মিরপুরের চেনা উইকেট, তবে অচেনা শুরুর ধাক্কা। প্রথম ওভারেই ফিরে যান তানজিদ হাসান। দ্বিতীয় ওভারে লিটন দাস। মাত্র ৭ রানেই দুই ওপেনারের বিদায়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপের মুখে নেমে পড়ে নতুন জুটি-তাওহিদ হৃদয় ও পারভেজ হোসেন। শুরুতেই হৃদয় ফ্রি হিটে লং অন দিয়ে মারেন দুর্দান্ত ছক্কা। পরের ওভারেই পারভেজ খেলেন স্লগ সুইপ, বল আছড়ে পড়ে বাউন্ডারির বাইরে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দ্রুত চারটি ছক্কায় চাপ দূরে ঠেলে জয়ের পথে এগিয়ে যায় দল।
বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল মাত্র ১১১ রান, তবে শুরুতেই দুই উইকেট হারানো যে চাপ সৃষ্টি করেছিল, তা হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু হৃদয় ও পারভেজ ঠিক সেখানেই দেখিয়েছেন আত্মবিশ্বাস, নিয়ন্ত্রণ ও ইন্টেন্টের নিখুঁত সমন্বয়। মাত্র ৩ ওভারে ৪টি ছক্কায় পাল্টে গেছে ম্যাচের মোমেন্টাম। এরপর দেখেশুনে খেলে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন তাঁরা।
পারভেজ একাই মেরেছেন ৫টি ছক্কা, করেছেন ৩৯ বলে ৫৬ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস। পুরো দলের মোট ছক্কার সংখ্যা ৭টি-যা ছোট লক্ষ্যেও আধিপত্যের চিত্র দেখায়। ম্যাচ শেষে পারভেজ নিজেই বললেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন ছক্কা মারার ক্ষমতাই সবচেয়ে বড় অস্ত্র, এবং বাংলাদেশ দলে সেটি সবারই আছে।
পরিসংখ্যানেও তার প্রমাণ মিলছে। ২০২৪ সালে ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের ছক্কা সংখ্যা ৮৮টি, গড়ে ম্যাচপ্রতি প্রায় ৯টি। আগের ১৯ বছরে যেখানে মাত্র ৯টি ম্যাচে ১০ বা তার বেশি ছক্কা মারতে পেরেছিল বাংলাদেশ, সেখানে গত দুই বছরেই হয়েছে ৭টি।
এখনকার ব্যাটাররা এককভাবেও ছক্কার দাপট দেখাচ্ছেন। পারভেজ ১৬ ইনিংসে মেরেছেন ২৪টি ছক্কা, তানজিদ ও জাকের আলি ২৮ ইনিংসে করেছেন ৩২টি করে। হৃদয়ের ছক্কার সংখ্যা ৩৭টি, ৩৯ ইনিংসে।
পারভেজ এই ম্যাচে শুধু দলকে জেতাননি, নিজের আত্মবিশ্বাসও ফিরে পেয়েছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ দুটি ম্যাচেই ছিলেন শূন্য রানে আউট। পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিল হ্যাটট্রিক শূন্যের আশঙ্কা। তার ওপর শুরুতেই পড়েছিল দুই উইকেটের চাপ। এই সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে বড় ইনিংস খেলার কৃতিত্ব দেন ‘বর্তমানে থাকার’ মানসিকতাকে।
তার ভাষায়, “শ্রীলঙ্কার ম্যাচটা শেষ হয়ে গেছে। আমি শুধু এই সিরিজ নিয়েই ভাবছিলাম, পরের বল কী হবে সেটাই মাথায় ছিল।”
ম্যাচ চলাকালীন পারভেজ ও হৃদয় গড়েন দ্বিতীয় উইকেটে ৬২ বলে ৭৩ রানের জুটি, যা ভিত্তি তৈরি করে দেয় জয়ের। পরে জাকের আলির সঙ্গে ১৮ বলে ৩২ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা নিয়ে পারভেজ বলেন, ‘আমরা ইন্টেন্ট ঠিক রেখে যতটা কম ঝুঁকি নিয়ে খেলতে পারি, সেটার দিকেই মনোযোগ দিয়েছি। ছোট একটা জুটি গড়ার চেষ্টা ছিল, যেখান থেকে ম্যাচটা আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি।’
মিরপুরের উইকেট নিয়ে আগেও অনেক বিতর্ক ছিল। এবারও পাকিস্তান কোচ মাইক হেসন ম্যাচ শেষে প্রকাশ করেন অসন্তোষ। তবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের সাফল্যের পেছনে ছিল উইকেট দ্রুত বুঝে নেওয়ার সক্ষমতা, সেটা মনে করিয়ে দেন পারভেজ, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল, যত দ্রুত উইকেটটা বুঝে নিতে পারি, ততই ভালো। আমরা সেটি করতে পেরেছি। দুটি উইকেট পড়া স্বাভাবিক, তবে আমরা পরের ব্যাটাররা ভালোভাবে সামলে নিয়েছি।’
এই ম্যাচ ছিল মে মাসের পর মিরপুরে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি। ঘরের মাঠে, চাপে, উইকেট নিয়ে অনিশ্চয়তা-সবকিছুর মাঝে পারভেজ-হৃদয়রা দেখিয়েছেন নতুন বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস। একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার।
Discussion about this post