
১৩৭ রানের লক্ষ্য নিয়ে নামার সময় রংপুরের খেলোয়াড়দের চোখে ঝিলিক ছিল আত্মবিশ্বাসের। ওপেনিংয়ে নেমে নাসির হোসেন যেন নিজের পুরোনো রূপে ফিরে গিয়েছিলেন। আগের ম্যাচে ফিফটি পাওয়া এই ব্যাটার ফাইনালেও খেললেন ৩১ বলে ৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংস।
তার সঙ্গী জাহিদ জাভেদ ২৪ বলে ২৭ রান করে আউট হলেও, তখন পর্যন্ত ম্যাচের দিক অনেকটাই স্পষ্ট। ৭ ওভারে ৬১ রান তুলে রংপুর তৈরি করে নেয় জয়ের ভিত্তি।
নাসিরের ব্যাটিং ছিল শৈল্পিক ও আগ্রাসনের মিশ্রণ-ড্রাইভে পরিমিতি, পুলে নিখুঁততা, আর শর্ট বলে দাপট। প্রতিটি রান যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল, কেন এই ক্রিকেটার এখনও বড় মঞ্চে নাম শোনানোর মতো সামর্থ্য রাখেন।
নাসির ফিরলে দায়িত্ব নেন অভিজ্ঞ নাঈম ইসলাম ও অধিনায়ক আকবর আলী। দুজনের পার্টনারশিপে ছিল পরিণত ক্রিকেটের নিদর্শন। তাড়া করার কোনো অস্থিরতা নয়, বরং বল অনুযায়ী খেলা-এমনই ছিল তাদের কৌশল।
শেষ পর্যন্ত নাঈম ৩২ বলে ৪০ ও আকবর ১৫ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। রংপুরের জয় আসে ১৮ বল হাতে রেখে, ৮ উইকেটে।
রংপুরের এই শিরোপা জয় শুধু একটি ম্যাচের নয়, পুরো মৌসুমের গল্প। লিগ পর্বে যখন তারা তিনটি ম্যাচ হারায়, তখন অনেকে ভেবেছিলেন-এবার হয়তো রংপুরের রাজত্ব শেষ। কিন্তু নেট রান রেটের সমীকরণ মিলিয়ে এলিমিনেটরে ওঠার পর তারা যেন এক অন্য রংপুরে পরিণত হয়।
এলিমিনেটর, কোয়ালিফায়ার, আর ফাইনাল-টানা তিন ম্যাচ জিতে তারা দেখিয়ে দিয়েছে, আসল চ্যাম্পিয়ন চাপে পড়লে নয়, চাপে থেকেই সেরাটা বের করে আনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
খুলনা: ২০ ওভারে ১৩৬/৮ (মিঠুন ৪৪, মৃত্যুঞ্জয় ২৪; আল মামুন ২/১৫, নাসুম ১/১৭)
রংপুর: ১৭ ওভারে ১৩৮/২ (নাসির ৪৬, নাঈম ৪০*; শেখ পারভেজ ১/১২, আফিফ ১/১৬)
ফল: রংপুর ৮ উইকেটে জয়ী
Discussion about this post