আশরাফুল, ‘রায়’ মঙ্গলবার
গত মাসে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন স্পষ্ট জানিয়ে ছিলেন, ঈদের পরপরই আকসু রিপোর্ট পাওয়া যাবে। বলেছিলেন, ‘আকসু ঈদের আগেই প্রতিবেদন জমা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ঈদের কথা চিন্তা করে তা পরে জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
এবার সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হওয়ার পথে। সব ঠিক থাকলে হয়তো আগামী দুয়েক দিনের মধ্যেই আকসুর রিপোর্ট পেয়ে যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে-আগামীকাল মঙ্গলবারই হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যাবে আকসু রিপোর্ট। তার আগে আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছে আইসিসির উচ্চপর্যায়ের কমিটি। যার নেতৃত্বে থাকবেন খোদ আইসিসিপ্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসন। আকসু রিপোর্ট নিয়ে তিন সদস্যের আইসিসি প্রতিনিধি দল আজই ঢাকায় আসছে। আইসিসি সিইও ডেভিড রিচার্ডসন ছাড়াও আইসিসির হেড অব লিগ্যাল ইয়ান হিগিন এবং আইসিসি মিডিয়া ম্যানেজার সামিউল হাসানও তার সঙ্গে আসবেন।
এ প্রসঙ্গে কাল রাতে বিসিবি মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম জানিয়েছেন, সোমবারই বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে আকসু প্রতিবেদন নিয়ে একান্তে বসবেন আইসিসি কর্তারা। তারপর হয়তো পরদিন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আকসু প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।
উল্লেখ্য, বিপিএলে একাধিক ম্যাচ পাতানো ও স্পট ফিক্সিংয়ের তদন্তে নেমে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ও ক্রিকেটারদের অন্ধকার পথের সন্ধান পায় আইসিসি দুর্নীতি দমন ইউনিট আকসু। প্রাথমিক তদন্তেই চলে আসে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম। প্রাথমিক জেরার মুখে আশরাফুলও তার দোষ স্বীকার করে বসেন। আকসুর সঙ্গে আলাপের পর আশরাফুল নিজমুখেই অকপটে স্বীকার করেন, ‘আমি ক্রিকেট জুয়া ও ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে আমি অন্তত চার-পাঁচবার অন্যায় (ম্যাচ পাতানো) করেছি।’
এ স্বীকারোক্তির জের ধরে আশরাফুলকে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়। বিসিবি তাকে জাতীয় দলের বাইরে ঠেলে দেয়। তার ঘরোয়া ক্রিকেট খেলাও বন্ধ।
বিপিএলে ম্যাচ ও স্পট ফিক্সিং এবং আশরাফুলের আন্তর্জাতিক ম্যাচ পাতানো নিয়ে আকসু তদন্ত কর্তারা বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন। আশরাফুল একা নন, বিপিএল চ্যাম্পিয়ন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস ফ্র্যাঞ্চাইজি সেলিম চৌধুরী, তার ছেলে শিহাব চৌধুরী, বোলিং কোচ মোহাম্মদ রফিক, ম্যানেজার সানোয়ার হোসেনসহ চিটাগং কিংস ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলেন আকসু কর্তারা। সেসব কথাবার্তা ও জেরা নিয়েও আছে রাজ্যের গুঞ্জন।
যাই থাকুক শেষ কথা হল-আকসুর তদন্তে আশরাফুলের সম্পৃক্ততা মোটামুটি প্রমাণিত। শুধু অভিযুক্তই নয়, আশরাফুল দোষী প্রমাণিত হচ্ছেন-তা একরকম নিশ্চিত। তবে তার শাস্তিটা কী হয়; আকসু কী ধরনের সাজার সুপারিশ করবে-সেটাই দেখার। এর পাশাপাশি ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস ফ্র্যাঞ্চাইজি তথা ম্যানেজমেন্টও দোষী প্রমাণিত হয় কি না; আশরাফুলের সঙ্গে ম্যাচ ও স্পট ফিক্সিংয়ে আরও কোনো ক্রিকেটার জড়িত কি না; থাকলে তারা কারা-দেখার সেটাই।
আর এ কেলেঙ্কারির বোঝা ঘাড়ে নিয়ে দুঃসহ যন্ত্রণায় দিন কাটানো মোহাম্মদ আশরাফুল এখন কী ভাবছেন? ঈদের সময় আশরাফুল সাংবাদিকদের বলেছেন-‘আমি এখন অপেক্ষায় আছি। শাস্তিটা কেমন এবং কতটুকু হয় সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।’
Discussion about this post