একতরফা নির্বাচনের পথে বিসিবি!
শেষ পর্যন্ত একতফরা হতে চলেছে বিসিবির নির্বাচন। সাবের হোসেন চৌধুরী ও ফোরাম এই নির্বাচন ”বয়কট” করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবার বিকালে রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে তারা এই নির্বাচন না আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। সাবের হোসেন চৌধুরীর ঘোষণা- ‘বিসিবির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও নির্বাচন কমিশন এখন যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করতে যাচ্ছে, তা অবৈধ। আদালতের রায়ের পরিপন্থী। তথা আদালত অবমাননার শামিল। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার কর্তব্য হচ্ছে আদালতের রায় মেনে নেওয়া। আমি আদালত অবমাননা করতে পারি না। আর সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি নির্বাচন করতে পারি না।’ সাবের হোসেন চৌধুরী আদালতের সার্টিফাইড কমিটির কপি দেখিয়ে নতুন তথ্য দিলেন। যা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর। আদালতের নির্দেশনা হল, ২১ নভেম্বরের ২০১২ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্রে নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু বিসিবি শুরু থেকে জানিয়ে আসছে নির্বাচন হবে ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বরের সংশোধিত গঠনতন্ত্রে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও নির্বাচন কমিশনও ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বরের সংশোধিত গঠনতন্ত্রে নির্বাচন করার কথা জানাচ্ছে। সেই তারিখের সংশোধিত গঠনতন্ত্রেই নির্বাচনের সব কাজকর্ম পরিচালিত হচ্ছে।
বিসিবির এই নির্বাচনকে ‘নীল নকসা’র নির্বাচন আখ্যায়িত করে ফোরাম সর্বসম্মতক্রমে নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর মনে করেন-নির্বাচনের আগে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি বিসিবির নির্বাচন কমিশন। একটি বিশেষ পক্ষ সব সুবিধা নিয়ে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাই এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।
এদিকে যেদিন সাবের হোসেন চৌধুরী ও জেলা এবং বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠকদের সংগঠন ফোরাম এই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিচ্ছেন; সেদিন সকালেই নির্বাচনে নিজের মনোনয়ন ফর্ম তুলেছেন বিসিবির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সোমবার সকালে তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (এনএসসি) উপস্থিত হয়ে মনোনয়ন ফর্ম তুলেন।
সাবের হোসেন চৌধুরী ও ফোরাম দিন দুয়েক আগে নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে আপত্তি তুলেন। সাবের চৌধুরী নির্বাচনের তফসিল বাতিলেরও দাবি জানান। একদিন পরে নির্বাচন কমিশন অবশ্য শুনানিতে সবগুলো আপত্তি বাতিল করে দেয়।
সাবের চৌধুরী এবং ফোরাম এই নির্বাচন বয়কট করায় এখন বিসিবি’র নির্বাচনে আর কোন প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কিছু রইল না। একতরফা এই নির্বাচনে নাজমুল হাসান পাপনের একমাত্র প্যানেল ‘ফাঁকা মাঠে’ গোল করতে চলেছেন।
আগামী ১০ অক্টোবর বিসিবির নির্বাচন।
গত বছর নভেম্বরে সরকার বিসিবির পরিচালনার জন্য নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্ব একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে। এই কমিটির মুল কাজ ছিল তিনমাসের মধ্যে বিসিবির নির্বাচন সম্পন্ন করা। কিন্তু সেই নির্বাচন প্রক্রিয়া করতে এই অ্যাডহক কমিটি সময় পাক্কা ১১ মাস! আর সেই নির্বাচনে খোদ অ্যাডহক কমিটির সবাই নিজেরাই অংশ নিয়ে ফেলেন। তার আগে নিজেদের স্বার্থে বিতর্কিতভাবে এই অ্যাডহক কমিটি বিসিবির গঠনতন্ত্রও বদলে ফেলে। যদিও বিতর্কিতভাবে গঠনতন্ত্র পরিবতর্নের দায়ভার তারা চাপিয়ে দেয় এনএসসির ঘাড়ে!
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে সাবের হোসেন চৌধুরী ছাড়াও জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি ইউসুফ জামিল বাবু, সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মিকু, ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কুতুবউদ্দিন মোহাম্মদ আকসির, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, খুলনা বিভাগ ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মর্তুজা রশিদি দারা, বিসিবির সাবেক পরিচালক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, জিএস হাসান তামিম এবং শেখ রাসেল কেসি লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ইসমত জামিল আকন্দও উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ইউসুফ জামিল বাবু, আশিকুর রহমান মিকু, মর্তুজা রশিদি দারা এবং ইসমত জামিল আকন্দ বক্তব্য রাখেন।
Discussion about this post