সেই শুরু থেকেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পিছু নিয়েছে বিতর্ক। তা থেকে যেন মুক্তি নেই। চতুর্থ আসর বেশ ভালই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই পাতানো ম্যাচ কলঙ্ক লাগল এই টুর্নামেন্টের আগে। এনিয়ে সরব বাংলাদেশের মিডিয়া। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলো’তে এনিয়ে মঙ্গলবার ছাপা হয়েছে একটি প্রতিবেদন। এখানে পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল-
বিপিএল মানেই সন্দেহের বাতাবরণ। এই যে এত খেলা, এত হার-জিত; সবই কি ক্রিকেটীয়! মাঠে যে ফলাফলটা হচ্ছে, যেসব রানআউট-ক্যাচ পড়া দর্শকেরা দেখছেন, সেগুলোর চিত্রনাট্য আগেই লেখা হয়ে থাকছে না তো?
সব বিপিএলেই এসব প্রশ্ন থাকে। এবারের বিপিএলে তা তুলে দিয়েছে ক্রিকেটার জুপিটার ঘোষের একটা অভিযোগ। ‘প্লেয়ার্স ড্রাফটে’র তালিকায় না থাকলেও পরে ৫ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে রংপুর রাইডার্সে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। ২৫ শতাংশ টাকা পেয়েও গেছেন। কিন্তু মাঠে নামার সৌভাগ্য হয়নি। ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে বহিষ্কার হন জুপিটার। তবে জুপিটারের পাল্টা অভিযোগ, রংপুর রাইডার্সের ম্যানেজার ও জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার সানোয়ার হোসেন টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তাঁকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেটা না মানাতেই এই শাস্তি। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ঠিক নয়।
বিসিবির দুর্নীতি দমন ইউনিটের (আকসু) কাছে কাল আনুষ্ঠানিকভাবেই সানোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন জুপিটার। ব্যাখ্যা করেছেন ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকসুকে না জানানোর কারণও। একে তো তখন এর কোনো প্রমাণ তার কাছে ছিল না, তা ছাড়া এ ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আগে কখনো হননি বলে একটু নাকি আতঙ্কিতও হয়ে পড়েছিলেন। জুপিটারের অভিযোগ টুকে নিয়ে এখন তা প্রতিবেদন আকারে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে জানাবে আকসু। গভর্নিং কাউন্সিল প্রয়োজন মনে করলে ঘটনার তদন্ত করবে। তার আগ পর্যন্ত জুপিটারের সঙ্গে সানোয়ারকেও বিপিএল থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।
সানোয়ার সে সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে কাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমিও চাই আগে বিষয়টার সুরাহা হোক। আকসু কর্মকর্তাকে আমি নিজেই কাল (পরশু) অনুরোধ করেছি যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টি পরিষ্কার করতে।’ জুপিটারের অভিযোগ সত্য নয় বলেও দাবি সানোয়ারের, ‘এটা এক শ পার্সেন্ট মিথ্যা এবং বানোয়াট অভিযোগ। হয়তো বহিষ্কারাদেশের সিদ্ধান্তটি আমার মাধ্যমে জেনেছে বলে এখন আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে সে এসব বলছে। কিন্তু ও যা-ই বলুক, সেটার প্রমাণ দিতে হবে।’
বিতর্ক শুধু জুপিটারেই সীমাবদ্ধ নেই। রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে রংপুর রাইডার্সের ২৫ নভেম্বরের ম্যাচটিও এখন যেতে পারে আতশি কাচের নিচে। মুঠোফোনে দুজন ব্যক্তির ইংরেজি কথোপকথনের একটি অডিও বার্তা থেকেই এই শংকা। ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডের অডিওতে একজন অন্য প্রান্তের ব্যক্তিকে জানাচ্ছেন, পরের দিন রাজশাহীর বিপক্ষে ম্যাচে আফ্রিদি খেলবেন না। তাঁর পরিবর্তে দলে নেওয়া হবে নাসির জামশেদকে। এরপর তিনি বলেন, ‘উই উইল লুজ, ইয়ে হানড্রেড পার্সেন্ট পাক্কা। পাক্কা নিউজ।’ ম্যাচের আগে আর কোনো খবর থাকলে সেটাও জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। মিরপুরে সেদিন রাজশাহীর ১৬২ রান তাড়া করে রংপুর রাইডার্স ম্যাচ হেরেছে ১২ রানে। কয়েক দিনের জন্য দেশে ফিরে যাওয়ায় আফ্রিদি যে ওই ম্যাচে খেলবেন না, সেটি আগেই জানা থাকলেও তাঁর জায়গায় নাসির জামশেদকেই নিয়েছিল রংপুর।
রংপুর-রাজশাহীর ওই ম্যাচের পরদিন মুঠোফোনে অজ্ঞাত নম্বর থেকে অডিও বার্তাটি পান জুপিটার এবং বিসিবির দু-একজন কর্মকর্তাও। আকসুর সংগ্রহেও সেটি আছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রংপুরের ম্যানেজার সানোয়ার
অবশ্য বলেছেন, ‘এ রকম কোনো কিছু আমার জানা নেই। কোনো অডিও-ও শুনিনি।’
রংপুর রাইডার্স খেলোয়াড়দের রুমে বাইরের লোক রাখে বলে অভিযোগ জুপিটারের। কাল জানা গেল, ম্যাচ চলাকালীন একজন বিদেশিকে ড্রেসিংরুমে রাখার চেষ্টা করেও আকুসর কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি। ওই বিদেশিকে ‘সন্দেহজনক’ মনে হওয়ায় তাঁর অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডে স্বাক্ষর করেননি আকসুর কর্মকর্তা।
বিপিএল-ফিক্সিংয়ের আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে বরিশাল বুলসের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর সংগীতশিল্পী আসিফ আকবরের ফেসবুক স্ট্যাটাস। বিপিএলে ফিক্সিং হচ্ছে, এমন সন্দেহ থেকে তিনি কাল স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘১৭, ১৮, ১৯ এবং ২০ নম্বর ওভারগুলোয় ব্যাটসম্যানরা হয়ে যায় প্রতিবন্ধী আর বোলাররা হয়ে যায় বাঘ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট জুয়ার অপর নাম। দর্শক হিসেবে মাঠে যাই খেলা দেখতে, আর আমাদের নিয়ে খেলা হয় টেবিলে।’ আসিফের অভিযোগের তির নিজ দল বরিশাল বুলসের খেলোয়াড়দের দিকেই, ‘আমার দল বরিশাল বুলসের বিদেশি ও দেশি খেলোয়াড়দের একটা অংশ ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত আমি নিশ্চিত, প্রমাণ নেই। তবে বিসিবি এবং আকসু যদি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেয়, অবশ্যই তারা প্রমাণ খুঁজে পাবে।’
এমন স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আসিফ মুঠোফোনে বলেছেন, ‘কারও নাম বলব না, তবে আমাদের দলের সাত-আটজন খেলোয়াড়কেই আমার সন্দেহ। আমি কথাটা ফ্র্যাঞ্চাইজির মুখপাত্র হয়ে বলছি না। এটা আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ।’
Discussion about this post