ইংল্যান্ড নাকি অস্ট্রেলিয়া? উত্তেজনার পেন্ডুলাম দুলতে দুলতে শেষ পর্যন্ত থেমে গেল ইংল্যান্ডের দিকেই। প্রায় জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছেও শেষ হাসিটা হাসতে পারল না অজিরা। নাটকীয়তার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্ট জিতে নিল ইংল্যান্ডই, মাত্র ১৪ রানে। জয়ের জন্য ৩১১ রান তাড়া করে অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত অল আউট ২৯৬ রানে। ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্ট জিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের ম্যাচ জয়ের নায়ক পেসার জেমস অ্যান্ডারসন। কাল অজিদের শেষ ৪ উইকেটই তার। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৫৮ রানে ১০ উইকেট নিয়ে তিনিই ম্যাচসেরা।
৬ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু অ্যান্ডারসনের তোপে পড়ে ২৩১ রানে ৯ উইকেট হারায় সফরকারীরা। প্রথম ইনিংসে ব্যাটে নায়ক অ্যাশটন অ্যাগার ফিরে যান ১৪ রানে। অ্যান্ডারসনের বলে প্রথম স্লিপে কুককে ক্যাচ দেন তিনি। মিচেল স্টার্ক ফেরেন ১ রানে। সেখানেও স্কোর কার্ডে লেখা হয় কট কুক বোল্ড অ্যান্ডারসন। পিটার সিডলের আউটের পেছনেও এ ‘জুটি’। সিডল ফেরেন ১১ রানে।
জয়ের জন্য তখনও অজিদের দরকার ৮০ রান। ওদিকে ইংল্যান্ডের দরকার ১ উইকেট। বাজির দরে তখন ইংল্যান্ড বিস্তর এগিয়ে। কিন্তু এমনি সময়ে হঠাত্ করেই পাল্টা মার শুরু করেন অজি উইকেটকিপার ব্রাড হাডিন। ‘হারার আগে হারব না’-এ নীতিতেই ব্যাট ঘোরাতে শুরু করেন তিনি। তাকে দেখে সাহসী হয়ে ওঠেন বোলার জেমস প্যাটিনসনও। শুরু হয় ম্যাচের নাটকীয়তা। অ্যান্ডারসন, ব্রড, ফিন, সোয়ানদের রীতিমতো শাসন করে দলকে অসাধারণ এক জয়ের সরণিতে পৌঁছে দেওয়ার অভিযান শুরু করেন দুঃসাহসী হাডিন। একটি জীবন অবশ্য পেয়েছেন তিনি। সোয়ানের বলে তার ক্যাচ ফেলেন ফিন। কিন্তু ভাগ্য তো সাহসীদেরই পক্ষে থাকে। সেই প্রবাদ বাক্যকে সঙ্গী করে অজিরা লাঞ্চে যায় ৯ উইকেটে ২৯১ রান তুলে। ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকের কপালে তখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেছে। তাহলে হেরেই যেতে হবে প্রথম টেস্ট?
লাঞ্চের পর খেলা শুরু হলে দুই ওভার শেষে ৯ উইকেটে ২৯৬ রান তুলে জয়ের আরও কাছে পৌঁছে যায় সফরকারীরা। শেষ উইকেটে ৬৫ রান যোগ করে হাডিন ও প্যাটিনসন তখন অজিদের জাতীয় বীর হওয়ার পথে। আর ১৫ রান হলেই তো তাদের বাজিমাত। এমনি সময়েই ভাগ্যদেবীর শেষ নাটক। বল জেমস অ্যান্ডারসনের হাতে। তার ওভারের পঞ্চম বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে মিস করেন হাডিন। বল জমা পড়ে ইংল্যান্ড উইকেটকিপার ম্যাট প্রায়রের হাতে। কট বিহাইন্ডের আবেদন করেন তিনি। কিন্তু তাতে ছিল না জোরালো গলা। কারণ সন্দেহ ছিল তারও। আম্পায়ার আলিম দার আবেদন নাকচ করে দেন।
তখনই স্লিপ থেকে এগিয়ে আসেন অধিনায়ক কুক। কোনো দ্বিধা না করে শেষ সুযোগ হিসেবে রিভিউ চান। তারপরই মহানাটক। হটস্পটে ধরা পড়ে বল প্রায়রের গ্লাভসে জমা পড়ার আগে হাডিনের ব্যাটে ন্যূনতম স্পর্শ করে গেছে। আর তাতেই টিভি আম্পায়ার মারিয়াস এরাসমাস অনফিল্ড আম্পায়ার দারকে জানিয়ে দেন হাডিন আউট। সিদ্ধান্ত বদলে হাডিনকে আউট দেন তিনি। উল্লাসে ফেটে পড়ে কুকের ইংল্যান্ড।
জয়ের পর যেন হাঁফ ছেড়ে বাচেন ইংলিশ অধিনায়ক। ম্যাচ শেষে বললেন, ‘ম্যাচের নিয়ন্ত্রণটা আমাদের হাতেই ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তারা চমত্কার লড়াই করেছে। আমাদের ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল তারা। এমন লড়াই করার জন্য তাদের বড় কৃতিত্ব দিতে চাই আমি।’
ট্রেন্ট ব্রিজে যে লড়াইটা তার দল করেছে তাতে মুগ্ধ অজি অধিনায়ক। বললেন, ‘অসাধারণ ম্যাচ ছিল এটা। আমরা গর্ব করার মতো কিছু করেছি। ছেলেরা তাই গর্ব করতে পারে। তারা চমত্কার খেলেছে।’
১৮ জুলাই শুরু হবে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্ট, লর্ডসে।
Discussion about this post