ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের ২১৫ রানের জবাবে ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টের দ্বিতীয় দিন লাঞ্চের ঘণ্টাখানেক আগেই অস্ট্রেলিয়ার ৯ উইকেট নেই ১১৭ রানে। অজি পেসার পিটার সিডলকে জবাব দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মতো ফুঁসছেন ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসন। সঙ্গে ঘূর্ণি বলের মায়া গ্রায়েম সোয়ানের। ক্রিজের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যান ফিল হিউজ। আপ্রাণ চেষ্টা দলকে তুলে আনার। কিন্তু স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা থাকলে তো? ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে নামলেন অ্যাশটন অ্যাগার। ১৯ বছর বয়সী যে তরুণের বাঁহাতি স্পিনার হিসেবেই অভিষেক এ টেস্টে। অজি কোচ ড্যারেন লেহম্যান বলেছিলেন, বোলিংয়ে তার ‘এক্স’ ফ্যাক্টর। তবে জীবনের প্রথম টেস্টে বোলিংয়ে নয়, বিস্ময়করভাবে ব্যাটেই ‘এক্স’ ফ্যাক্টর হয়ে গেলেন অ্যাগার। সেটাও আবার অ্যাশেজ লড়াইয়ে। টেস্টে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে ৯৮ রানের সবচেয়ে বড় রানের ইনিংসটাই কাল খেলেছেন এ তরুণ। নিতান্তই দুর্ভাগ্য, সেঞ্চুরি করে রেকর্ডটাকে অন্য উচ্চতায় নিতে পারেননি। তবে যা করেছেন তাতেই এখন থেকে ক্রিকেট ইতিহাসের রেকর্ড বইয়ে অ্যাগারের নামটা থাকবেই। আর অদ্ভুতভাবে বোলার হিসেবে নয়, ব্যাটসম্যান হিসেবে।
অ্যাগার ব্যাটিং করতে নামার সময় ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক তো বটেই, হয়তো গোটা ইংল্যান্ড দলই কিস্তি মাতের আনন্দে মেতেছিল। দুই ইংলিশ ওপেনার কুক ও জো রুট মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ওপেন করার। কিন্তু ইংলিশদের সব আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে জল ঢেলে দেন অ্যাগার। হতভম্ব ইংরেজদের দেহের ভাষাই বলে দিচ্ছিল-‘একি ব্যাটিং করছে রে বাবা!’ অবশ্য ইংলিশ বোলিংকে ছাতু বানিয়ে ১১ নম্বরে নেমে এমন ব্যাটিংই করেছিলেন উইন্ডিজ পেসার টিনো বেস্ট। ইংল্যান্ডেরই বিপক্ষে গত গ্রীষ্মে এজবাস্টনে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমে টেস্টে সর্বাধিক ৯৫ রান করার পুরনো রেকর্ড ছিল বেস্টেরই দখলে। সেটি এবার হাতবদল হল। তবে বেস্টেরটা ছিল নিখাদ ‘হিটিং’। আর অ্যাগারেরটা পুরোদস্তুর ‘ব্যাটিং’।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনো ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানই এখনও পর্যন্ত সেঞ্চুরি পাননি। সেই অদৃষ্টপূর্ব রেকর্ডই গড়তে যাচ্ছিলেন অ্যাগার। স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে তার মিস টাইমিং করা পুল শট যখন ডিপ মিড উইকেটে নিচু হয়ে ধরে নেন সোয়ান তখন সারা মাঠেই হাহাকার। তারপরই অবশ্য গোটা ট্রেন্ট ব্রিজ এ তরুণকে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে অভিনন্দনে সিক্ত করেছে। আসলে একই সঙ্গে দুটি বিশ্ব রেকর্ড কাল করেছেন অ্যাগার। প্রথমটা ব্যক্তিগত আর দ্বিতীয়টা জুটিতে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে শেষ জুটিতে ১৬৩ রানের নতুন রেকর্ড গড়েছেন অ্যাগার তার সতীর্থ হিউজকে নিয়ে। যিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৮১ রানে। মাত্র ১০১ বলে ৯৮ রান করে যান অ্যাগার। যাতে ছিল ২ ছক্কা এবং ১২ বাউন্ডারি। কিন্তু সবই ছিল নিখাদ ক্রিকেটিং শট। জুটিতে ১৬৩ রান ওঠে মাত্র ৩৩ ওভারে।
ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে বোলার হিসেবে অভিষেক হওয়ার পর সবারই প্রশ্ন ছিল-‘অ্যাগার কে?’
জবাব বলে নয়, ব্যাটে দিয়েছেন তিনি।
টেস্টে ১১ নম্বরে সর্বোচ্চ রান
ব্যাটসম্যান দেশ রান প্রতিপক্ষ ভেন্যু
অ্যাশটন অ্যাগার অস্ট্রেলিয়া ৯৮ ইংল্যান্ড ট্রেন্ট ব্রিজ (২০১৩)
টিনো বেস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯৫ ইংল্যান্ড এজবাস্টন (২০১২)
জহির খান ভারত ৭৫ বাংলাদেশ ঢাকা (২০০৪)
রিচার্ড কলিং নিউজিল্যান্ড ৬৮ পাকিস্তান অকল্যান্ড (১৯৭৩)
বার্ট ভগলার দক্ষিণ আফ্রিকা ৬২ ইংল্যান্ড কেপটাউন (১৯০৬)
Discussion about this post