২০০৪ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার সুযোগ এসেছিলো ইংল্যান্ডের সামনে। কিন্তু ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে ইংলিশদের স্বপ্ন ভেঙ্গে গিয়েছিল সেবার। আট বছর পর আবার ইংল্যান্ডের সামনে সুযোগ। এবার কি হবে? শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে রোববার তাদের প্রতিপক্ষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও ওয়ানডের এক নম্বর র্যাঙ্কধারী দল ভারত। যারা রয়েছে ফর্মের তুঙ্গে, যাদের কাছে যে কোন বোলিংই তুচ্ছ। আর অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের বোলিং লাইনও হয়ে উঠেছে চ্যাম্পিয়নের মতো। ব্যাটিং- বোলিং জুগপত্ নৈপূণ্যে ফাইনালে ওঠার পথে এক ম্যাচও হারতে হয়নি তাদের। হারা তো দূরের কথা, প্রতিটা ম্যাচেই তারা পাত্তা দেয়নি প্রতিপক্ষকে।
প্রতিটা ম্যাচ দুর্দান্ত খেললেও আজ বার্মিংহামে ভারতের জন্য কাজটা সহজ নাও হতে পারে। ইংল্যান্ড স্বাগতিক এবং ভিষন লড়াকু দল বলেই শুধু নয়, ভারতের জন্য সমস্যা হতে পারে এখানকার কন্ডিশন। বার্মিংহাম লন্ডনের বাইরে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে জনবহুল নগরী। এই সময় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে প্রচন্ড খরতাপ বিরাজ করলেও বার্মিংহামে এখন বেশ শীত। কাল এখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রী। আর বাতাশের আর্দ্রতা ৯৯ ভাগ। আজও একই ধরনের আবহওয়া বিরাজ করবে সেখানে। শীত এবং আর্দ্রতা খুব বেশী থাকায় সকাল শেসনটা হবে ফাস্ট বোলারদের। তাই সকালে টস বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেই টস জিতুন প্রথমে বোলিং বেছে নিতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবেন না। মানে প্রথমে ব্যাটিং করতে চাইবেন না কোন ধিনায়কই।
অস্ট্রেলিয়াকাকে ৪৮ রানে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু দ্বিতীয় ম্রাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যেতে হয়েছিল। এরপর কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় জয় নিয়ে ( সাত উইকেটে) ফাইনালে উঠে আসে কুকের দল। অন্যদিকে ফাইনাল ওঠার পথে একা ম্যাচও হারতে হয়নি মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারতকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৩৩১ রান করে জিতলো ২৬ রানে। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারালো ৮ উইকেটে। প্রথম রাউন্ডে হারালো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তানকে। এরপর সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে সোজা ফাইনালে। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুতে অনেকেই বলেছিলেন আইপিএলের ম্যাচ ফিক্সিং ইস্যু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ধোনিদের পারফরম্যান্সের উপর প্রভাব পড়বে। কিন্তু বাস্তবে হলো তার উল্টো।
আজ ভারতের চিন্তার নাম যদি হওয় বার্মিংহামে আবহওয়া তাহলে, ইংল্যান্ডের চিন্তা ভারতীয় ব্যাটিং নিয়ে। কোন বোলিংই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের উপর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারছে না। ওপেনার শিখর ধারওয়ান যেন একাই একশ। চার ম্যাচে ১১০.৬৬ গড়ে রানকরেছেন ৩৩২। এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টর সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান তিনি। শুধু কি তাই? ধাওয়ানের ধারের কাছেও নেই অন্য কোন ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক কুমার সাঙ্গকারা। তার রান ২২২। ওপেনিংয়ে নেমে যথেষ্ঠ ভালো করে যাচ্ছেন রোহিত শর্মাও। ১৬৮ রান করেছেন এপর্যন্ত। প্রায় প্রতি ম্যাচেই ওপেনিং জুটি ভারতে শক্ত একটা ভিত এনে দিয়ে যাচ্ছেন। আর সেটা কাজে লাগাচ্ছেন পরের ব্যাটসম্যানরা। ইংল্যান্ডের এক নম্বর চিন্তাটা ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং নিয়েই। তবে প্রস্তুত অ্যান্ডারসন, ব্রেসন্যান , ব্রডরাও।
চ্যাম্পিয়ন্সলিগে এখনও ভারতীয় ব্যাটিং বিধ্বস্ত হয়নি। অ্যান্ডরসনদের হাতে যে আজ ভারতীয় শক্তিশালী ব্যাটিং মার খাবে না তার কোন নিশ্চিয়তা নেই। কারণ ইংল্যান্ডের আছে সেই মানের বোলিং লাইনআপ। শক্ত তাদের ব্যাটিং লাইনও। অধিনায়ক কুক, ট্রট, বেল, রুটরা প্রায় প্রতি ম্যাচেই রান করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা ভারতকে থামাতে পুরোপুরি প্রস্তত ইংলিশরা। অধিনায়ক অ্যালেস্টাির কুক বলেন, ‘ ভারত অসাধরণ খেলছে। তাদের হারানো সহজ কাজ নয়। আমাদের সেরাটা খেলতে হবে। আমি মনে করি সব কিছুর জন্য ইংল্যান্ড প্রস্তুত।’ ইংল্যান্ডকে সমীহ করছেন ভারত অধিনায়কও। তিনি মনে করে নিজেদের মাটিতে ইংল্যান্ড অত্যন্ত শক্তিশালী ও পেশাদার দল।
ধোনি বলেন, ‘ প্রথম ম্যাচ থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেমনটি চেয়েছিলাম দলের কাছে, সেটাই পেয়েছি। কিন্তু ফাইনাল সবসময়ই কঠিন ব্যাপার । এখানে অনেক ব্যাপার কাজ করে। আমাদের সতর্ক এবং স্বাভাবিক খেলাটা কেলতে হবে।’
অনেকেই ইংল্যান্ডকে নিয়ে তাচ্ছিলো করেছে, একদিনের ক্রিকেটে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতবাচক নয়। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্সলিগের ফাইনালে ওঠে সেই সমালোচনা জবাব দিয়েছে ইংল্যান্ড।
ইংলিশ অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ জোনাথন ট্রটও বলেছেন সে কথা। বলেন, ‘ কেউ কেউ বলেছে একদিনের ক্রিকেটে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক নয়। কিন্তু সেটা ভুল প্রমাণ হয়েছে। আমরা দেখিয়ে দিয়েছে এই ফরমেটেও আমরা কতোটা অভ্যস্ত।’ অধিনায়ক কুকরে প্রশংসায়্র পঞ্চমুখ তিনি।
- হেড টু হেড
- মোট ম্যাচ
- ৮৬
- ইংল্যান্ড জয়ী
- ৩৫
- ভারত জয়ী
- ৪৬
- টাই/পরিত্যক্ত
৫
স্মার্ট ডাটা
* ভারতে অনুষ্ঠিত গত দশটি ম্যাচের আটটিএতই জয়ী হয়েছে স্বাগতিকরা। দুটি জিতেছে ইংল্যান্ড।
* ব্যাঙ্গালোরে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দুই দল মিলে রান করেছিলো ৬৭৬। ওঠাই ভারত- ইংল্যান্ড কোন ওয়ানডে ম্যাচের সর্বোচ্চ রান।
* বার্মিংহামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এর আগে তিনটি ম্যাচে জয় পায় ইংল্যান্ড
* চলতি টুর্নামেন্ট দারুণ বোলিং করেছেন ভারতীয় বোলাররা। সবচেয়ে বেশী ডট বল করা সাত বোলারের পাঁচজনই ভারতের। সবার উপরে আছেন স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা।
* ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক হাজার রান পেতে আরও তিন রান দরকার সুরেশ রায়নার। সেক্ষেত্রে তিনি হবেন দুই দেশের মধ্যে হাজার রান সংগ্রকারী অস্টম ব্যাটসম্যান।
Discussion about this post