অনেক দিন থেকে জমানো দুঃখটা এবার প্রকাশ করলেন সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর। রিও অলিম্পিককে সামনে রেখে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য তিনি আছেন থাইল্যান্ডে। সেখান থেকে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন তিনি। চলতি বছর ভারতের শিলংয়ে হয়ে যাওয়া এসএ গেমসে ৭টি ব্রোঞ্জের পদক জেতা এই সাঁতারু লেখেন, ক্রিকেটের মতো অন্যান্য খেলাতেও যেন সরকার নজর দেয়।’
মাহফিজুরের ফেসবুকে দেয়া সেই খেলা চিঠির কিছু অংশ ক্রিকবিডি ডটকমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
”মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনার সুষ্ঠু নেতৃত্বে আমাদের দেশের সকল ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটছে। যা অবশ্যই আমাদের সবার কাম্য। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একটা দেশের উন্নতি যেমন জরুরী তার পাশাপাশি বিশ্বের মানুষের কাছে উন্নতি যে ঘটছে তা পরিচয় করিয়ে দেওয়াটাও তেমন জরুরী। আর বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সহজ মাধ্যম হলো খেলাধুলা।
আপনি দেশকে ভালোবাসেন, ভালোবাসেন খেলাধুলাকেও। যার প্রমাণ পেয়েছিলাম পাকিস্তানকে পরাজিত করে ক্রিকেটে আমরা যখন সিরিজটা জিতে নিয়েছিলাম। যার প্রমাণ সেদিন আপনার চোখের আনন্দ অশ্রু। আপনাকে এমন আনন্দ অশ্রুতে বার বার দেখতে চাই।
কিন্তু বাস্তবতা কি জানেন, ক্রিকেট অলিম্পিকের খেলা না। ক্রিকেট খেলার সর্বোচ্চ আসর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যদি কখনো বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতে (আশা করি জিতুক) তাহলে হয়তো ২৫/৩০ টা দেশ বাংলাদেশের সাফল্যের কথা জানতে পারবে। আর যদি অলিম্পিকে বাংলাদেশ স্বর্ণপদক জিতে তাহলে সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশের সাফল্যের কথা জানতে পারবে। যা অবশ্যই আমাদের দেশের জন্য গৌরবের বিষয়।
কিন্তু হতাশার বিষয় কি জানেন!
আমাদের দেশের কোন খেলোয়াড় এ পর্যন্ত নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে খেলার সুযোগ পায় নাই। সবাই কেবল দানের কোঠায় খেলতে যায়। আর তাই অলিম্পিকে স্বর্ণ মানে অনেকটা স্বপ্ন বলা যায়, আবার হাস্যকর বিষয়ও বলা যায়।
আপনার কি মনে আছে ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের কথা!
Opening ceremony তে বিবিসি, সিএনএন থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রায় সব নামীদামী চ্যানেল সরাসরি দেখাচ্ছিল।
তখন আমি বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মার্চপাস্ট করেছিলাম। আমাকে দেখানোর পর পরই আপনাকে দেখিয়েছিল। কিন্তু ঐ সময় ধারাভাষ্যকার কি বলেছে তা কি কখনো শুনেছেন ? কথাগুলো ছিল এমন—-
“বাংলাদেশ দলের সদস্য সংখ্যা ৫, যারা ১৬৪ মিলিয়ন জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ হয়েও এ পর্যন্ত তারা কোন পদক লাভ করতে পারে নাই।”
পরে যখন কথাটা শুনতে পাই তখন মনে হচ্ছিল লজ্জায় শিয়ালের গর্তে লুকাই।
আরো খারাপ লাগে যখন দেখি আমাদের দেশের থেকেও অনুন্নত দেশ স্বর্ণ পেয়ে তাদের জাতীয় সংগীত বাজাচ্ছে।
এতো গেল অলিম্পিকের কথা।
এবার আসি সাফ গেমস প্রসঙ্গে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে হয়ে গেল দক্ষিণ এশিয়ার “অলিম্পিক গেমস”।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ৮টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান ৫ম।
ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান এমন কি যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানেরও পরে আমাদের অবস্থান। ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড নেপালের সঙ্গে মাত্র ১টা স্বর্ণ পদকের ব্যবধানে আমরা এগিয়ে।
ঐ খেলায় ২৩৪ বারের মধ্যে মাত্র ৪বার ভারতের বুকে আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য জাতীয় সংগীত বেজেছে। আমি ২টি সাফ গেমস রেকর্ড করি কিন্তু তারপরও ৭টা ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে হতাশ হয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে। আমরা যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি তার থেকেও অনেক বেশি গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলো।
আর তাই, কেবল শুধু আপনিই পারেন খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়াতে। দেশের অন্যান্য সব ক্ষেত্রের মত ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি অন্যান্য খেলারও উন্নতি ঘটাতে।”
খেলার মাধ্যমে অন্তত কিছু লাভ হোক বা না হোক কারো কোন ক্ষতি নিশ্চই হয় না। বরং বিশ্বের মানুষের কাছে একটি দেশের পরিচিতি বাড়ে।”
Discussion about this post