টেস্ট ম্যাচ মানেই পাঁচ দিনের। তবে ১৮৮২ সালের আগে কিন্তু এমনটা ছিল না। তখন হতো অনির্ধারিত সময়ের ম্যাচ। ১৮৮২ সালেই ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড অনির্ধারিত সময় বাদ দিয়ে তিন দিনের ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ টানা অনির্ধারিত সময়ের ম্যাচ খেলতে পারছিলেন না ক্রিকেটাররা। সেই মতে, ওভালে ১৮৮২ সালের ২৮ আগস্ট শুরু হয় ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার তিন দিনের ম্যাচ। অবাক কাণ্ড, ম্যাচ শেষ দু’দিনেই। তাতে দারুণ নাটকীয়তার পর ৭ রানে জেতে অস্ট্রেলিয়া। এমন জয়ে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে অজিরা। ওদিকে শোকে ম্যুহমান হয়ে পড়ে গোটা ইংল্যান্ড। সে সময়ে ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস’-এ লেখা হয়-‘ইংল্যান্ড ক্রিকেটের নিশ্চিত মৃত্যু হয়ে গেল। বাকি রয়ে গেছে শুধু ছাই। আর সেই ভস্ম সঙ্গে নিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে করতে দেশে ফিরে গেছে অস্ট্রেলিয়া।’
-আর সেটাই হয়ে গেল অ্যাশেজ নামের গোড়াপত্তন।
তবে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত পরের সিরিজটিই মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম অ্যাশেজ সিরিজ। ১৮৮২ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শুরু হয় তিন টেস্ট ম্যাচের প্রথম অ্যাশেজ। আর অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ম্যাচে হারিয়ে প্রথম অ্যাশেজ জয়ের গর্ব ইংল্যান্ডেরই। সেই যে অ্যাশেজের লড়াই শুরু হয়েছিল তা অধ্যাবধি চলছে। আজ ট্রেন্টব্রিজে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্ট দিয়েই শুরু হবে দু’দলের ৬৭তম অ্যাশেজের লড়াই। যে ‘ভস্মাধার’ এখন রয়েছে ইংল্যান্ডেরই দখলে। গত চারটি অ্যাশেজের মধ্যে তিনটিই জিতেছে ইংল্যান্ড। সর্বশেষ ২০১০-১১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই।
অ্যাশেজের সর্বশেষ লড়াইয়ে সব হিসাবে ইংল্যান্ডই ফেভারিট। কারণ পালাবদলের পালায় বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়ার এমন অগোছালো দল ইংল্যান্ড বেশ কয়েক বছরের মধ্যে পায়নি। বিশেষ করে অজিদের ব্যাটিং এখন তাসের ঘরের মতোই। বোলিং হয়তো চালিয়ে নেবে পেসাররা। কিন্তু অজি ব্যাটিংটাই হয়ে গেছে প্রতিপক্ষের টার্গেট। যেখানে অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কই সবচেয়ে বড় ভরসা। রিকি পন্টিং এবং মাইক হাসির অবসরজনিত শূন্যতা বড় বেশি অনুভূত হচ্ছে অজি দলে। তার ওপর দলের শৃঙ্খলাজনিত সমস্যাও ইদানীং মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সবশেষ নমুনা বারে গিয়ে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের মারপিট ইংল্যান্ডের জো রুটের সঙ্গে। তার ওপর অ্যাশেজ শুরুর ঠিক ১৬ দিন আগে চাকরি গেছে কোচ মিকি আর্থারের। নতুন কোচ হয়েছেন ড্যারেন লেহম্যান। কাজেই এসব ধাক্কার পাট চুকিয়ে মাঠের লড়াইয়ে ইংল্যান্ডকে কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবে অতিথিরা তাতে প্রশ্ন থাকছেই। ক্লার্কের ভরসা তাই তার বোলাররা। তিন পেসার পিটার সিডল, জেমস প্যাটিনসন, মিচেল স্টার্ক ও একমাত্র স্পিনার নাথান লিওন যদি পরীক্ষায় ফেলতে পারেন অ্যালিস্টার কুক এবং তার সতীর্থদের। আর একজনকে মনে করা হচ্ছে অজিদের ট্র্যাম্পকার্ড কিংবা ‘কি ফ্যাক্টর’। তিনি অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন। সঙ্গে থাকতে পারেন অভিজ্ঞ উইকেটকিপার ব্রাড হাডিনও।
ওদিকে ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে অভিজ্ঞতায় বিস্তর এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ড সবদিক দিয়েই ব্যালান্সড। কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার সাফ বলছেন-‘আমাদের এ ক্রিকেটারই দলকে প্রচুর ম্যাচ জিতিয়েছে। বিনা লড়াইয়ে কখনও ময়দান ছাড়েনি। তাই অ্যাশেজেও কোনো ছাড় নেই। ওটা এখন আমাদের হাতে এবং সেটা ধরে রাখতেই চাই।’ ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কতটা দুর্দান্ত তার প্রমাণ দলের ব্যাটসম্যানদের মোট টেস্ট সেঞ্চুরির সংখ্যা ৮০টিরও বেশি। সবার আগে অধিনায়ক কুক ২৫ এবং তারপর কেভিন পিটারসেনের ২২ সেঞ্চুরি। পিটারসেনকে বলা হচ্ছে ইংল্যান্ডের ‘এক্স ফ্যাক্টর’। বড় মঞ্চে যিনি সবসময়ই সেরাটা দেন। বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেবেন এ সময়ের অন্যতম সেরা পেসার জেমস অ্যান্ডারসন। সঙ্গে স্টুয়ার্ট ব্রড, স্টিভেন ফিন ও টিম ব্রেসনানরা। স্পিনে গ্রায়েম সোয়ান। এমন দল নিয়ে ঘরের মাঠে দুর্বল অস্ট্রেলিয়াকে একহাত দেখে নিতেই পারে ইংল্যান্ড। কিন্তু কুক সাবধান। সতীর্থদের হুশিয়ার করে দিয়েছেন, কোনোরকম আত্মতুষ্টিতে না ভোগার। কারণ দলটা যে অস্ট্রেলিয়া!
Discussion about this post