ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
মোট ১১ দাবি উত্থাপন করেছেন সাকিব-মুশফিকরা। দেশের শীর্ষ পর্যায়ে খেলা ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) জানিয়ে দিয়েছেন- দাবি পূরণের নিশ্চয়তা না পেলে জাতীয় দল এবং প্রথম শ্রেণীর সব ক্রিকেটাররা কোন ধরনের ক্রিকেটে অংশ নেবেন না। মাঠ থেকে সরে আছেন সাকিব আল হাসানরা।
সাকিবদের দাবির মধ্যে রয়েছে চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়ানো। খেলোয়াড়দের বেতন বৃদ্ধি, বিসিবির গ্রাউন্ডসম্যান থেকে শুরু করে অন্যান্য বেতনভুক্ত কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি। ১১ দফা দাবিতে আরও আছে ঘরোয়া ক্রিকেট বিশেষ করে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম ও দুর্নীতির অবসান। ঘরোয়া ক্রিকেটের টুর্নামেন্টের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিও তোলা হয়।
সাকিবদের সেই দাবি নিয়ে এবার মুখ খুললেন বিসিবি সভাপতি। রীতিমতো কড়া জবাব দিয়েছেন তিনি। নাজমুল হাসান পাপনের কথায় অবশ্য সমস্যা সমাধানের কোন ইঙ্গিত পাননি ক্রিকেটপ্রেমীরা।
চলুন দেখে নেই সাকিবদের ১১ দফা নিয়ে নাজমুল হাসান কী বললেন-
কোয়াব প্রসঙ্গে
প্রথম দাবি দেখেন কোয়াবের কথা বলেছে। কিন্তু কোয়াবের সঙ্গে বিসিবি’র কোনো সম্পর্ক নেই। আগে আমরা এটাকে গুরুত্ব দিতাম না। এখন সবাই বলতে বলতে গুরুত্ব দিচ্ছি। অনুমোদন দিয়েছি। ওরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। এখন কে প্রেসিডেন্ট হবে, কে সেক্রেটারি হবে তা বোর্ড কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে? এটা কেন বলল তাও জানি না।
প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ নিয়ে-
প্রিমিয়ার লিগ আগের মতো করতে হবে। প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগে কিছু সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। কিছু দাবি ছিল, অন দ্য স্পট পূরণ করা হয়েছে। এটা ইস্যুই না। এরপর বলছে, এবারের পর থেকে আগের মতো বিপিএল করতে হবে। এটা তো সিদ্ধান্ত নেওয়াই আছে। এটা এখন বলার কারণ দেখি না।
খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিয়ে-
এর আগে অধিকাংশ ক্লাবের খেলোয়াড়রা টাকাই পেতো না। প্রথমে কিছু পেতো, এরপর থেকে সারাক্ষণ ফোন দিতো। আমরা তাদের পেমেন্ট নিশ্চিত করেছি। এবার বা তার আগের ডিপিএল বলেন বিপিএল বলেন, সকল পেমেন্ট ক্লিয়ার করেছি। শুধু একটা ক্লাবের বাকি আছে। এমনকি যারা পায়নি তাদেরকে বিসিবি থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে। এবারও ৩ মাস সময় আছে। কিন্তু এটা তো বিসিবি’র দেওয়ার কথা না। অথচ আমরা দিচ্ছি। আমি বলতে চাইছি, সমস্যাটা আসলে কোথায়? আর বিপিএল তো এবারের পর এমনিতেই আগের ফরম্যাটে চলে যাবে। এটা সবাই জানে। তাহলে এটা দাবি হলো কীভাবে?
বিপিএলে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক-
ফ্র্যাঞ্চাইজি কোন খেলোয়াড়কে কত দিয়ে কিনবে তা আমরা নির্ধারণ করব কেন? এটা আমরা করলে হতে পারে, কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজির সিদ্ধান্ত তো আমরা নিতে পারি না। আইপিএলে যে খেলোয়াড় নিলাম হয়, এটা কি বোর্ড ঠিক করে দেয়? ফলে একটা কথা বললেই তো হবে না। আমরা যদি বলি সব ক্রিকেটারকে ১ কোটি টাকা করে দিতে হবে, এটা হয়? ফলে বিপিএল নিয়ে যে দাবি এসেছে এটার কোনো কারণই নেই।
চুক্তিভিত্তিক খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়ানো প্রসঙ্গে-
ক্তিভিত্তিক খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমার জানা মতে, খেলোয়াড়দের সংখ্যার দিক থেকে আমরা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। জাতীয় দলের বাইরে আমরা ৮০ জন ক্রিকেটারকে বেতন দিচ্ছি। এরকম তো কেউ করে না। আরও বাড়াবো? কেন? দুই তিনশ’ খেলোয়াড়কে বেতন দিতে হবে? খেলা না পারলেও? এমনভাবে এগুলো আলোচনা হচ্ছে, যেন আমরা ওদের শেষ করে দিলাম। ওদের সুবিধা বাড়ানো ছাড়া, একটা দিক দেখান তো। ওদের চিন্তার চেয়েও বেশি বাড়ানো হয়েছে। ওরা আম্পায়ার, গ্র্যাউন্ডসম্যানদের বেতন বাড়াতে বলছে। তাদের বেতন তো গত মাসেই বাড়ানো হয়েছে। আমরা তো এগুলো করছি। তাহলে এগুলো তো দাবি হতে পারে না।
লিগ ম্যাচে ঢাকার বাইরে খেলা প্রসঙ্গে
আপনারা বলছেন, বাইরে খেলতে গেলে সুবিধা বাড়াতে হবে। চট্টগ্রাম, সিলেটে জিমনেশিয়াম করলাম। এত মাঠ তৈরি করছি। একাডেমি তৈরি করছি। এসব যখন ছিল না, কারো কোনো আন্দোলন চোখে পড়ল না। আর এখন যখন কাজ করছি তখন প্রশ্ন তোলা হলো। এই কাজ কারা করছে তাহলে? ওরা বলছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পারিশ্রমিক বাড়াতে হবে। হতে পারে। যারা ২৫ হাজার টাকা পেত, আমরা ৩০ হাজার টাকা করে দিয়েছি। আবার যারা ৩৫ হাজার টাকা পেতো তাদের করে দিয়েছি ৪০ হাজার টাকা। অথচ ওরা এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন আমরা কিছুই করছি না। ফলে এর পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ আছে।
খেলোয়াড়দের সঙ্গে আচরণ-
খেলোয়াড়দের ট্রিটমেন্টের কথা বলছে। কি ট্রিটমেন্ট করতে হবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা দেখা করতে পারে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে তারা বাচ্চাসহ খেলাধুলা করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওদের বাচ্চাদের কোলে নিয়ে হাঁটেন। আর কি চায়? একজনও বলতে পারবে ওদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে? দোষ করলে শাস্তি হবে। এত কিছু করার পরও… কার ভাইকে কে মারছে, রাত ৩টায় এসপি-ডিসিকে ফোন দিতে হবে। কাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, মেরে ফেলবে বলে… আমাকে থামাতে হয়। বিদেশ থেকে ফোন দিয়ে সমাধান করতে হয়। কার আত্মীয়ের জমি দখল হয়ে গেছে, আমি গিয়ে উদ্ধার করি। কি বলছেন এগুলো?
কোচদের পপছন্দ করছেন না সাকিবরা?
জাতীয় দলের নতুন কোচ এসেছেন। কিছুদিন আগে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি আসছে। ২৫ তারিখে ওদের ক্যাম্প শুরু হবে, এই মুহূর্তে ওরা এসব করল। ওরা তো একবার আমাকে বলে ফেলেছিল যে কোচই দরকার নেই। কয়েক মাস দেখেছিও কি অবস্থা হয়। যাই হোক ওরা কোচদের পছন্দ করেনি। ওরা দেশি কোচ চায়। এটা অন্য ব্যাপার। খেলোয়াড়দের পছন্দ মতো কোচ নিতে হলে তো বিপদ। তারপরও যখনই কোনো কোচ নেওয়া হয়েছে, সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করেই নেওয়া হয়েছে। কাল কোচরা আসবেন। ওরা এসময় এসব করছে, যাতে ক্যাম্প না হয়। জাতীয় দলের ক্যাম্প?
ভারত সফর হবেই-
ভারত সফর নিয়ে সবার কতো আগ্রহ সেটা আমরা জানি। আপনারাই বলতেন ভারতে পূর্ণাঙ্গ সফর আয়োজনের জন্য। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে, প্রথম খেলাই ভারতের সঙ্গে। এটার গুরুত্ব তো বুঝতে হবে। জয়-পরাজয় বড় কথা না। আমি যখন দায়িত্ব নিলাম, আইসিসি’র প্রথম দুই বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনাই ছিল টেস্ট থেকে বাংলাদেশ বাদ। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে আমাদের নাম আসতো। সেই অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন আমরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যাচ্ছি। এসময় ধর্মঘট ডাকার পেছনে উদ্দেশ্য বুঝতে বাকি নেই।
Discussion about this post