সেন্ট কিটসের আকাশে তখনো আলো, তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডাগআউটে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। হোটেলে ফেরার সময় পর্যন্ত খেলোয়াড়দের চোখে মুখে সেই অপ্রত্যাশিত হারের ভার। আর অপর প্রান্তে? মিচেল মার্শের হাসিমাখা মুখ, চোখে সন্তুষ্টির দীপ্তি-যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না, পুরো সিরিজটা এমন হবে!
‘সিরিজের আগে ভাবতেও পারিনি ৫-০ হবে,’ ম্যাচ শেষে বলেছিলেন মার্শ। ক্রিকেটে তো এমন জয়কে বলে ক্লিন সুইপ, কিন্তু এই সফর যেন ছিল একেবারে ‘সম্পূর্ণ আধিপত্য’।
প্যাট কামিন্স শুরুটা করেছিলেন টেস্টে। ৩-০ ব্যবধানে জয় দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিয়েছিলেন মেরুদণ্ড-সোজা করে দাঁড়াবার আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাস ছুঁয়ে গিয়েছিল মার্শের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডকেও। ফলাফল: ৫ ম্যাচে ৫ জয়, কোনো রকম নাটক ছাড়াই। হিসেব মেলালে দাঁড়ায় ৮-০। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে এক সফরে সর্বোচ্চ জয়-একটিও হার বা ড্র নেই।
২০১৭ সালে ভারত শ্রীলঙ্কা সফরে ৯ ম্যাচ জিতেছিল টানা, তবে এবার অস্ট্রেলিয়া সেই রেকর্ডে হাত বাড়িয়েও ছুঁতে পারেনি। তাতে কী? ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলো তাদের নতুন করে চিনেছে।
সিরিজের শেষ ম্যাচে নাটকও ছিল, উত্তেজনাও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭০ রান তুলেছিল হেটমায়ারের অর্ধশতকে ভর করে। কিন্তু প্রতিপক্ষের বোলিং ইউনিট যেন জানতো, কখন, কোথায়, কাকে আঘাত করতে হবে। বেন ডোয়ার্শিস একাই ভেঙে দেন হেটমায়ারদের ঘুঁটি।
রান তাড়ার শুরুতে যখন মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আর জশ ইংলিস সাজঘরে ফিরে যান দ্রুত, মনে হয়েছিল হয়তো এই ম্যাচে একটু লড়াই হবে। কিন্তু তখনই গ্রিন, ডেভিড আর ওয়েন মিলে আক্রমণ চালান শূন্য থেকে। ব্যাটে ঝড় তুলে তারা পাল্টে দেন ম্যাচের গল্প। মাঠে তখন কেবল একটাই ভাষা-অস্ট্রেলিয়া।
সিরিজ শেষে ক্যামেরন গ্রিন হয়েছেন সিরিজসেরা, আর ম্যাচসেরার পুরস্কার গেছে ডোয়ার্শিসের হাতে। কিন্তু সত্যিকারের জয়টা এসেছে একসাথে খেলতে পারার মন্ত্র থেকে।
মিচেল মার্শ যেমন বলেছেন, ‘চতুর্থ ম্যাচ জেতার পর আমরা কথা বলেছিলাম-আমাদের দল যদি ইতিহাসে নিজের জায়গা করে নিতে চায়, তাহলে শেষ ম্যাচটাও জিততেই হবে।’
এবার অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাচ্ছে দেশের মাটিতে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলতে। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ? তাদের সামনে এখন আরেকটি চ্যালেঞ্জ-পাকিস্তানের বিপক্ষে নতুন করে জেগে ওঠা।
Discussion about this post