“তামিম ভাইস ক্যাপ্টেন ছিল নাকি?”
বোর্ড প্রেসিডেন্ট যখন এই প্রশ্ন করছেন, আমরা অবাক হয়ে দেখছি! ঘটনা গত ১০ ডিসেম্বরের।
বিসিবিতে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন। টেস্টের নেতৃত্বে ফেরানো হলো সাকিব আল হাসানকে, আবার সহ-অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। অবধারিত ভাবেই প্রশ্ন উঠল, “তামিমকে টেস্টের ভাইস ক্যাপ্টেন্সি থেকে কেন সরানো হলো?”
বোর্ড প্রধান ঘাড় ঘুরিয়ে পাশেই এক বোর্ড ডিরেক্টরকে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “তামিম ভাইস ক্যাপ্টেন ছিল নাকি?”
যাহোক, পরক্ষণেই তিনি উত্তর দিলেন, “তামিম টি-টোয়েন্টিতে ডেপুটি আছে, সেখানেই থাকবে।”
এবার আমাদের আরেকদফা বিস্ময়ের পালা। তামিমকে কেন সরানো হলো, সেই ব্যখ্যা পাওয়া হলো না। উল্টো আরেকটা বড় ধাক্কার ছক্কা, তামিম কবে টি-টোয়েন্টির ভাইস ক্যাপ্টেন হলো! বিসিবি আগে কখনোই সেটি জানায়নি। সাকিবকে যখন টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বে ফেরানো হয়েছিল, তখন বা তার পর ভাইস ক্যাপ্টেনের নাম জানায়নি বোর্ড। খোঁজ নিয়ে জানলাম, তামিম নিজেও জানতেন না তিনি টি-টোয়েন্টির ভাইস ক্যাপ্টেন।
সময়ে আমাদের বিস্ময় হজম হলো। আমরা জানলাম, টি-টোয়েন্টিতে সহ-অধিনায়ক তামিম। কিন্তু আজকে আবার আমরা জানতে পারলাম, তামিম আসলে দুধভাত সহ-অধিনায়ক। যখন একজন ডেপুটি লাগে, চোখ বন্ধ করে নাম ঘোষণা করে দাও। কিন্তু দায়িত্ব দেওয়ার সময় এলে ঠনঠন!
অধিনায়ক না থাকলে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই দায়িত্বে চলে আসার কথা সহ-অধিনায়কের। এই পদটি মূলত এই জন্যই রাখা। তামিম এমনকি তরুণ কোনো ক্রিকেটারও নন যে ভবিষ্যতের জন্য গ্রুমিং করা হচ্ছে। সাকিব নেই, তারই অধিনায়ক হওয়ার কথা। সেটি হলো না…
এবারই প্রথম নয়, ২০১৪ সালেও একই উপেক্ষার শিকার হয়েছিলেন তামিম। তখনও সহ-অধিনায়ক ছিলেন তামিম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে অধিনায়ক চোট পেলেন। তামিম মানসিক ভাবে তৈরিও ছিলেন নেতৃত্ব নিতে। কিন্তু সেবারও তাকে অধিনায়ক করা হয়নি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মুশি চোট পাওয়ার পর গত বছর ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে যেসেই সময়ের সহ-অধিনায়ক তামিম নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন, এটা তার বিদেশ ভাগ্যি! দেশের মাটিতে খেলা হলো ঠিকই নানা মুনির নানা মতে ঘোট পাকিয়ে অন্য কাউকে দেওয়া হতো দায়িত্ব….
রিয়াদের নেতৃত্বগুণ নিয়ে আমার সংশয় নেই। হয়ত রিয়াদ আরও ভালো অধিনায়ক। তার মাঝে সেই রসদ আরও বেশি। হয়ত রিয়াদ আরও ভালো করবেন। এবার যদি ভালো যদি নাও করেন, তবু রিয়াদের নেতৃত্বগুণে আমার আস্থা কমবে না। কারণ স্টপগ্যাপ দায়িত্ব পালন করা কঠিন। যথেষ্ট অথোরিটি থাকে না, স্বতস্ফূর্ততা থাকে না। সহজাত ব্যাপারগুলো থাকে না। রিয়াদ যদি কখনও পূর্নকালীন দায়িত্ব পান, ভালো করবেন বলেই বিশ্বাস আমার। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বের ভার অনেক। তবু আশা করি বিপিএলে বা অন্য ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোয় যেভাবে আগ্রাসী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্ব দিতে দেখি তাকে, জাতীয় দলেও সেভাবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলবেন…
তবে সেটা অন্য প্রসঙ্গ। তামিমের চেয়ে রিয়াদ ভালো কী খারাপ, সেটাও অন্য বিতর্ক। ব্যাপারটা হলো, তামিম ভাইস ক্যাপ্টেন, স্বয়ংক্রিয় ভাবে তারই দায়িত্বে আসার কথা। আর তাকে যদি নেতৃত্বের যোগ্য মনে করা না হয়, তাহলে ভাইস ক্যাপ্টেন করে রাখারও কোনো মানে নেই…
ব্যাপারটা তামিমের জন্য বিব্রতকর ও অপমানজনক। রিয়াদের জন্যও বিব্রতকর। তারা দুজনই সিনিয়র ক্রিকেটার। পরস্পরের কাছের। আমি নিশ্চিত, তাদের দুজনের মধ্যে বিন্দুমাত্র সমস্যা হবে না। তবে তামিমকে কোন বার্তা দেওয়া হলো বোর্ড থেকে? দলকে কোন বার্তা দেওয়া হলো? কিংবা উঠতি আরও অনেক ক্রিকেটার কোন বার্তা পেল!
বিসিবি কর্তাদের ধরণ সম্পর্কে যা জানি, আমার ধারণা তামিমের সঙ্গে এটা নিয়ে কোনো আলোচনাও করা হয়নি। ধারণা নয়, সত্যি বলতে, এটি আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ভদ্রতা-ভব্যতার সেই সংস্কৃতি আমাদের ক্রিকেটে বিরল। একটা প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সবাইকে। কেন ভাইস ক্যাপ্টেন তামিমকে ক্যাপ্টেন্সি দেওয়া হলো না, সেটির ব্যখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন বোর্ড মনে করেনি…
গত কিছুদিনে তামিমের সঙ্গে যা হয়েছে, তার পর আবার এমন একটি ঘটনা, তার হৃদয়ে চোট না লাগার কারণ নেই। দেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান বা সিনিয়র একজন ক্রিকেটারই শুধু নন, তিনি একজন মানুষ তো! চোট লাগাই স্বাভাবিক…
এবারের এই ঘটনার পর তামিমের সহ-অধিনায়ক থাকার আর কোনো মানে নেই। অনেকে হয়ত বলতে পারেন, তামিম নিজে থেকে পদত্যাগ করলেই পারেন! তা পারেন। কিন্তু সেখানেও নিশ্চয়ই ভয় লুকিয়ে আছে। দেশের ক্রিকেটে এখন যা কিছু হচ্ছে, তামিম পদত্যাগ করতে গেলে দেখা গেল শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণ দেখিয়ে লাখ দশেক টাকার জরিমানা ধরিয়ে দেওয়া হলো…!
কিন্তু বোর্ড যাকে যোগ্য মনে করছে না নেতৃত্বের জন্য, তাকে ভাইস ক্যাপ্টেন রেখে কেন এভাবে বারবার বিব্রত করা হচ্ছে? কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে না দায়িত্ব থেকে?
আমাদের ক্রিকেট কর্তারা নিজেরাও জানেন না তারা কি করতে চান, কিভাবে করতে চান, কোন দিকে যেতে চান। ধারণা কিংবা ভাবনা, কিছুই স্বচ্ছ নয়। ক্যাপ্টেন্সির মত ব্যাপার নিয়ে যখন এই ধরণের মশকরা হয়, ছোটখাটো আরও কত ব্যাপারে অবস্থা কতটা শোচনীয়, অনুমান করে নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়…
তামিম এখানে কেবল একটা চরিত্র মাত্র। বৃহত্তর ছবিটা আরও ঘোলাটে। একজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে নিয়ে এভাবে ছেলেখেলা হওয়া মানে এখানে যে কাউকে নিয়ে যে কোনো কিছু হতে পারে! বেশি দেমাগ দেখালেই হুলিয়া জারি হবে… ৫ লাখ, ১০ লাখ , ১৫ লাখ….!
(লেখাটি সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রনির ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া।)
Discussion about this post