বার্বাডোসের কেনসিংটন ওভালে কাল সাকিব আল হাসানের জাদুকরি স্পিন ভেল্কিতে কুপোকাত ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো রেড স্টিল ব্যাটসম্যানরা। অভিভূত দর্শক-সমর্থক সবাই। অভিভূত হতেই হবে। কারণ তার সাফল্য যে আকাশছোঁয়া। যত আগুনঝরা আর বারুদমাখা বোলিংই হোক না কেন, টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে একজন বোলারের কোটাই মোটে চার ওভার। সেখানে ৬ উইকেট শিকার! কঠিন কর্ম। কাল বার্বাডোসের কেনসিংটন ওভালে ঠিক সে সাফল্যই দেখিয়েছেন এ বাঁহাতি স্পিনার। তাও মাত্র ৬ রানে। যা ক্রিকেটের এ সংক্ষিপ্তততম ফরম্যাটের যে কোনো আসরে দ্বিতীয়সেরা বোলিং স্পেল। আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে সেরা বোলিং ফিগার শ্রীলঙ্কার অজন্তা মেন্ডিসের (৮ রানে ৬ উইকেট)। আর সব আসর মিলে সেরা বোলিং ফিগারটি ইংলিশ কাউন্টি দল গ্ল্যামারগনের অ্যারল সাপিয়ার (৫ রানে ৬ উইকেট)।
কাল সেই স্মৃতিই যেন ফিরে এসেছিল। চার ওভারের টানা স্পেলে ছয়-ছয়জন ব্যাটসম্যানকে আউট। শুরুই উইকেট দিয়ে। ম্যাচের ছয় নম্বর ওভারে বল হাতে নিয়েই নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান রস টেলরের উইকেট। লেগ-মিডল স্টাম্পে পিচ পড়া ডেলিভারি রস টেলর অনসাইডে খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে লেগবিফোর উইকেট। সাকিব কিছুটা সৌভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, টেলরের পায়ের উপরের অংশে লেগেছিল বল। সে কারণেই কিউই এ ক্রিকেটার মাথা নাড়তে নাড়তেই সাজঘরের দিকে পা বাড়ালেন। কিন্তু তারপর যে পাঁচজন আউট হয়েছেন, তাদের আর বলার কিছুই ছিল না।
দ্বিতীয় ওভারে তিনটি ডট। পরের তিন বলে ৩ রান। তৃতীয় ওভারে ম্যাজিক শুরু! প্রথম বলেই আউট ডোয়েইন ব্রাভো। লেগবিফোর উইকেট। আর্মারে বিভ্রান্ত। সামনের পায়ে টার্নের আশায় খেলতে গিয়ে ব্যর্থ। ফ্রন্টফুটে লাগার পর লেগবিফোর উইকেট। চতুর্থ বলে ফের উইকেট। অফ স্টাস্পের উপরে থাকা ডেলিভারিকে ডিফেন্স করতে গিয়ে টার্নে পরাস্ত বাঁহাতি নিকোলাস পোরান। ব্যাটের ভেতরে লেগে বল ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে কায়রন পোলার্ডের হাতে। ওভারের শেষ বলে কুপার সুইপ করতে গিয়ে ডাউন দ্য লেগ বোল্ড!
মেডেনসহ ৩ উইকেট। চতুর্থ ওভারে তিনটি ডট বল। দুটি রান; একটি লেগবাই । প্রথম বলেই এস বদ্রি তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড। ছয় নম্বর বলে আউট কেভিন ও’ব্রায়েন। অনসাইডে ঘোরাতে যান আইরিশ এ ব্যাটসম্যান। ব্যাটের বাইরের দিকের ব্লেডে লেগে বল চলে যায় সিলি পয়েন্টে। অসামান্য ক্ষিপ্রতা, চপলতা ও দক্ষতার মিশেলে তিনবারের চেষ্টায় তা ধরে ফেলেন পোলার্ড।
স্বপ্নিল বোলিং সাফল্যের খুশিতে উদ্বেলিত সাকিবের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘টি-টুয়েন্টির যে কোনো লেভেলে আমার সেরা বোলিং এটি।’ পরিসংখ্যানই বলে দেয়, এ সাফল্য ছাড়িয়ে গেছে আগের সব কিছুকে। আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে তার সেরা বোলিং (৪/২১) আর ওয়ানডেতে ১৬ রানে ৪ উইকেট। টেস্টের সেরা বোলিং ৩৬ রানে ৭ উইকেট।
-‘খুব ভালো লাগছে। উইকেটে একটু টার্ন ছিল। আমি তা শুনেছি। তা জেনে-বুঝেই জায়গামতো বল ফেলার চেষ্টা করেছি। কিছু স্পিনও হয়েছে। তাতেই সাফল্য ধরা দিয়েছে। নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবানও মনে হচ্ছে। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে ৬ উইকেট শিকার চাট্টিখানি কথা নয়। এজন্য ভাগ্যরও আনুকূল্য লাগে। আমি তা পেয়েছি। এমন কৃতিত্ব প্রতিদিন হয় না। আমি কাউন্টি ক্রিকেট খেলে এসেছি। ইংলিশ আর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ সম্পূর্ণ ভিন্ন কন্ডিশন। সেখানে খেলে আসার পর এখানে চটজলদি মানিয়ে নেওয়া কঠিন। আমার ক্যারিবীয় সহযোগীরা উইকেট সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে। তাদের কাছ থেকেই জেনেছি উইকেট স্পিনারদের সহায়তা করে। আমি চেষ্টা করেছি একটা চ্যানেলে বল ফেলার। তাতে সাফল্যও পেয়েছি’-ম্যাচ শেষে সাকিবের বিশ্লেষণ।
Discussion about this post