কত দ্রুতই না সময় সবকিছু বদলে দেয়!
কদিন আগেও যে ক্রিকেটার ছিলেন চোখের মনি। আদুরে। সতীর্থ-সমর্থক সবার কাছে প্রিয়জন। সেই তিনি আজ একেবারে আড়ালে-অন্তরালে। কেউ তার খোঁজখবরও নেয় না! এমনকি জন্মদিনেও কেউ খোঁজ নিল না। এল না কোন টেলিফোন। শুভেচ্ছা, ফুল কেক তো দুরের কথা।
হতভাগা এই ক্রিকেটার আর কেউ নন-মোহাম্মদ আশরাফুল।
৭ জুলাই ছিল আশরাফুলের ২৯ তম জন্মদিন। ছেলেবেলায় জন্মদিন কেটেছে রঙ্গিন বেলুনের উৎসবে। তবে ক্রিকেটার হিসেবে ২০০১ সালে অভিষেক হওয়ার পর থেকে প্রতিবছরই বেশ ঘটা করেই ৭ জুলাই আশরাফুলের জন্মদিন পালন করা হয়। জন্মদিন সাধারণত রঙ্গিনই হয়। তবে আশরাফুলের এবারের জন্মদিনে সেই নিয়মের ব্যতয় ঘটল।
আশরাফুলের এবারের জন্মদিন কাটল রঙ হীন, বর্ণহীন, উৎসবহীন। নিরানন্দ। পুরোপুরি সাদা কালো!
ম্যাচফিক্সিং নিয়ে স্বীকারোক্তি দেয়ার পর আশরাফুল তো নিজের বিচার নিজেই করে ফেলেছেন। তাই আকসুর রিপোর্ট আসার আগেই তিনি এখন সাধারণজনের চোখে ‘অপরাধী’। ক্রিকেট বোর্ড তো তাকেই সাময়িক নিষিদ্ধই করেছে। ক্রিকেটের বাইরে এখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েই আশরাফুলের সময় কাটছে। অপরাধবোধে ভোগা আশরাফুলও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন অনেকটাই। দিনের বড় সময় বাসাতেই কাটে। সন্ধ্যার পর পুরনো ঢাকার ওয়ারীতে নিজের চায়নিজ রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসেন। কালও সেভাবেই কেটেছে। জন্মদিনে আগের মতো শুভেচ্ছায় সিক্ত হননি। ভেতরে চাপা দুঃখ। কিন্তু মুখে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। সুহদ-শুভানুধ্যায়ীরা না হয় করেননি। আপনার সহযোগী ক্রিকেটার, বন্ধু ও অনুজপ্রতীমরা ফোনে শুভ জন্মদিন বলেনি? ধরা গলায় আশরাফুলের জবাব-‘নাহ, আসলে বেশিরভাগের কাছেই আমার এখনকার মোবাইল নম্বর নেই। তাই হয়তো শুভেচ্ছা কল কিংবা এসএমএস পাঠাতে পারেনি।’
আশরাফুল অবশ্য এখন একেবারে শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছেন তা কিন্তু নয়। তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সামনে ঝুলছে বড় একটা প্রশ্নবোধন চিহ্ন। তবে আশরাফুল এখনই হার মানতে রাজি নন। অন্তত আরেকবার লড়তে চান। আরেকবার জিততে চান। সেই ইচ্ছের কথা জানিয়ে আশরাফুল বলছিলেন-‘জানি শাস্তি অপেক্ষা করছে। তবে আমার ধারণা আকসু খুব বড়সড় শাস্তির সুপারিশ করবে না। আমি অপরাধ করে তা অকপটে স্বীকার করেছি। অন্যায় করার কথা শুধু স্বীকারই করিনি। কতবার কবে কখন কোথায় ও কীভাবে অন্যায় করেছি আইসিসি দুর্নীতি দমন ইউনিটের কাছে তা জানিয়েও দিয়েছি। আশা করছি তারা তা বিবেচনায় আনবেন। সে কারণেই আমার বিশ্বাস ও আশা খুব দীর্ঘসময় সাসপেনশনের খড়গে ঝুলতে নাও হতে পারে। তাই হতাশায় মুষড়ে না পড়ে নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করছি। মাঝে কিছুদিন সবরকম প্রাকটিস, ট্রেনিং বন্ধ ছিল। তবে তিন সপ্তাহ ধরে আবার ফিটনেস ট্রেনিং শুরু করেছি।’
ক্রিকেট মাঠে অনেক ম্যাচে আশরাফুল হেরেছেন। আবার অনেক ম্যাচে দলকে জিতিয়ে দেশকে হাসিয়েছেন।
এবার শুধু নিজের জন্যই শেষ একটা ‘ম্যাচ’ জিততে চান আশরাফুল।
যে ম্যাচের নাম-জীবন যুদ্ধ!
Discussion about this post